লেখকঃ নিলয় আহসান নিশো
..
...
শুক্রবার সকাল ৮টা.....
নিলয় ঘুমাচ্ছে মানে আমি ঘুমাচ্ছি। যেহেতু শুক্রবার এবং অফিস যেতে হবে না তাই নামাজের আগ পর্যন্ত আমি ঘুমাই।এবং ঘুম থেকে উঠে গোসল সেরে নামাজ পড়ে হোটেলে লাঞ্চ করেই আসি।
..
...
আজকেও সেটাই করতাম।কিন্তু কপাল খারাপ তাই সেটা করা হলো না। কারন মাস খানেক আগে আমার বিয়ে হয়েছে। আর আজ তাই সকাল ৮টায় ঘুম থেকে উঠতে হচ্ছে। কারন আমার সে এখন রান্না করবে এবং আমার তাকে সাহায্য করতে হবে। মানে সাহায্য বলতে রান্না করতে হবে না।উনি রান্না করবে আর আমার তাকে বিরক্ত করতে হবে।ধরেন যে, তরকারি নেড়ে দিচ্ছে এমন সময় পিছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে থাকতে হবে।এতে উনি বিরক্ত হবে রাগ ও করবে কিন্তু আমার ছেড়ে দেয়া চলবে না।কারন ছেড়ে দিলে রান্না বন্ধ হয়ে যাবে।রাগে ফুলে নাকের পানি আর চোঁখের পানিতে বন্যা ও বইতে পারে..
..
...
আমার ঘুম ৮:১৫এর দিকে ভাংলো।
চোঁখ খুলে দেখি ব্রাশে পেষ্ট লাগিয়ে সেটা আমার সামনে রাখা হয়েছে। মজার ব্যাপার হল আমার বাসায় আমরা দুজন থাকলেও ব্যবহার্য অধিকাংশ জিনিসপত্র একটি করে।
সেটা কিভাবে সম্ভব?
তাহলে খুলেই বলি....
আমাদের বিয়েটা ঠিক লাভ ম্যারেজ ও না আবার এরেঞ্জ ম্যারেজ ও না। বিয়েটা হল #আস্থার_বিয়ে।
সেটা কেমন সেটা নাহয় পরেই বলছি।আগে শুনুন পরের কাহিনী।
..
...
বিয়ের ১সপ্তাহ পর আব্বু আম্মুরা সবাই গ্রামে চলে যায়। তখন সংসারে মানুষ বলতে আমরা দুজন। তো আব্বু আম্মু রা চলে যাবার পর টের পেলাম যে আমাদের ডাইনিং টেবলে মাত্র একটাই খাবার থালা থাকে, ওয়াশরুমে একটাই ব্রাশ , বারন্দায় একটাই চেয়ার, পুরো বাড়ীতে চা/কফি খাবার জন্য একটাই মগ এমনকি বিছানাতেও বালিশ একটাই...
..
...
দুয়েক দিন আমি ব্যাপার টা আমলে নিলাম না।পরে বুঝতে পারলাম যে আসলেই সব কিছু একটাই।তখন আমার ওনাকে জিজ্ঞেস করলে উনি যা বললেন তাতে আমার চক্ষু চড়কগাছ...
বললাম,
:ডাইনিং এ একটা খাবার থালা কেন?
:একটা থালাতেই তো রাতের খাবার টা খাওয়া যায়। কারো ইচ্ছে হলে নিজে খাবার সময় আমাকে খাইয়ে দিবে আর ইচ্ছে না হলে নিজে খেয়ে থালায় হাত না ধুয়ে উঠে যাবে আমি কারো এঁটো থালাতেই ভাত বেড়ে খাবো....
.
:ওয়াশরুমে একটা ব্রাশ কেন?
:আমার মাথায় সমস্যা আছে, তাই আমি অন্যের ব্যবহার করা ব্রাশ দিয়েই দাঁত ব্রাশ করবো।কারো সমস্যা থাকলেও ব্রাশ একটাই থাকবে এবং তাকে সেটা দিয়ে আমার আগে ব্রাশ করতে হবে, সে ব্রাশ করার পর আমি ব্রাশ করবো।
.
:বারান্দায় আর একটা চেয়ার কই গেছে?
:দারোয়ান চাচা কে দিয়ে দিছি আরাম করে বসার জন্য।
:আর সেটা কেন?
:বারান্দায় ২টা চেয়ারের কোন দরকার নাই তাই।কেউ যখন বারান্দায় বসে আড্ডা দিতে চাইবে আমার সাথে তখন আমি তার পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিবো। আর কারো যদি এটা খারাপ লাগে তাহলে সে আমাকে আদর করে কোলে বসিয়ে নিলে আমি কিছু মনে করবো না।
.
:কফি খাবার জন্য সেদিন না আড়ং থেকে সুন্দর একজোড়া মগ কিনলাম দুজন মিলে?
:একটা মগ আমার পছন্দ হয়নি তাই ফেলে দিছি। আর আমি এক মগ কফি পুরো টা খেতে পারি না। কেউ চাইলে এক কাপ কফি আস্তে আস্তে দুজন মিলেই খাওয়া যায় এক কাপেই। সেটা কারো ভাল না লাগলে কেউ যখন কফি খাবে তখন অর্ধেক খেয়ে অল্প একটু আমার জন্য রাখলেই হবে।আমার এঁটো কফি বেশি পছন্দের।
.
:বিছানায় বালিশ আরেক টা গেল কই?
:কেন কারো বালিশ নাই?
:আমার বালিশ আছে কিন্তু তোমার বালিশ টা কই?
:আমার বালিশ লাগবে না।কারো ইচ্ছে হলে তার বুকে একটু মাথা টা রাখতে দিলেই হবে।সে বালিশে ঘুমাবে আর আমি তার বুকে।
:যদি না দেয়?
:খুন করে ফেলবো....
জীবনে দ্বিতীয় বার এসব নিয়ে প্রশ্ন করার সাহস হয়নি.... সেই থেকে সব কিছু একটা করে নিয়েই চলছে।
..
...
আমি ব্রাশ করে কিচেনে গিয়ে দেখি উনার দুধে আলতা গায়ের রং চুলার তাপে আর আমার ১৫মিনিট লেট করার রাগে লাল হয়ে আছে। আমি আস্তে আস্তে নিশ্চুপ ভাবে তার পিছনে গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম।উনি কোন রিয়্যাকশন দিলো না।মানে আজকে অনেক বেশি রেগে আছে।আমি একটু জোরে চেপে ধরলাম, তাতেও কাজ হচ্ছিল না, শেষে কানের কাছে মুখ টা নিয়ে আস্তে করে বললাম,
.
" নীলশাড়ি নীলপাড় কানে পুথীর দুল...
তুমি অপরুপা, তুমি মায়াবতী,
তুমি মোর সুন্দরতম ভুল..."
ভালবাসি নিরুপমা....
.
বলেই ঘারে গলায় আস্তে করে একটু আদর দিতেই আমার দিকে ফিরে খুব জোরে বুকে চেপে ধরে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিল মেয়ে টা।
তুমি আমাকে একটুও ভালবাসো না....আমাকে দেবার মত সময় হয় না তোমার। সপ্তাহে এই একটা দিন একটু কাছে থাকার সময় পাই তোমার সেটাও তুমি ঘুমিয়েই কাটিয়ে দাও..
..
...
আমিও কিছুক্ষন এভাবেই বুকে চেপে ধরে রাখলাম। তারপর নিরুপমার কান্না থামলে আমার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো। আমি নিরুপমার রাগে লাল হয়ে যাওয়া মুখ টা দেখার লোভ সামলাতে পারছিলাম না। তাই ইচ্ছে করেই তাকে রাগানোর জন্য বললাম,
আমি তোমার কাছে এমন টা কখনোই আশা করিনি, তুমি আমাকে ঠকিয়েছ, আমাকে ধোকা দিয়েছো, বিয়ের আগে বলেছিলে, তোমার কোন রাগ নেই, তুমি মাটির মানুষ, রাগ কিভাবে করতে হয় জানোই না, আর এখন? সব সময় রেগেই থাকো মনে হচ্ছে, পান থেকে চুন খসলেই তুমি রেগে মেগে আগুন...
তুমি বিয়ের আগে কত আস্তে আস্তে এক ঘন্টা পর একটা কথা বলতে, আর এখন? সারাদিন আমাকে ঝাড়ির উপর রাখো...
এত্ত বড় ধোকা তুমি আমাকে কিভাবে দিতে পারলে নিরুপমা, কিভাবে আমার মত একটা অসহায় ছেলের সরলতার সু্যোগ নিয়ে আমার সর্বনাশ করতে পারলে? ( কান্নার অভিনয় করে আমি)
..
...
ওহ তাই বুঝি?
ছেলে পটানোর জন্য আরো কত কিছুই করতে হয় তুমি জানো না বুঝি বাবু টা আমার??
এখন তো তুমি মাইনকা চিপায় পড়ে গেছ সোনা আমার...। তাই এখন এত ঢং বাদ দিয়ে যা যা বলবো তাই তাই করো তাহলেই তোমার মঙ্গল। নাও এখন ভাল করে জড়িয়ে ধরে রাখো রান্না করবো (রেগে মেগে)
:না ধরলে?
:শুক্রবারের দিন সকাল সকাল গরম খুন্তির ছ্যাকা খাওয়ার ইচ্ছা হইছে নাকি?
:না হয় নাই, ধরতেছি (বউ না জল্লাদ মনে মনে বলছি)
:হ্যা হ্যা বউ না জল্লাদ না আমি হলাম জল্লাদ বউ...
:আমার মনের কথাও শুনে কেমনে? আল্লাহ বাঁচাও
বলেই আমি নিরুপমা কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে তার ভেজা চুলে নাক গুজে মিষ্টি সুবাস নিতে লাগলাম...
আর আমার লক্ষী বউটা আমাকে একটু আদর দিয়ে রান্না করতে লাগলো.....আমি জড়িয়ে ধরে রইলাম আর একটু আধটু দুষ্টুমি করতে লাগলাম আর নিরুপমা ও সেটা উপভোগ করতে লাগলো বরাবরের মত।
১৭ ফেব্রুয়ারি,২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস