সবুজ আলম ফিরোজ: রিশা হত্যা নিয়ে এখন সবার মুখে মুখে আলোচনা, টকশোর টেবিলে ঝড়, পত্রিকার পাতায় লিড নিউজ, পথে পথে পথচারিদের মুখে থাকে প্রথম রিশা হত্যা। কিন্তু এমন কতদিন থাকবে এই আলোচনা। ঘাতককেও ধরতে তৎপর রয়েছে প্রশাসন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী জাহান তনুর মত কি ধামাচাপা পড়ে যাবে নাতো? নাকি আবার কোন ঘটনা জন্ম হলেই রিশা কে ভুলে যাবো আমরা?
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী জাহান তনুকে নির্মম নির্যাতনের মধ্যে হত্যাকান্ডের পর এবার ঘটলো রাজধানী কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশা হত্যা। তাকে হত্যা করছে নর পিসাচু এক জানোয়ার। যাদেরকে আমাদের নিরবতা সমাজ শুদ্ধভাবে বলে থাকে বখাটে।
একের পর এক শিক্ষার্থী হত্যাকন্ডের ঘটনা ঘটেই চলছে সন্ত্রাসীদের হাতে। দীর্ঘ হচ্ছে শিক্ষার্থী হত্যার তালিকা। জানিনা পরবর্তি কোন শিক্ষার্থী হত্যাকান্ডের নিন্দা প্রকাশ করার জন্য আমাদের অপেক্ষায় থাকতে হবে।
ছোট বেলা থেকে একটা প্রবাদ জেনে আসছি ‘আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ’ এই প্রবাদের সাথে আমরা সবাই বেশ পরিচিত। একটি শিশু জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বড় হয়। প্রাইমারি, হাইস্কুল শেষ করে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখে। সেই সাথে স্বপ্ন দেখে দেশকে অন্যরুপে এগিয়ে নিয়ে বিশ্বের মধ্যে ১ নম্বর দেশ হিসেবে উপস্থাপন করতে। উন্নয়নশীল দেশ গড়তে।
কিন্তু হিংসাত্বক প্রাণী মত সমাজে কিছু দুস্কৃতকারী বখাটে রয়েছে। যারা দেশপ্রেমিক এই সকল শিক্ষার্থীদের পিছু লেগে রয়েছে। দিচ্ছে তাদের দিকে কুদৃষ্টিপণা । পরিশেষে দেশপ্রেমিক এই সকল শিক্ষার্থীদেরকে হত্যা করতেও দিদ্ধাবোধও করেছে না সন্ত্রাসিরা। হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে ভেঙ্গে যায় সেই সোনার স্বপ্ন। পিতা-মাতা হারায় তাদের ভবিষ্যৎ। জাতি হারায় একজন দেশপ্রেমিক।
এই সকল শিক্ষার্থী হত্যাকান্ডের ঘটনা কবে হবে সমাপ্তি? এমন প্রশ্ন আজ আমার মত সর্ব সাধারণের। তবে আমার মতে, শিক্ষার্থী হত্যাকান্ডের তালিকা দীর্ঘ হওয়ার পিছনে যে কারণটি রয়েছে তা হলো, হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়া। যথাযথ শাস্তি প্রদান না করা। আমরা এখনো অবহিত আছি যে তনু হত্যার বিচার আজও শুরু হয়নি। গ্রেফতার হয়নি খুনিরা।
এখন আবার ঘটলো রাজধাণী কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশাকে হত্যা করছে ঘাতক কাটিং মাষ্টার ওবায়েদ। হত্যা করার পর থেকে ওই স্কুলের শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করছে। দাবী জানাচ্ছে তাদের বন্ধু রিশার হত্যাকারী ঘাতক ওবায়েদকে গ্রেফতার করে ফাঁসি দিতে হবে। তাদের হাতে রয়েছে ছোট ছোট প্লাকার্ড। দিচ্ছে উচ্চ স্বরে শ্লোগান ‘এক দফা এক দাবি, রিশা হত্যার বিচার চাই, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ইত্যাদি।
রিশা হত্যা নিয়ে এতো আন্দোলন করছে রিশার বন্ধুরা। তাদের আন্দোলন কি ফলপ্রস হবে। নাকি আবার কোন এক ঘটনা জন্ম নিয়ে রিশা হত্যা ঘটনা চাপা পড়ে যাবে? কারণ পূর্বের ঘটনা গুলোতে ঠিক তাই হয়েছে। তনু হত্যা নিয়ে এখন আর আন্দোলন হয়না। পত্রিকায় লেখা হচ্ছে না। টকশোতে আলোচনায়ও নেই। কারণ সেটি এখন ধামাচাপার একেবারেই নিচে পড়ে আছে।
এই ধরনের হত্যাকান্ডের খুনিদের আড়াল করা মানে তাদের উচ্ছাসিত করা নয় কি? আমার মতে, হত্যাকারী সেই যেই হোক তাকে বিচারের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি প্রদান করা হলে এই ধরনের হত্যাকান্ড নিউটলে চলে আসবে।
সেই যাই হোক রিশা হত্যাকারী ওবায়েদ কোন ভাবেই যেন পার পেয়ে না যায়। সব মিলিয়ে চাচ্ছি সকল ঘটনা সুষ্ট তদন্তের মাধ্যমে খুনিদের গ্রেফতার করে যথাযথ শাস্তি প্রদান করা হোক। যাতে করে আর কোন হত্যাকান্ডের ঘটনা জন্ম নিতে না পারে। শিক্ষার্থী হত্যাকান্ড যেন এখানেই সমাপ্ত হয়।
লেখক: সবুজ আলম ফিরোজ
সাংবাদিক
৩১ আগস্ট,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ