মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৭, ১০:৫৫:১৫

ফেসবুকে ধর্ম ব্যবসা : একবার কি ভাবতে পারি কি করছি আমরা?

ফেসবুকে ধর্ম ব্যবসা : একবার কি ভাবতে পারি কি করছি আমরা?

মির্জা নাহিদ: আমরা সবাই জানি ফেসবুক এখন একটি বড় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।
ফেসবুকের উন্মুক্ত এই বিশাল মাধ্যমকে বেছে নিয়েছে সুযোগসন্ধানী মহল। অপরাধকারীরা যেমন তাদের অপরাধ বাস্তবায়নে জাল বিস্তার করে, তেমন বিভিন্ন ভ্রান্ত মতাবলম্বীরাও তাদের বিভ্রান্তিকর মতাদর্শ ছড়িয়ে দিতে ব্যবহার করছে ফেসবুককে। অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিতেও এটি ব্যবহার করা হচ্ছে। সরলপ্রাণ মানুষকে বোকা বানিয়ে মিথ্যা প্রচার করার জন্য গুজব এবং ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছে তারা। কখনো দেখা যায় যে ‘ইসলাম প্রচারের’ দোহাই দিয়ে করা হচ্ছে এসব কাজ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুয়া আইডি কিংবা পেজ ব্যবহার করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ফেসবুক উন্মাদনা চরমে।
.
‘আমিন না লিখে যাবেন না’; ‘মুসলমান হলে আমিন না লিখে যাবেন না’ ‘ছুবহানাল্লাহ, আল্লাহর কী কুদরত!’ ‘এটা নবীজির পাত্র, আমিন না লিখে যাবেন না’ এমন লেখার সঙ্গে আল্লাহ কিংবা রাসুল (সা.)-এর নাম কিংবা কালিমা খচিত ছবি হয়তো ফেসবুক ইউজারমাত্রই দেখেছেন।
.
এসব ভুয়া পোস্ট দিয়েই অনেকে ফেসবুকে ‘ইসলাম প্রচার’ করছেন। অনেকেই সরলপ্রাণে লাইক-কমেন্টও করছেন। অসুস্থ বা রুগ্ন শিশুর ছবি দিয়ে লিখে দেয়, ‘আমিন না লিখে যাবেন না। ‘ভাবখানা এমন যে, এখানে লাইক দিলেই জান্নাত। প্রশ্ন হলো, এখানে রুগ্ন ব্যক্তির সঙ্গে আমিন বলার কী সম্পর্ক?

নবীজি (সা.)-এর পাত্রের সঙ্গে আমিন বলার কী সম্পর্ক? পাশাপাশি কয়েকটি ধর্মীয় গ্রন্থের ছবি দিয়ে বলা হয়, ‘আপনি কোনটির সাপোর্টার?’

কখনো দেখা যায় এমসিকিউয়ের মতো প্রশ্ন। আপনার রব কে?
এক. আল্লাহ।
দুই. ভগবান।
তিন. গড।

মাঝেমধ্যে দেখা যায়, হৃদয়ে ঝাঁকুনি দেওয়ার মতো প্রশ্ন, ‘আপনি কি মুসলমান?’ মুসলমান হলে লাইক না দিয়ে যাবেন না। আবেগী ফেসবুকাররা এখানে ধুমসে লাইক দিচ্ছেন। এগুলো ইসলাম নিয়ে ইসলামের পরিভাষা ‘আমিনকে’ নিয়ে উপহাস করা ছাড়া কিছুই নয়।
.
কখনো দেখা যায়, অশুদ্ধ বা জাল হাদিস তুলে ধরে বলা হয়, ‘লাইক দিন, যদি জান্নাতে যেতে চান।’ অথচ মিথ্যা হাদিস বর্ণনা করা যেন জাহান্নামে নিজের ঠিকানা বানিয়ে নেওয়া।
.
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার ওপর মিথ্যা আরোপ করে, সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।’
(সহিহ বুখারি)

যুগে যুগে মিথ্যা বলে, মিথ্যা প্রচার করে মুনাফিকরাই ইসলামের বেশি ক্ষতি করেছে। ইসলামকে হাসির পাত্র বানিয়েছে। মহানবী (সা.)-কেও তারাই বেশি কষ্ট দিয়েছে।
.
এ বিষয়ে আমাদের করণীয় হলো, কোনো সংবাদভিত্তিক পোস্টে লাইক বা কমেন্ট করার আগে সংবাদটির উৎস জানতে হবে যে তা কোনো সঠিক উৎস থেকে এসেছে কি না। অনেক আবেগপ্রবণ ফেসবুকারই লাইক বা কমেন্ট শেষে এসব মিথ্যা পোস্ট শেয়ারও করে যাচ্ছেন। অথচ একজন মুসলমানের জন্য কারো নিয়ে আসা এ ধরনের কোনো খবর যাচাই না করে বিশ্বাস করার কোনো সুযোগ নেই। মুমিন তো কোনো গুজবে কান দিতে পারে না।
.
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘মুমিনগণ! কোনো পাপাচারী ব্যক্তি যদি তোমাদের কাছে কোনো খবর নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে। যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও।’
(সুরা : আহজাব, আয়াত : ৬)
.সত্যতা যাচাই না করেই বিভিন্ন প্রকার খবর প্রচার করতে গিয়ে কত বড় গুনাহর ভাগী হয়ে যাচ্ছেন অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারীরা বিষয়টি ভেবে দেখবেন দয়া করে।
(লেখকের একান্তই নিজস্ব মতামত, এর জন্য সম্পাদক দায়ী নয়)
১৭ জানুয়ারি ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/টি,জে

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে