পাঠকই লেখক ডেস্ক: রাত প্রায় ০৯ টায় ছেলেটা আর মধ্যবয়স্ক লোকটি রুমে আসলেন!
আমি: রিক্সাওয়ালার ছেলে কে?
ছেলেটি: জ্বি আমি...
আমি: (থতমত খেলাম; মনে হচ্ছেনা) কী করেন আপনি?
ছেলেটি: আমি ওমুক কলেজে পড়ছি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে!
আমি এবার মধ্যবয়সী সিএনজি চালকের দিকে:
এত তাড়া কেন আপনার, কী সর্বনাশ করলেন! রিক্সাওয়ালা চাচাকে ফেলে দিলেন, তিনি একমাত্র আয় রোজগার করা সদস্য এই পরিবারের! তাঁর চিকিৎসা বাবদ ব্যয় হলো ১৯০০ টাকা, আরও ০৭ দিন শুয়ে থাকতে হবে!
আমার কথার মাঝেই ছেলেটি কথা কেড়ে নিয়ে বললো, আমার খরচ এই ০৭ দিন আমি চালিয়ে নিতে পারবো কিন্তু এই ০৭ দিন আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।
এত বলিষ্ঠ কন্ঠ ১৭ বছর বয়সী একটা ছেলের! কিন্তু এই মুহূর্তে অসহায় মনে হলো তাকে।
আমার ভেতরটা মুচড়ে উঠলো!!
আমি হঠাৎ অবান্তর একটা প্রশ্ন করলাম....
জিজ্ঞেস করলাম আপনার কলেজে যখন কেউ আপনাকে জিজ্ঞেস করে আপনার বাবা কী করেন, আপনি কী বলেন?
ছেলেটি: অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বললো "আমি বলি আমার বাবা রিক্সা চালান" আমি আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম না, বললাম আপনি আমার কাছে আসেন, কাছে আসতেই আমি ওকে বুকে জড়িয়ে নিলাম!!
ওহ ক্রমাগত কাঁদছে, আমার অফিসার, ওই সিএনজি চালক ও আমি কাঁদছি.....
এরপর আপনি থেকে বের হয়ে ওকে এই প্রথম তুমি বললাম! আর ওহ জানলো ওর একটা বড় ভাই আছে। যতদিন বেঁচে থাকবে ওকে একা যুদ্ধ করতে দেবেনা!!
১৭ বছর বয়সে এত কষ্টের চাপ বাইরে থেকে নিতে চাইলেও আমার বুকে এসে আর ধরে রাখতে পারেনি নিজেকে। আপনার আশেপাশে এরকম অনেক ভাইয়েরা ছড়িয়ে আছে.. সময় পেলে আপনার বুক ও কাঁধটা বাড়িয়ে দেবেন। নির্ভরতার জন্য নয় শুধু, কান্নার জন্য হলেও ওদের একটা আপন মানুষের কাঁধ চাই।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবীর সকল অসহায়ের সহায় হওয়ার তৌফিক দিন আমাদের!
লেখক: সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডেমরা জোন)।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস