আল-আমিন মাহমুদ রামিম: পৃথিবীর সবচেয়ে গোপন ও রহস্যময় স্থানগুলোর মধ্যে ‘এরিয়া ৫১’ অন্যতম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যের এ স্থানটিকে ঘিরে রয়েছে অনেক আলোচনা, সমালোচনা এবং বিভিন্ন গল্পের উৎস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (United states of America) একটি অত্যন্ত গোপনীয় ঘাঁটি হচ্ছে ‘এরিয়া ৫১’। এটি এতটাই গোপনীয় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার দীর্ঘদিন এর অস্তিত্বই স্বীকার করেনি। এই ‘এরিয়া ৫১’ বিশ্বব্যাপী ‘ষড়যন্ত্রের এলাকা’ বা Area of Conspiracy নামে পরিচিত ছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যের লাস ভেগাস শহর থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে রেকেল গ্রামের কাছে মোহাভে মরুভূমির বিশাল এক অংশ শুকিয়ে যাওয়া গ্রুম হ্রদের দক্ষিণ তীওে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত এই স্থাননিয়ে রহস্যের শেষ নেই। কল্পকাহিনী, চলচ্চিত্র, গুজব কিছুই বাদ নেই। ‘এরিয়া ৫১’ একটি বিরাট গোপনীয় সামরিক বাহিনীর (একটি বিশাল নেলিসের বিমানবাহিনী) অপারেশন ঘাঁটি, যার আয়তন ২৬,০০০ বর্গকিলোমিটার।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অবমুক্ত করা দলিল থেকে জানা যায়, এটি ভিত্তির প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো, পরীক্ষামূলক উড়োজাহাজ তৈরি, অস্ত্রশস্ত্রের সিস্টেমের পরীক্ষাকরণ এবং উন্নতি সাধন সমর্থন করা। ভিত্তির সুবিধার্থে ‘স্বপ্নের ভূমি’ ‘রেকেল ভূমি’ ‘বাড়ী ভিত্তি’ ‘পানির শহরের অংশ’ এবং সর্বাপেক্ষা সাম্প্রতিক কালে ‘সুখাবহ বিমান বন্দর’ হিসাবেও জানা হয়। বিমান চালকরা ভিত্তির চারদিকের আকাশসীমাকে ‘বাক্স’ বলে ডাকে।
দুর্ভেদ্য বেষ্টনীতে ঘেরা পুরো এলাকার চারপাশে এ ঘাঁটির প্রবেশপথে সতর্কীকরণ বোর্ড গুলোতে সরাসরি লেখা রয়েছে ÔUse of Deadly Force AuthorizedÕ এই সীমানায় প্রবেশের পর অনুমতি ছাড়াই গুলি করার নির্দেশ ছিলো। যদিও এখন তা কিঞ্চিত শিথিল হয়েছে।
তবে এ এলাকায় চতুর্দিকে সিসি ক্যামেরা, Motion Detector (নড়াচড়া পর্যবেক্ষণ), Leser Detector (রশ্মি পর্যবেক্ষণ), Sound Detector (শব্দ পর্যবেক্ষণ), আকাশপথ দেখার জন্য রয়েছে রাডার এমনকি আধুনিক Smell Detector (ঘ্রাণ পর্যবেক্ষণ) সহ অনেক প্রযুক্তির প্রয়োগ করা হয়েছে এই এলাকার নিরাপত্তায়।
১৯৫০ সালের দিকে বাণিজ্যিক বিমানের চেয়ে বেশি উচ্চতায় উড়তে সক্ষম মার্কিন ইউ ২ গোয়েন্দা বিমানের পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন হয়েছিল ঐ গোপন পরীক্ষার স্থানেই। ইউ ২ প্লেন নামের গোপন গোয়েন্দা বিমানটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্নায়ু যুদ্ধকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর নজর দারির জন্য তৈরি করেছিল।
১৯৯৬ সালে হলিউডের বিখ্যাত ছবি ‘ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে’ তে দেখানো হয়েছে যে, এই ভিনগ্রহের প্রাণীরা ‘এরিয়া ৫১’ এর উপর আক্রমণ করেছে এবং এই ছবির শেষ দিকে দেখানো হয়েছে এই প্রাণীদের ব্যবহার করা বিশাল আকারের UFO কে উন্নত প্রযুক্তির মিসাইলের সাহায্যে ধ্বংস করে দেয়া হয়। কিন্তু F117 বিমানটি যখন মানুষের সামনে আসে, তখন এর কার্যকারিতা দেখে অবাক হয়েছিল অনেকেই। এই বিমানটি প্রায় ২২ বছর আগে তৈরি করা হয়েছিল ‘এরিয়া ৫১’ এর ভিতর।
এই এলাকার আশেপাশের লোকজন অনেকটা গুজবের মতো UFO বা Unidentified Flying Object এর গল্প সাজিয়েছে। তা হচ্ছে এই ‘এরিয়া ৫১’ এর আকাশে ফ্লাইং সসারের মতো কিছু উড়তে দেখেছেন তারা। আবার অনেকেই এর ভিতর তৈরি করা অতিমাত্রার ক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক দ্রুতগতির বিমান উড়তে দেখেছেন যার গতি ও আকৃতি সাধারণ বিমান কিংবা যুদ্ধবিমান কোনটার সাথেই যেন মিল নেই।
তবে এসব বিতর্কের আগুনে ঘি ঢেলেছেন ‘এরিয়া ৫১’ এর কর্মরত পদার্থ বিজ্ঞানী বব লেজার। টিভি সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, সেখানে এমন কিছু মৌলিক পদার্থ নিয়ে গবেষণা করা হয় যা আবিষ্কারের ঘোষণা এখনো দেওয়া হয়নি। তার মতে, সুপার নোভাবাইনারি স্টার সিস্টেম থেকেই একটি মৌল সংগ্রহ করা হয়েছে।
যার ২.২ পাউন্ডদিয়ে ৪৭টি ১০ মেগাটন হাইড্রোজেন বোমা বানানোর জন্য যথেষ্ট। সেখানে রেটিকুলাম-৪ নামক জ্যোতিষ্ক থেকে আসা এলিয়েন এক ফ্লাইং সসার রয়েছে। এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণীটির উচ্চতা সাড়ে তিনফুট। যার রোমহীন শরীর এবং বড় বড় কালো চোখ রয়েছে। এলিয়েনটির দেহ ব্যবচ্ছেদ করার পর এর ভেতরে ফুসফুস ও হৃৎপিন্ডের বদলে পাওয়া গেছে বিশাল এক পতঙ্গ।
এলিয়েনরা প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় মানুষের সাথে হাইব্রিডাইজ বা সংকরায়ন করার চেষ্টা হচ্ছে। প্রচলিত কথার মধ্যে আরো রয়েছে, এখানে মাটির অনেক নিচে গবেষণাগার আছে। এখানে যারা কাজ করে তাদের গোপনীয়তার শপথ নিতে হয়। সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তিসহ অনেক প্রযুক্তিই আসলে এলিয়েনদের প্রযুক্তি, নইলে এত দ্রুত প্রযুক্তির উন্নতি হওয়ার কথা নয়। তবে এসব বিতর্কই শেষ নয়। এসব তথ্যকে আজগুবি তথ্য বলে মনে করা হয়। কিন্তু গোপনীয়তা এসব তথ্যকে কিছুটা হলেও জনপ্রিয় করতে পেরেছে।
লেখক: আল-আমিন মাহমুদ রামিম
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগ
বিজয় একাত্তর হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩০ অক্টোবর,২০১৬/ এমটি নিউজ২৪ ডটকম/সবুজ/এসএ