সবুজ আলম ফিরোজ: মিয়ানমার মজলুম রোহিঙ্গা মুসলমানের কান্নায় পৃথিবীর যেন আকাশ ভারি হয়ে উঠছে। মুসলিম নারী-পুরুষ ও শিশুরা বাঁচাও বাঁচাও বলে আর্তচিৎকার করছে। মায়ানমারের বর্বর বৌদ্ধরা তাদের ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাচ্ছে। হত্যা করছে অসংখ্য নিষ্পাপ শিশু, যুবক, বৃদ্ধাদের। শারীরিক নির্যাতন করে কলঙ্কিত করছে অসংখ্য মা-বোনদের। বিধবা করছে হাজারো নারীদের। সন্তানহারা করছে অসংখ্য মাকে। হত্যা, নির্যাতনের ভিডিও গুলো সোশাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়ে দাড়ায়।
মজলুম রোহিঙ্গাদের বিভৎস চেহারাগুলো দেখে কার চোখ না অশ্রুসিক্ত হবে? আপনার সামনে আপনার ভাই-বোন, মা-বাপ, ছেলেমেয়েদের যদি আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে, শরীরের ওপর কামান তুলে মাথার মগজ বের করে ফেলে, চোখের সামনে তাজাদেহ দ্বিখন্ডিত করে ফেলে তখন আপনার কেমন লাগবে? আহ! বার্মার মুসলমানদের সাথে তাই করা হচ্ছে! জাতিসংঘ রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে বিশ্বের সবচেয়ে বর্বর নির্যাতনের শিকার জনগোষ্ঠী হিসেবে অভিহিত করেছে।
মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের চিত্র যেকোন ব্যক্তিকে দুর্বল করবে, কাদাঁবে। যদি তার মধ্যে মানবতা থাকে। সব কিছু আগে যে শব্দটি বলতে হয় তা হলো আমরা সবাই মানুষ। এরপর জাতিগত পার্থক্য। ধর্মীয় ভাবে পৃথক থাকলেও শারীরিক গঠন ভাবে আমরা সবাই এক। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং মুসলমানদের মধ্যে একই ধরনের শারীরিক গঠন করা।
তাদের মধ্যে যে দুইটি হাত, দুইটি পা রয়েছে, একজন মুসলমান ব্যক্তির শরীরেও ঠিক তাই রয়েছে। এছাড়া তাদের শরীরে অন্যান্য অঙ্গ পতঙ্গ সহ যে রক্ত প্রবাহ রয়েছে একজন মুসলিম ব্যক্তির মধ্যে ঠিক তাই রয়েছে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ব্যক্তিকে আঘাত করলে তারা যে ব্যথা অনুভব করবে একজন মুসলিম ব্যক্তিও সেই ধরনের আঘাত অনুভব করবে। কারণ আমাদেরকে একই ভাবে সৃষ্টি করেছে আমাদের সৃষ্টিকর্তা। তাহলে কিভাবে তারা তাদের মতই একজন মানুষকে এই নির্মম ভাবে নির্যাতন করে হত্যা করছে? প্রতিটি বিবেকবান মানুষকে এমন প্রশ্নের মুখে বার বার পড়তে হয়।
এসব নির্যাতনেও চুপ রয়েছে মিয়ানমার সরকার অং সান সু চি। আবার তিনি নাকি শান্তি পুরুষ্কার নোবেলও পেয়েছেন। যখন একজন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী শান্তি রক্ষায় ব্যর্থ হন, তখন শান্তির স্বার্থেই নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটির উচিত এই পুরস্কার হয় জব্দ করা, নয়তো ফিরিয়ে নেওয়া।
মজলুম রোহিঙ্গা মুসলমানদের আহাজারিতে পৃথিবীর আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হয়ে উঠছে। কোথায় আজ বিশ্ব মুসলমানদের সহযোগিতা ও ভ্রাতৃত্বের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত সংস্থা ওআইসি। নীরব কেন আজ মানবাধিকার সংস্থা? নিশ্চুপ কেন জাতিসংঘ?। পৃথিবীতে দেড়শ কোটি মুসলমান থাকার পরও কেন দেশে-দেশে মুসলমানরা আজ নির্যাতিত?
রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম নির্যাতন এটা পরিষ্কার করে দিয়েছে যে গোটা বিশ্বের অমুসলিম শক্তি আজ মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। আমরা এখনও নিশ্চুপ! রোহিঙ্গা মুসলমানদের কিই বা দোষ ছিল, যার কারণে তাদের আজ নির্মম-জুলুম নির্যাতন ভোগ করতে হচ্ছে? কারণ একটাই ওরা যে মুসলমান।
লেখক: সবুজ আলম ফিরোজ
সাংবাদিক
০৩ ডিসেম্বর,২০১৬/এমটি নিউজ২৪ ডটকম/ফিরোজ/এফএ