গল্পঃ ভালবাসার সন্ধ্যা তারা
লেখক:এচ এইচ সাগর
সরকরি কলেজ ছাগলনাইয়া,ফেনি
_______________
মাঃ রিফাত কোথায় যাচ্ছিস?
রিফাতঃ কোথাও না মা, একটু বাইরে যাচ্ছি।
মাঃ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরিস।
রিফাতঃ ঠিক আছে মা।
রিফাত অনেক ভদ্র স্বভাবের ছেলে।
এলাকার কারো সাথে তেমন মেশে না।
একা একা চলাফেরা করে। অনেক ভালো স্টুডেন্ট, প্রতিদিন নিয়মিত ক্লাস করে। সময় মত লেখা পড়া করে। বাজে আড্ডা দেয় না। রিফাতের বাড়িতে তার একমাত্র মা ছাড়া আর কেউ নেই। তার বাবা একটা দুর্ঘটনাক্রমে মারা যায়। রিফাতকে কখনই বাবার অভাব বুঝতে দেয়নি ওর মা। রিফাতের যখন যা প্রয়োজন সেটা দিয়েছে।
রিফাত ওর মাকে সব চেয়ে বেশি ভালবাসে। রিফাত যখন ছোট ছিলো ওর মা প্রতিদিন সন্ধ্যা রিফাতকে নিয়ে সন্ধ্যা তারা দেখতো, রিফাতের মা রিফাতকে বলতো তোর বাবা ঐ যে তারা দেখছিস উনি ঐ তারার মাঝে লুকিয়ে আছেন। রিফাত এখন অনেক বড় হয়েছে, সব কিছু বুঝা শিখেছে। এখনো রিফাতের মা প্রতিদিন তারাটা দেখেন। রিফাত কলেজ থেকে বাড়ি আসছে। হঠাৎ করে পুলিশের গাড়ি এসে থামে ওর সামনে।
রিফাত কে কোনো কিছু বুঝতে না দিয়েই থানায় নিয়ে যায়। থানা থেকে রিফাতের বাসায় কল দিয়ে তার মাকে কে জানায়। তার মা থানায় এসে কথা বলেন পুলিশের সাথে, কিন্তু পুলিশ তার কোনো কথাই শুনছেন না। রিফাত নাকি অসামাজিক কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিলো।
তার মা অখানে কোনো প্রমাণ দিতে পারে নি, রিফাতকে কারাগারে প্রেরণ
করে। রিফাতের মা প্রচন্ড ভাবে ভেঙ্গে পড়েন। একমাত্র ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেলো। কি করবে কিছুই বুঝতে
পারছে না। ওর মা ওর কলেজে গেলেন এবং প্রিন্সিপাল কে বিস্তারিত খুলে বলেন এবং তিনি তার সাথে থানায় যান। এবং সব প্রমাণ দেয়ার পর রিফাতকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসে।
বাড়ি ফেরার পথে রাস্তা পার হতে গেলে একটা বাস এসে রিফাতকে ধাক্কা মেরে চলে যায়, রিফাত ছিটকে পরে অনেক দূরে। রিফাতের মা ও অজ্ঞান হয়ে পরেন। তাদের দুজনকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আধা ঘণ্টা পর রিফাতের মায়ের জ্ঞান ফিরলেও জ্ঞান ফেরেনি রিফাতের। ডাক্টার জরুরী ভাবে অপারেশন করতে
বলেন। ডাক্তার জানায় রিফাতের ডান পাজরের হাঁড় ভেঙ্গে গেছে এবং দুইটা কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে।
জরুরী কিডনি না পেলে হয়তো রিফাত আর ফিরবে না। অনেক খোজা খুঁজির পরেও কোনো কিডনি না পেলে রিফাতের মা তার দুইটা কিডনি দিয়ে
দেন। কিডনি দেয়ার আগে একটা চিঠি লিখে ডাক্টার কে দিয়ে যান। ডাক্টার কে বলেন রিফাত একদম ভালো হওয়ার পর যেন চিঠিটা তাকে দেয়া হয়। তার শরীরে কিডনি স্থাপন সম্পন্ন হয়। ২৪ ঘন্টা পর তার জ্ঞান ফিরে আসে। আরো দুই সপ্তাহ পর তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়েন। এরি মধ্যে অনেক বার তার মাকে দেখতে চাইছে কিন্তু দেখতে দেওয়া হয়নি। সে তার মাকে দেখার জন্য পাগল হয়ে আছেন।
সে হাসপাতাল থেকে তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে যায় মাকে দেখার জন্য। কিন্তু বাড়িতে তার মাকে পায় না।
অনেক খোজ করেছে কিন্তু পায় নি। ৪
দিন পর ডাক্টার আসেন রিফাতের বাড়িতে। তার মায়ের লেখা চিঠিটা
দিয়ে চলে যায়। কিন্তু রিফাত বুঝতে পারেন না কিসের চিঠি। খুব দ্রুত চিঠি টা খুলেই প্রথমেই দেখে
লেখা আছে রিফাত বাবা কেমন আছিস? রিফাত চিঠি পেয়েই খুব খুশি কিন্তু এই খুশি টা ক্ষণস্থায়ী। চিঠিতে আরো লেখাছিলো, "আমি জানি আমাকে তুমি এই পৃথিবীর মধ্যে সব চেয়ে বেশি ভালবাসো, বাবা আমিও তোমাকে তোমার চেয়েও বেশি ভালবাসি রিফাত।
আমাকে ভুল বুঝিস না বাবা, আমি তোর কাছেই থাকব সব সময়, তুই আমাকে খুঁজে পাবি সন্ধ্যা আকাশে, আমার জন্য কষ্ট পাসনে রিফাত, আমি পারতাম তোমায় একটা কিডনি দিতে, কিন্তু আমি তা করি নি, আমি চাই আমার রিফাত সয়ংসম্পুর্ন ভাবে বেঁচে থাকুক, কোনো দূর্বলাতা যেন তোমায় স্পর্শ করতে না পারে।
আমার জন্য মন খারাপ করবি না বাবা আমি সব সময় তোর কাছেই থাকব, ভালো থাকিস বাবা, ঠিক মত পড়াশোনা করবি, গোসল,খাবার, নামায একটাও বাদ দিস না বাবা, আমি যে শিক্ষা দিয়েছি ধরে রাখবি তো বাবা?
আমি জানি তুই পারবি, রিফাত আমি চলে গেলাম আমার হাতে বেশি সময় নেই বাবা, ভালো থাকিস রিফাত বাবা আমার, জানিস খুব মা ডাক শুনতে ইচ্ছা করছে বাবা, খুব মা ডাক শুনতে ইচ্ছা করছে, ভালো থাকিস বাবা আল্লাহ্ হাফিয",
চিঠিটা পরে রিফাত চিৎকার দিয়ে মাকে ডাকে, কিন্তু মা তো আর শুনবে না,
রিফাত খুব ভেঙ্গে পড়ে। কিন্তু নিজেকে শক্ত করতে হবে। রিফাত তার মায়ের কবরের পাশে গিয়ে খুব কান্না করত, আর প্রতিদিন তার মা আর বাবাকে সন্ধ্যা আকাশে খুঁজে ফিরত.....
###গল্পটি এখানে শেষ কিন্তুু অবশেষে কিছু কথা না বললে হয় না,
আমার কথা:: এই পৃথিবীতে বেঁচে আছে আমার-আপনার মত হাজারো মানুষের মমতাময়ী 'মা'। হাজারো রকমের মানুষগুলোও আবার এসেছিলো কোনো না কোনো মায়ের কারণে। তারা নাকি সবসময় তাদের সন্তানদের ভালো চাই। ইনিয়ে-বিনিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে এই মায়েরা দোয়া করে। কতশত রাত জাগে তাদের সন্তানদের শিহরে বসে।
.
কি সাংঘাতিক রকমের ব্যাপারস্যাপার!
!
পুরো পৃথিবীটা মায়েদের ছায়াতলে আবদ্ধ। 'মা' কে ভেবে দু-দন্ড সময় খরচ করেনি, করছে না এরকম মানুষ নেই বললে বিন্দুবৎ ভুলও হবেনা। সেদিন গভীর রাতে এক মা তার ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছে, জানা যায় সেটা দূঃস্বপ্ন ছিলো। এমনও না ছেলেটা মায়ের পাশে শুয়ে ছিলো, দাড়িয়ে ছিলো, ঘোরাঘুরি করছিলো। ছেলেটা মায়ের থেকে অনেক
দূরে ছিলো, বহুদূর শব্দটা এখানে ব্যবহার
করা যায়।
.
সে রাতে 'মা' নাকি ঘুমায় নি। অনেক চেষ্টা করেও তার ঘুম আসেনি। মাঝরাতে তার ছেলেকে ফোন দিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছিলো 'মা'। ছেলেকে কাছে পেতে ইচ্ছে করছিলো, কথা বলে সেটার রেশ কাটাতে চেয়েছিলো। সম্ভবত
ভালবাসার ছিটেফোঁটাও ছড়াতে পারেনি।
কি অদ্ভুত কথাবার্তা!
.
শোনা যায়, সেই রাতের ভোরবেলাতে মা'কে ভেবে ছেলেটাও নাকি স্বপ্ন
দেখেছিলো। এটাকেও দূঃস্বপ্ন বলা যায়। ছেলেটা ক্লান্তিজনিত রোগে ভুগছে, মাকে না দেখার আগে তার রোগ
সেরে উঠবেনা।
পৃথিবীটাই বেচে আছে সমস্ত মায়েদের ছায়াতলে, এটা গল্পে-ছন্দে শুনেছি আগে, বহুবার বোঝার চেষ্টা করেছি তবে
পারিনি। আজ যেনো সব বুঝতে পারছি। আপনাআপনিই বোঝা হয়ে যাচ্ছে মা'কে
ভেবে। ভালো থাকুক, সুখে থাকুক পৃথিবীর প্রতিটি মা। সেই প্রত্যাশায়…
বি:দ্রি :জানিনা কেমন লেখেছি, কোনো ভুল হলে ক্ষমা করবেন।
১৪ ডিসেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪ডটকম/তানভীর