ঈশ্বরদী (পাবনা): ‘অপমান হওয়ার থেকে মৃত্যু অনেক ভালো, আমার মৃত্যু হলে মেয়ে কারিমার কি হবে? তাই মেয়েকে মেরে ফেললাম, পাশের ঘরের ড্রামে আমার মেয়ের লাশ আছে! এসব চিঠিতে লিখে বাবাও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। ওই চিঠির সূত্র ধরেই শিশুটির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।’
শনিবার পাবনার ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের পেছনের আইএসটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একটি ড্রামের মধ্যে ভাসমান অবস্থায় শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রাতে বাবা অধ্যক্ষ কাদেরুজ্জামানকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এখনও তার জ্ঞান ফেরেনি।
নিহত শিশু কারিমার বাবা ঈশ্বরদীর বেসরকারি আইএসটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ কাদেরুজ্জামান। তিনি ঈশ্বরদী পৌর শহরের শেরশাহ রোডে বসবাস করেন।
জানা যায়, ঈশ্বরদীতে ১৪ মাস বয়সী শিশুকন্যাকে পানির ড্রামে চুবিয়ে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা করেন অধ্যক্ষ কাদেরুজ্জামান। শনিবার দুপুরে অধ্যক্ষের কর্মস্থলের টেবিলে রাখা একটি চিঠির সূত্র ধরে ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের পেছনের আইএসটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একটি ড্রামের মধ্যে ভাসমান অবস্থায় ওই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
ঈশ্বরদী থানার ওসি আজিমউদ্দিন বলেন, প্রাথমিকভাবে চিঠির সূত্র ধরেই ধারণা করা হচ্ছে- তার প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন ছাত্রের রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত ঝামেলায় তিনি তার শিশুকন্যাকে হত্যা করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। তবে জ্ঞান ফেরার পর তার কাছ থেকে জানা যাবে প্রকৃত ঘটনা কী ছিল।
অধ্যক্ষ কাদেরুজ্জামানের টেবিলে পেপার ওয়েটে চাপা দিয়ে রাখা চিঠিতে লেখা ছিল- ‘রাসেল ও পল্লব আমাকে বাঁচতে দেবে না, আমি ওদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড তুলতে পারিনি। তাই পল্লবের কাছে অপমান হওয়ার থেকে মৃত্যু অনেক ভালো। আমার মৃত্যু হলে আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ অনেক খারাপ হবে। তাই মেয়েকে আমিই মেরে ফেললাম, পাশের ঘরের ড্রামে আমার মেয়ের লাশ আছে। এই চিঠির সূত্র ধরেই সেখান থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।’
ওসি জানান, শনিবার সকালে অধ্যক্ষ কাদেরুজ্জামান তার শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে প্রাতঃভ্রমণে বের হন। এ সময় তার স্ত্রী ঘুমিয়ে ছিলেন। সকাল ১০টার দিকে ঈশ্বরদী বাজারের পৌর সুপার মার্কেটের সামনে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে শিক্ষক কাদেরুজ্জামানকে প্রথমে ঈশ্বরদী ও পরে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখনও তার জ্ঞান ফেরেনি।
এদিকে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর পরই তার কর্মস্থল আইএসটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে তার টেবিলে পেপার ওয়েটে চাপা দেয়া ওই চিঠির সূত্র ধরে তার শিশুকন্যা কারিমার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এদিকে মর্মান্তিক এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। অনেকে এ ঘটনায় কাদেরুজ্জামানের মানসিক সুস্থতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তার স্ত্রীও বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।