পিপাসা
পাঠকই লেখক ডেস্ক: নন্দীপুর গ্রামে এক লোক ছিলেন যার নেশা ছিল বরশী দিয়ে মাছ ধরা। তার অঞ্চলের মাইল বিশেকের মধ্যে এমন কোন এলাকা নাই যেখানে তিনি মাছ ধরতে যান নি। এলাকায় তার এ ব্যাপারে বেশ নাম ডাক রয়েছে। তার নাম আপন খোনকার।
একবার তিনি তার এক বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গেলেন। সে এলাকাটা খুবই অদ্ভুত। মানুষজনও। ঐ এলাকার শেষ প্রান্তে একটি শ্মশান ঘাট আছে। সেখান থেকে আধা মাইল দূরে একটি ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি পুকুর আছে। ঐ পুকুরে মাছে টইটম্বুর। কিন্তু ভয়ে কেউ মাছ ধরতে সেখানে যায় না। আপনের বন্ধু দুলালও মাছধরায় সিদ্ধহস্ত।
দুই বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নিল জীবনে আর মাছ ধরবে না। শেষ মাছ ধরার কাজটি শ্মশান পুকুরেই করবে।
তাদের পরিকল্পনা অানুযায়ী তারা বিগত কয়েক দিনে পাঁচটি বল্লার টোপ ম্যানেজ করল। ছিপ, বরশী রেডি করল। এসব দেখে বন্ধু দুলালের বাবা তাদের সাবধান করল যাতে ঐ পুকুরে না যায়। কিন্তু তারা যাবেই।
যেমনি কথা তেমনি কাজ।
সেদিন ছিল চাঁদের ৫ম তিথী। চাঁদের আলো নাই বললেই চলে। রাত ১২ টার দিকে দুই বন্ধুু চুপে চুপে বাড়ি থেকে বের হল। গন্তব্য শ্মশান পুকুর। ওরা যখন পৌছালো তখন রাত ১ টা। গভীর রাতে মাছেরা দলবদ্ধভাবে চলে এবং খাবারের সন্ধান করে। এটাই উত্তম সময়।
ওরা একটা জায়গা বাছাই করল। দুজন দুটো সিগারেট ধরালো। মাছ শিকারীরা আবার ভুতের ভয় কাটাতে আগুন সাথে রাখে। মাছের খাবারের একটা আধার তৈরি করল। কিন্তু না কোন মাছের দেখা মিলল না। অনেক ক্ষণ অপেক্ষার পরও নামকরা দুজন মাছ শিকারী ব্যর্থ হল। চারিদিকে জোনাাকী জ্বলছে আকাশের তারার মতো। থেকে থেকে কূ্ কূ অদ্ভুত শব্দ ভেসে আসছে,বাশ ছারে পাখির ডানা ঝাপটানি। এসবের প্রতি তাদের কোন দৃষ্টিপাত নেই। কারণ মাছ ধরা একটা নেশা।
লেখক- সোহেলএমডি রানা
দুই বন্ধু গল্প করে সংক্ষিপ্ত। তাদের পরিচয় নিয়ে। তাদের সংসার, ছেলেমেয়ে নিয়ে। একদিন একপুকুরে মাছ ধরা প্রতিযোগিতায় আপন ফার্স্ট আর দুলাল সেকেন্ড হয়ে তাদের বন্ধুত্ব হয়। সেই সম্পর্ক আজো ১৫ বছর পরেও তারা ধরে রেখেছে। আপনের বিয়েতে দুলাল বর সেজে বসেছিলো সে কি হাঙ্গামা বিয়ে বাড়িতে। এসব গল্প করতে করতে বেশ অনেক সময় তারা অতিবাহিত করলেও মাছের দেখা পাচ্ছে না।
হঠাৎ দুলাল দেখে পুকুরের কোনার দিকটায় মাছ টুপটাপটুপটাপ করছে। বলল দোস্ত দেখো ঐ যে। বলে ইংগিত করার সাথে সাথেই আপন বুঝতে পারল এবং কাল বিলম্ব না করে সেথায় ঘাঁটি গাড়ল।
ছিপ ফলতে না ফেলতেই সমানে মাছ ধরা পড়তে লাগল। দুজনের মুখে এতক্ষণে হাসি ফুটল। মাছ ধরতে ধরতে আর সিগারেট খেতে খেতে তাদের ম্যাচের কাঠি ফুরিয়ে গেল।
এখন দুলাল আর একটা সিগারেট জ্বালাতে আগুন পাচ্ছে না। আগুন খুঁজতে আশে পাশে তাকাতেই দেখে এক লোক পুকুরের অপর কোণে মনের সুখে সিগারেট খাচ্ছে আর মাছ ধরছে ওদের মতোই। দুলাল আগুন আনতে যেই হাঁটা দিবে ঠিক ঐ মূহূ্র্তে আপন হাত টেনে ধরল। বলল বন্ধু কিছু বুঝতে পারছো? দুলাল কোন কথা না বলে চুপ করে বসে পড়ল। আর বলল কি করবা দোস্ত? আজকে তো মনে হয় ভাল বিপদেই পড়বো। তাড়াতাড়ি একটা বুদ্ধি বের কর। দাঁড়াও দেখি ওর গতিবিধি কি। তুমি ব্যাগ বস্তা গুছাও। এখান থেকে যত দ্রুত সম্ভব বাহির হতে হবে। এই কথা বলে আরেক বার ঐদিকে তাকিয়ে দেখে ৪/৫ জন মানুষ মাছ ধরছে। এবার তারা এই জীবনে প্রথম ভয়ে প্রাণটা নিয়ে দিল দৌড়। দুজনের কাঁধে দুটি মাছের ব্যাগ। বড় বড় মাছ। ওজনও অনেক বেশি। কিন্তু এত যে দৌড়াচ্ছে পুকুরের রাস্তা যেন ফুরাচ্ছে না। একসময় বের হওয়ার রাস্তার কাছে চলে এল। সেখনেই বিপত্তি।
ওরা শুনতে পাচ্ছেে পেছন থেকে কে যেন ডাকছে ও ভাই আমাদের কে নিয়ে যান। ও ভাই। তখন ওরা হাফ ছেড়ে বাঁচল যেনো। আরে এরাও আমাতের মতই মাছ শিকারী। আপন বলল নিয়েই যাই কি বল দোস্ত? দুলাল রাজি না। একসময় ঐ লোকগুলো একেবারে তাদের সন্নিকটে চলে এলো। দুলাল নিচে পায়ের দিকেে তাকিয়ে দেখে শুধু বড় বড় পশম আর পায়ের নখ দেখা যায়। কিন্তু পায়ের অস্তিত্ব বুঝা যায় না। দুলালের আর বুঝতে বাকী রইল না তারা আজ কাদের পাল্লায় পড়েছে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে খালি এতটুকু বলল আপন, ভাইরে, বাঁচতে হলে দৌড়া।
এই কথা শুনে আপন দুলাল দুইজনেই প্রাণের মায়ায় মানুষ যে স্প্রিন্ট দৌড়টা দেয় সেই দৌড় দিল। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হলো না। দুজনেরই পিঠের মাছ ঐ ভুতগুলো ব্যাগ ছিড়ে বের করে নিয়ে খাচ্ছে আর ওদের দুজনকে তাড়া করছে। দৌড়াতে দৌড়াতে দুজনের গালা শুকিয়ে আসছে লেকিন রাস্তা ফুরাচ্ছে না। একসময় আপন তার পিঠে খামচির আচঁড় অনুভব করল। দ্রুত ব্যাগের মায়া ছেড়ে দিয়ে জানের মায়ায় আরও জোড়ে দৌড়াতে গিয়ে পড়ে গেল দুজনেই। এবার কিন্নর কন্ঠে ভুতগুলো বলছে - আমাদের খাবারে দিলে হাত
ভেঙ্গে দেবো তোদর দাঁত।
বলেই দুজনকে তুলে মারল একটা আছাড়। এরকম কতক্ষণ চলায় তাদের চিৎকারে ঐ গ্রামের চৌকিদার রাতের ডিউটিতে সিটি মারতে মারতে আসতে লাগল রাস্তা ধরে। চৌকিদারের হাঁকডাকে আর লাইটের আলোতে ভুত গুলো নিমিষেই যেনো মিলিয়ে গেল।
চৌকিদার কাছে এসে দেখে রক্তাক্ত দুটি মানুষ পড়ে আছে নিথর।
বি:দ্র: সম্পাদক দায়ী নয়
১৪ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস
�