শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৯:২৭:৩৬

=== স্বপ্নহীন ===

=== স্বপ্নহীন ===

পাঠকই লেখক ডেস্ক: ছেলেটির নিথর দেহ হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে। কেও জানেও না লাশটা কেও নিতে আসবে কিনা। কেনইবা এইভাবে শুয়ে আছে।

৫ বছর আগে ..................... ছেলেটি নীল । H.S.C. পাশ করে শবে মাএ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। ছেলেটা কোনদিন প্রেম করে নি, আর কখনও করতেও চাই নি। আর করবেইবা কি করে বাবা সামান্য কর্ম
করে তার পড়াশুনা চালাচ্ছে। তার বাবার কাছ থেকে সে কোন হাতখরচ সহজে নেয় না। বন্ধুর সাহায্য কয়েকটা প্রাইভেট পায়।

কিন্তু দূর্ভ্যাগ্য ক্রমে একটা ইন্টার ১ম বর্ষ এর একটা মেয়ে। মেঘার বাবা
তার মেয়েকে পড়ানোর জন্য মাসে ৩০০০ টাকা দিবে। তাই আর কিছু না ভেবে পড়াতে রাজি হয়। প্রথম দিন পড়াতে এসে মেয়েটাকে দেখে ছেলেটা অবাক হয়। কি করে কেও এতটা সুন্দর হতে পারে। তো প্রথম দিন যেহেতু তাই তাদের মধ্য পরিচয় পর্ব শেষ করে নীল সেদিনের মতো চলে যায়। পরেরদিন ছেলেটা আবার পড়াতে আসে। এভাবে সে প্রতিদিনই মেঘাকে পড়াতে আসত। বলা হয়নি মেয়েটার নাম মেঘা।

এভাবে ভালোই চলছিল কিন্তু মাস খানেক পর মেঘার কিছু কারনের জন্য ইত্বস্ত বোধ হয়। কয়েকদিন ধরে মেয়েটা কেমন জানি অন্যরকম ব্যাবহার করতে থাকে আপনি থেকে তুমি বলতে থাকে। নীলের সন্দেহ হয় মেঘার ওপর। অবেশেষে তার সন্দেহ সঠিক হয়। মেঘা বলে দেয় সে নীলকে
ভালোবাসে। এতে নীল কিছুটা অবাগ হলেও পাত্তা দেই নি। কিছু না বলে সে
সেদিনের মতো চলে যায়। তারপর সে রুমে শুয়ে শুয়ে মেয়েটার কথা ভাবছিল।

কারন তার মতো দরিদ্র ছেলেকে কি কেও ভালোবাসতে পারে না। কোন কিছু আর না ভেবে পরের দিন আবারও পড়াতে যায়। কিন্তু আজ সে অবাক হয়ে যায় মেয়েটাকে দেখে। আজকে মেঘাকে অপরূপ লাগছে নীল শাড়ীতে। কপালে নীল টিপ। সেদিন মেঘা সরাসরি বলে,, I Love U,, তারপর নীল কিছু না বলে চলে যায়। রুমে এসে ঠিক করে আর মেঘাকে সে পড়াতে যাবে না। কয়েকদিন যাবত সে মেয়েটাকে পড়াতে আসছে না। মেঘা খুব ব্যাকুল হয়ে ওঠে নীলকে দেখার জন্য।

সে নীলকে একবার দেখার করার জন্য মোবাইল করে। প্রথমে নীল মানা করে
কিন্তু পরে রাজি হয়। তারা একটি পার্কে দেখা করতে চায়। বিকেলে ঠিক
সময়মতো নীল আসে কিন্তু নীলের আগে মেঘাই এখানে উপস্থিত হয়। নীলকে
দেখে মেঘা কান্না করে দেয় আর জড়িয়ে ধরে। মেঘা : কেন আমাকে এত
কষ্ট দিচ্ছ। জানো, তোমার জন্য আমি সারারাত কেদেঁছি।

নীল :......... মেঘা : তুমি কিছু বলছ না কেন? নীল : কি বলব। মেঘা : কিছুই বলার নাই তোমার? নীল : দেখ, আমি তেমায় ভালোবাসতে
পারব না। আমার পরিবারের অবস্থা ভালো না। তাছাড়া আমাদের সম্পর্ক
তোমার পরিবার মেনে নিবে না। মেঘা : কিন্তু আমি তেমাকে ভালোবাসি।
নীল মেঘাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো কখন আমাই ছেড়ে যাবে না তো।
মেঘা ছেড়ে যাবে না বলে তার বুকে মাথা গুজে নেয়। এরপর শুরু হয় তাদের পথ চলা।

৪ বছর পর অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে উঠার পর মেঘার বাবার বন্ধুর ছেলের সাথে
মেঘার বিয়ে ঠিক করা হয়। মেঘা : আজ বিকেলে দেখা করতে পারবা। নীল : হ্যাঁ পারব। কিন্তু কেন ? মেঘা : দেখা কর তারপর বলছি ঠিক ৪ টায় পার্কে আসো। নীল : ওকে। ফোন কেটে নীল ভাবছে, মেয়েটা তার কত কেয়ার করে। তার সবসময় যন্ত নেয়। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে। বিকেল ৪ টায় ঘুম ভাঙ্গে তার। মাথায় হাত রেখে বলে আজ কপালে রক্ষা নায়। এমনিতে ৪ টা বাজে যেতে যেতে ৪.৩০ টা। আধা ঘন্টা দেরি হয়ে গেছে।

তারপর পার্কে এসে পৌছাঁয়। নীল : সরি দেরী হয়ে গেছে। মেঘাল : না ঠিক আছে। ( হাসি মুখে ) নীল : তোমার সাথের ব্যাগটা কিসের। (কিছুটা অবাক হয়ে ) মেঘা : আজ আমাকে এখুনি বিয়ে করবে। বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। নীল : কিন্তু আমার তো সবে মাএ পড়াশুনা শেষ হলো। আগে একটা চাকরি পায় তারপর তোমার বাড়িতে প্রস্তাব দিব। মেঘা : না তা হবে না। গত সপ্তাহে আমার বিয়ে। আজকে আমায় বিয়ে না করলে আমায় আর কখন পাবে না।

নীল কিছু না ভেবে বিয়ে করতে রাজি হল। তারপর কিছু বন্ধুর সাহায্য নিয়ে
কাজি অফিসে আসে। কিছুকক্ষন পর তাদের বিয়ে হল। দেনমহর ঠিক করার সময় মেঘা ঠাট্টা করে বলে ৫ লক্ষ টাকা দেওয়া লাগবে। নীল কিছুটা অবাক হয় তবুও হাসি মুখে রাজি হয়। বন্ধুরা সবাই একে একে শুভেচ্ছা দিয়ে চলে গেল। নীল একটা অটো ভাড়া করে প্রথমে বাস স্ট্যান্ড ও বাসে করে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হল। নীল অনেক কিছু ভাবছে। সে মেঘার দিকে তাকিয়ে দেখে মেঘা তার ডান হাত ধরে আছে। অনেকটা সময় পর নীল বাড়ি আসে। বাড়ির সবাই মেঘাকে দেখে কিছুটা অবাক হয়।

কিন্তু পরে সব জানার পরে হাসি মুখে মেনে নেয়। তারা মেঘাকে নিজের মেয়ের মতই দেখে রাখে। কিন্তু মেঘার পরিবার তাদের এই সম্পর্ক মেনে নেয় নি। কয়েকদিন পর নীল মোটামুটি ভালো চাকরি পায়। তাই সে মেঘাকে বাড়িতে বাবা মার কাছে রেখে ঢাকায় আসে।

কয়েক মাস পর............
মেঘা: তোমার বাবা মার সাথে আমি এত কষ্ট করে থাকতে পারব না। কারন, আমি এত কষ্ট করে বড় হয়নি। বাবার কাছে যখন যা চেয়েছি তখন তাই পেয়েছি। নীল : কিন্তু তুমিতো সবকিছু জেনেই আমায় বিয়ে করেছো। তাহলে এখন কেন এভাবে বলছো। (কিছুটা অবাক হয়ে) মেঘা : কারন, এভাবে আমি আর থাকতে পারব না। আমার সবচেয়ে বড় ভুল তোমায়
ভালোবেসে বিয়ে করে। আগে জানলে তোমায় ভালোবাসতাম না। ও ভালো
কথা আমায় তুমি ডিভোর্স দাও। নীল কথা গুলো শুনে নিজের কানকে বিশ্বাস
করতে পারছে না। ওদিকে মেঘা তার বাবার কাছে চলে যায়।

তাদের সব বলে। তারা বলে অতি শীঘ্রই তাদের ডিভোর্সের ব্যাবস্থা করবে। মেঘার বাবার বন্ধু অনেক বড় উকিল। তারা সব বলাই সে ডিভোর্সের কাগজ তৈরি করে। নীলকে জানানো হয়। নীলকে জানানো হয়। নীল : আমি একটি বার মেঘার কাছে জানতে চাই কি দোষ আমার। কেন মেঘা আমায় ছেড়ে চলে যাবে। উকিল : দেখ। মেঘা মামুনি নিজে থেকেই তোমায় ডিভোর্স দিতে চায়। এখানে আমার কিছু করার নাই। আর মেঘা তোমার সাথে কথা বলতে চায় না।

নীল : কিন্তু আমিতো তা চাই না। উকিল : কাল ১০ টায় চলে এসো। নইলে
মেঘার ওপর নির্যাতন ও অত্যাচারের কথা বলে তোমার নামে মামলা করা
হবে। নীল কিছু না বলে ১০ টায় চলে আসে ডিভোর্স পেপারে সই করতে। নীল দেখে মেঘা আগেই এই পেপারে সই করছে। তবুও তার চেখে একফোটা অশ্রু নেই। উকিল : তাড়াতাড়ি পেপারে সই কর। নীল : কাদো কাদো কন্ঠে, জ্বী করছি। উকিল : তোমাদের দেনমোহর ঠিক হয়েছিল ৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু সেই টাকা তুমি এখনো দাওনি। তাড়াতাড়ি এই মাসের মধ্য দিয়ে দিবে। নীল : জ্বী দিয়ে দিব। নীল সই করার পর মেঘাকে বলে, কি দোষ
ছিল আমার কেন আমাকে এভাবে কষ্ট দিলে। আমিতো তোমাকে নিজের থেকে
বেশি ভালোবেসে ছিলাম।

মেঘা কিছু না বলে সেখান থেকে চলে যায়। নীল ভাবে এত টাকা কিভাবে জোগাড় করবে এক মাসে। শরীরের সব অঙ্গ বিক্রি করলেও তো এতো টাকা পাওয়া সম্ভব না। শেষমেশ ঠিক করে তার কিডনি দুটো বিক্রি করবে। তাই ডাক্তারের কাছে গেল। ডাক্তার তার দুটো কিডনি নিতে চায় না। অনেক অনুরোধের পর ডাক্তারকে সব খুলে বলার কারনে কিডনি দুটি বিক্রি করে। কিন্তু নীলের হাতে বেশি সময় নেই। সে কেবল মোটে অর্ধেকের বেশী টাকা জোগাড় করছে । সে ডাক্তারকে আগেই মেঘার ঠিকানা দিয়ে বলে এই টাকাটা আর চিঠিটা যে মেঘাকে যেন দিয়ে দেয়। টাকাটা ও চিঠিটা পরবর্তীতে মেঘা দেওয়া হলে মেঘা চিঠিটা পড়ে কাদতে থাকে।

‘’ মেঘা তোমায় অনেক বেশি ভালোবেসে ছিলাম, নিজের চেয়ে বেশি বিশ্বাস করেছিলাম। জানতাম মৃত্যুও আমাদের আলাদা করতে পারবে না। কিন্তু আমার বিশ্বাস মিথ্যা ছিল। তুমিই নিজ হাতে আমাদের সম্পর্কটা শেষ করে দিলে। যখন তুমিই নেয় তখন জীবন থেকে কি হবে। ভালো থেকো তুমি।
আজও তোমায় অনেক বেশি ভালোবাসি। আর মরার পরেও ভালোবেসে যাবো ‘’চিঠিটা পড়ে মেঘা নীলের কাছে যেতে চাইলে ডাক্তার তার মৃত্যুর কথা জানায়। দুইটা কিডনি নেওয়ার ফলে সে অনেক আগেই মারা যায়

___ লেখক:;এচ এইচ সাগর
সরকরি কলেজ ছাগলনাইয়া, ফেনি
১৬ ডিসেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে