ঈশ্বরদী (পাবনা) : আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘড়িয়া) আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন বাবা-মেয়ে-জামাইসহ আওয়ামী লীগের ১৪ নেতাকর্মী।
এরা হলেন বর্তমান ভূমিমন্ত্রী ও পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুর রহমান শরিফ এমপি, মেয়ে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মাহজেবিন শিরিন পিয়া এবং ভূমিমন্ত্রীর জামাই অর্থাৎ মেয়ে পিয়ার স্বামী ঈশ্বরদী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টু। এক সঙ্গে তাদের মনোনয়ন ফরম ক্রয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টু।
আসনটি থেকে মনোনয়ন লাভের আশায় মনোনয়ন ফরম কেনা অন্যরা হলেন পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য, সাবেক এমপি পাঞ্জাব আলী বিশ্বাস, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী নেতা অ্যাডভোকেট রবিউল আলম বুদু, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম লিটন, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসাহক আলী মালিথা, পৌর আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান স্বপন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আব্দুল আলিম, ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আকরাম আলী খান, জেলা আওয়ামী লীগে সহসভাপতি নুরুজ্জামান বিশ্বাস, জেলা আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক সৈয়দ আলী জিরু, সেনা বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা আওয়ামী লীগ সমর্থক নজরুল ইসলাম রবি এবং ডা. শাহেদ ইমরান।
এদিকে একই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করে বাবা বিরুদ্ধে মেয়ে আর শ্বশুরের বিরুদ্ধে জামাই মনোনয়ন প্রত্যাশা করে মনোনয়ন ফরম কেনার খবরে ঈশ্বরদী- আটঘড়িয়া আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন পদধারী নেতা জানান, বাবার পক্ষে কাজ করতেই মেয়ে পিয়া এবং জামাই মেয়র মিন্টু মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তবে বিষয়টিতে তারা নেগেটিভভাবে বিবেচনা করছেন। মনোনয়ন প্রদান বোর্ড যদি বলেন, যেখানে মেয়ে ও আপন জামাই ভূমিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। সেখানে কি অবস্থা হতে পারে; সেই ক্ষেত্রে ঈশ্বরদী-আটঘড়িয়াতে ভূমিমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।
আরেকটি সূত্র জানান, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরিফ পরপর তিনবার নির্বাচিত এমপি। আর চতুর্থবার বিনাভোটে এমপি হয়ে ভূমিমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে মনোনয়ন লাভের জন্য এভাবে কাউকে তার বিরুদ্ধে যেতে দেখা যায়নি। কিংবা তার পক্ষেও সহযোগী হিসেবে মনোনয়ন ফরম কেনার নজির নেই। এবার তার পরিবারের সদস্যদের বিতর্কিত কিছু কার্যক্রম, রাজনীতিকে পরিবারতন্ত্র করা আর নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করার কারণেই মনোনয়ন পেতে ভূমিমন্ত্রীর বেগ পেতে হবে। এই জন্য ইতোমধ্যে নিজের স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়তা ও সমর্থন রয়েছে বলে উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা এবং ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বারদের নিকট থেকে রেজুলেশন করে দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। তারপরও আসন্ন নির্বাচনে ঈশ্বরদী-আটঘড়িয়া থেকে দলের অনেক জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী নেতারা এবার মনোনয়ন প্রত্যাশায় দলীয় ফরম কিনেছেন।
দলীয় মনোনয়ন ফরম কেনার বিষয়ে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মেয়র আবুল কালাম আজাদ বলেন, ফরম কেনার গণতান্ত্রিক অধিকার সবার আছে। ফরম বিক্রয়ের জন্যই ছেড়ে দল। সেখানে আমিসহ অন্যরা ফরম কিনেছি। মনোনয়ন বোর্ড যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই মনোনয়ন দিবেন। তখন আমরা সবাই মিলে নৌকার পক্ষে মনোনয়ন প্রাপ্ত ব্যক্তির পক্ষে কাজ করবো।
ঈশ্বরদী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসাহক আলী মালিথা বলেন, আমি এবং আমার পরিবার আজীবন আওয়ামী লীগ রাজনীতি করে আসছি। আমি পদে আছি। মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্যতা আমার আছে। আর ঈশ্বরদী-আটঘড়িয়াতে নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেই আমি মনোনয়ন ফরম কিনেছি। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, আমি তার পক্ষে তখন কাজ করবো। ইতোপূর্বেও নৌকা পক্ষে কাজ করেছি। এবার যদি মনোনয়ন নাও পাই, যে পাবে তার পক্ষেই কাজ করবো।- কালের কণ্ঠ