চাটমোহর (পাবনা) : পল্লী বিদ্যুতের লাইন মেরামতের কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে ২ হাত হারিয়ে অল্প বয়সে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন পাবনার চাটমোহরের সাব্বির (২০)। যে বয়সে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সংসারের হাল ধরার কথা সেই বয়সে প্রাকৃতিক কাজ পর্যন্ত অন্যের সাহায্য ছাড়া করতে অক্ষম তিনি । অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে এখন ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন সাব্বির। দুর্ভাগা এই যুবকের বাড়ি চাটমোহর উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের দাঁথিয়া কয়রাপাড়া গ্রামে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিছানার এক কোণে শুয়ে অঝোরে কাঁদছেন সাব্বির। তার সব কিছু দেখভাল করছেন ভাবি চায়না খাতুন। সকালে ব্রাশ করে দেয়া, গোসল করানো থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক কাজ সারা পর্যন্ত সবই দেখতে হয় ভাবিকে। বাবা কামাল হোসেনও শারীরিকভাবে অসুস্থ। ছোট ছেলের এমন করুণ পরিণতিতে তিনি মানসিকভাবে ভে'ঙ্গে পড়েছেন।
সাব্বিরের এই দু'র্ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তার বাবা কামাল হোসেন বলেন, আর্থিক দুরবস্থার কারণে পড়ালেখা ছেড়ে কাজের সন্ধানে পাড়ি জমায় চট্টগ্রামে। সেখানে বিভিন্ন ঠিকাদারের আওতায় বিদ্যুতের লাইন মেরামতের কাজ শুরু করে। এর কিছুদিন পর ফিরে আসে বাড়িতে। পরে পাবনার মজনুর রহমান নামে এক সাব-ঠিকাদারের কাজে যোগ দেয় সাব্বির।
কামাল হোসেন বলেন, গত ২৬ জুলাই সাঁথিয়া উপজেলার গৌরীগ্রামে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর লাইন মেরামত শেষে লাইনে সমস্যা দেখা দেয়ায় সাব-ঠিকাদার মজনুর রহমান রবি নামে এক লাইনম্যানকে বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করার কথা বলে এবং সাব্বিরকে খুঁটিতে উঠতে বলে। কিন্তু রবি লাইন বন্ধ না করেই সাব্বিরকে জানায়,‘বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করা হয়েছে।’ খুঁটিতে ওঠার পরপরই বিদ্যুতায়িত হয়ে তারের সঙ্গে ঝুলে পড়ে সাব্বির। পরে অন্য শ্রমিকরা পালিয়ে গেলে সাব-ঠিকাদার মজনুর রহমানকে বেধ'ড়ক মা'রধ'র করে স্থানীয়রা। পরে তাকে (সাব-ঠিকাদার) এবং সাব্বিরকে গুরুতর আহ'তাবস্থায় পাবনা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে সাব্বিরের অবস্থার অবনতি হওয়ায় ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ণ ইউনিট ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিটিউটে ভর্তি করার হয়। দীর্ঘ একমাস চিকিৎসা শেষে সাব্বিরের দুই হাত কেটে ফেলেন চিকিৎসক।
কান্নারত সাব্বিরের বাবা বলেন, এখন পর্যন্ত ছেলের চিকিৎসা বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় পৌনে ২ লাখ টাকা। ঠিকাদারের আর্থিক সহযোগিতায় ও ধারদেনা করে চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছি।
সাব-ঠিকাদার মজনুর রহমান বলেন, ‘রবি নামের ওই লাইনম্যানের ভুলের কারণেই এই দূর্ঘ'টনা ঘটেছে। স্থানীয়রা আমাকেও মা'রধর করে জ'খম করেছিল সে সময়। এছাড়া সাব্বিরের বাবার হাতে এখন পর্যন্ত বেতনসহ চিকিৎসা বাবদ প্রায় ৭০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। তবে সাব্বিরকে একটা দোকান করে দেয়ায় ব্যাপারেও আশ্বাস দেন তিনি।