লেখক: জাকারিয়া আহমেদ
পরিবারের সবার পছন্দ মতে বিয়ে হয় জাকারিয়া আর ওয়াহিদার। মাশাআল্লাহ্ ওয়াহিদা যেমন সুন্দর তেমন চালাক। জাকারিয়ার পরিবার এর সবাইকে অল্পদিনেই আপণ করে নিয়েছে ওয়াহিদা। যদি ও তাদের বিয়ে পারিবারিক ভাবে হয়েছে,তবুও মনে হয় তারা প্রেম করে বিয়ে করেছে। তারা দুজন দুজনকে অনেক বেশি ভালবাসে।
ওয়াহিদা জাকারিয়ার কাছে ছোট ছোট আবদার করে আর জাকারিয়া সে গুলো পূরণ করে। মাঝ রাতে বৃষ্টি হলে ওয়াহিদা তার স্বামীকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ভালবাসে, জাকারিয়াকে সাথে নিয়ে নীল আকাশের চাঁদ দেখা এগুলোই ওয়াহিদার আবদার, আর জাকারিয়া তার ছোট ছোট আবদার পূরণ করে।
জাকারিয়া অন্য সবার মতো নয়,সে কাজ থেকে প্রতিরাতে তাড়াতাড়ি বাসায় আসে। এসে পরিবার এর সবার সাথে রাতের খাবার খেয়ে আড্ডা দেওয়া, পরিবারের সবাইকে খুশি রাখাই হচ্ছে তার একমাত্র কাজ। পরিচয় তো দিলাম না সরি, (মধ্যবিও পরিবারের ছেলে জাকারিয়া, ইন্টার পাস করে আর পড়া হয়নি তার, লেগে পড়ে বাবার ছোটখাটো ব্যবসা দেখাশোনা করার কাজে) সারাদিন কাজ করে রাত যখন বাসায় এসে ওয়াহিদার মায়াবী মুখখানি দেখে, তখনি সব কষ্ট ভুলে যায় জাকারিয়া।
অনেক সুখে শান্তিতে চলতেছিল তাদের সংসার। রাগ, অভিমান, ভালোবাসায় পুর্ণ ছিল তাদের জীবন। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের জীবনে সুখ বেশি দিন ঠিকে থাকে না, ঠিক তেমনি জাকারিয়া আর ওয়াহিদার সুখের সংসারে হঠাৎ করে এক ঝড় এসে লণ্ডভণ্ড করে দেয় সুখের সংসার।
সেদিন হঠাৎ করেই ওয়াহিদার জ্বল উঠে,কিন্তু জাকারিয়াকে বুঝতে দেয়নি সে অসুস্থ, কারণ সে অসুস্থ জানলে জাকারিয়া দোকানে যাবে না আর না গেলে তার ব্যবসার ক্ষতি হবে এই ভেবে সে আর জাকারিয়াকে বলেনি। জাকারিয়া প্রতিদিন এর মতো সেদিনওও সকালে ঘুম থেকে উঠে সবার সাথে একসাথে বসে নাস্তা করে,।
জাকারিয়া প্রতিদিন কোথাও যাওয়ার সময় কপালে চুমু দিয়ে যায় ঠিক তেমনি আজও ওয়াহিদা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। যাওয়ার সময় জাকারিয়া ওয়াহিদার কপালে একটি মিষ্টি চুমু দিয়ে কাজে চলে যায়।
জাকারিয়াকে বিদায় দিয়ে ওয়াহিদা লেগে যায় তার কাজে, একসময় সে বুজতে পারে তার মাথা ঘুরপাক কাচ্ছে, তবু ও সে কাজ করতে থাকে, একসময় তার শ্বাশুরি তাকে কোনো এক জিনিশ এর জন্য ডাকতেছিলেন,তখন ওয়াহিদা উপরে রুম পরিষ্কার করতেছিল।
শ্বাশুরির কাছে যাওয়ার জন্য ওয়াহিদা ছিড়ি দিয়ে নিচে নামতেছিল, তখনি পা পিছলে পড়ে যায় আর চোখের উপরে অনেক জুড়ে আঘাত পায়,যার কারণে সে অজ্জান হয়ে যায়।
তাই সাথে সাথে ওয়াহিদার শ্বশুর শ্বাশুরি তাকে হাসপাতাল নিয়ে যান আর জাকারিয়াকে ফোন করে সব কিছু বলেন।জাকারিয়া সাথে হসপিটাল চলে যায়।সেখানে ওয়াহিদাকে ইমার্জেন্সিতে ভর্তি করা হয়। ডাক্তাররা ওয়াহিদাকে চিকিৎসা দেয়া শুরু করে দেন। অনেক্ষণ পর ইমার্জেন্সি রুম থেকে ডাক্তার বের হয়ে আসেন।এবং জাকারিয়াকে তার রুমে ডেকে পাঠান।
-ডাক্তার ওয়াহিদার কোনো বড় ধরনের সমস্যা হয়নি তো (জাকারিয়া)
-আপনাকে যে কি করে কথাটা বলবো ভেবে পাচ্ছি না,তবুও অতি দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে আপনার স্ত্রীর দুটো চোখকি নষ্ট হয়ে গেছে (ডাক্তার)
(কথাটি শুনার পর জাকারিয়ার মাথায় যেন আসমান ভেঙে পড়েছে, দু চোখ দিয়ে অঝরে পানি পড়া শুরু হয়েছে)
-আপনাকে শান্তনা দেওয়ার মতো ভাষা আমার জানা নেই, তবে আপনার স্ত্রী এক উপায়ে ভালো হতে পারে (ডাক্তার)
-সেটা কি ডাক্তার আমাকে তাড়াতাড়ি বলুন, যত টাকা লাগে আমি দিতে পারবো তবূ ও আমার স্ত্রীকে ভালো করে দেন (কাদো কাদো সুরে জাকারিয়া)
-আমরা অনেক পরিক্ষা করে দেখেছি, আপনার স্ত্রীর দুটো চোখ নষ্ট হয়ে গেছে, এখন যুদি কেউ অনাকে নিজের চোখ দান করে, তাহলে অপারেশন করে নতুন চোখ লাগালে তিনি আগের মতো দেখতে পারবেন।তবে এতো সহজে কেউ তার চোখ দান করবে না।(ডাক্তার)
-ডাক্তার আমি আমার চোখ দিব,আপনি তাড়াতাড়ি অপারেশন করার ব্যবস্তা করুন (জাকারিয়া)
-সরি মিঃ, আমরা একজন ভালো মানুষকে মৃত্যর দিকে ঠেলে দিতে পারি না,এটা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়,যুদি কোনো মৃত্য পথের যাত্রী তার নিজের ইচ্ছায় চোখ দান করেন, তাহলে অপারেশন করা যাবে (ডাক্তার)
- স্যার আমার কাছে আমার স্ত্রী আমার সব কিছু।তার জন্য একবার নয় হাজার বার মরতে আমি রাজি,
আমি নিজের চোখ দিয়ে দুনিয়া দেখতে চাই না,আমি ওর চোখ দিয়ে দুনিয়া দেখতে চাই, (বলেই জাকারিয়া ডাক্তার এর দু পা জড়িয়ে ধরে অনেক মিনতি করে) জাকারিয়ার কান্না দেখে ডাক্তার আর তার নিজের কান্না থামিয়ে রাখতে না পেরে তিনি ও সাথে সাথে কেদে পেলেন।
-আমি আপনার কষ্ট বুঝতে পারতেছি, আপনি আপনার স্ত্রীকে অনেক বেশি ভালোবাসেন, আমার পক্ষে আপনার দুটো চোখ নেয়া সম্ভব নয়, তবে আপনার একটা চোখ আপনি আপনার স্ত্রীকে দান করতে পারেন। (ডাক্তার)
-সাথে সাথে জাকারিয়া দু চোখে আনন্দের জল ঝরতে শুরু করে,
-ডাক্তার সাহেব যত তাড়াতাড়ি পারেন অপারেশন এর ব্যবস্থা করেন (জাকারিয়া)
-তাড়াতাড়ি করলে হবেনা, আগে আমাদের কে পরিক্ষা নিরিক্ষা করে দেখতে হবে তার পর,পনের দিন পর আপনার স্ত্রীর অপারেশন করতে হবে।
আপনি এখন আপনার স্ত্রীর কাছে যান তাকে কেবিনে দেয়া হয়েছে (ডাক্তার) জাকারিয়া সাথে সাথে চলে যায়,গিয়ে দেখে ওয়াহিদা শুয়ে আছে,চোখে তার বেন্ডিছ করা। জাকারিয়া গিয়ে ওয়াহিদার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে নিঃশব্দে কাঁদতে থাকে। তখনি জাকারিয়ার অস্থিত্ব টের পায় ওয়াহিদা।
-আমাকে একা রেখে কোথায় চলে গিয়েছিলে, আমি জানি তুমি এখন বাচ্চাদের মতো কাঁদতেছো, আরে পাগল আমার কিচ্ছু হয়নি, শুধু চোখে একটু আঘাত পেয়েছি, ডাক্তার বলেছে পনের দিন পর আমি নাকি সব কিছু আগের মতো দেখতে পাবো, আমি অন্য কিছু দেখতে চাইনা, আমি শুধু আমার জানটাকে দেখতে চাই,এবার তো কান্না থামাও (ওয়াহিদা)
-কে বললো আমি কান্না করতেছি, আমি তো মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে আমার পাগলিটার সুস্থতা কামনা করতেছি। দেখতে দেখতে চলে যায় পনেরটি দিন, এই পনেরো দিন জাকারিয়া সব সময় ওয়াহিদার পাশে থেকেছে ওয়াহিদাকে বুঝতে দেয়নি সে অন্ধ, এই পনেরোটি দিন বলতে গেলে ওয়াহিদা জাকারিয়ার চোখদিয়ে সব কিছু অনুভব করেছে, দিন রাত ২৪টা ঘন্টা জাকারিয়া ওয়াহিদার পাশে চায়ার মতো থেকেছে, এই পনেরো দিন ওয়াহিদাকে সে বুঝতে দেয়নি সে কষ্টে আছে,ওয়াহিদাকে সব সময় হাসিখুশি তে রেখেছে।
-অবশেষে আজ দুজনকে অপারেশন করার জন্য অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছে। দুদিন পর,,, আজ জাকারিয়া আর ওয়াহিদার বেন্ডেজ খোলা হবে, তাই ওয়াহিদাকে। প্রশ্ন করা হয় তুমি সর্বপ্রথম কাকে দেখতে চাউ, ওয়াহিদা জবাব দেয় আমি আমার স্বামীকে দেখতে চাই, তার কথা মতো জাকারিয়াকে তার সামনে এনে বেন্ডেজ খোলা হয়। জাকারিয়ার দিকে তাকিয়ে ওয়াহিদা অবাক, কারণ সে দেখতে পায় জাকারিয়ার চোখ সাদা কাপড় দিয়ে বাধা। তখন ওয়াহিদা বলে আমার স্বামীর এই অবস্থা কেন,তখন ডাক্তার সব কিছু খোলে বলেন।
-তোমার দুটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে, তুমি অন্ধ থাকবে জাকারিয়া এটা মেনে নিতে পারেনি,তাই তার নিজের একটি চোখ তোমাকে দান করেছে (ডাক্তার)
-ওয়াহিদার চোখ দিয়ে অঝর দ্বারায় পানি পড়তে থাকে।
জড়িয়ে ধরে জাকারিয়াকে, আমি তো বলেনি আমাকে ভালো করার জন্য তুমি এমন করো, আমার জন্য নিজের এতো বড় ক্ষতি করলে কেনো (ওয়াহিদা কেঁদে কেঁদে)
-তুমি অন্ধ আর আমি ভালো থাকবো এটা অসম্ভ, দেহ থেকে আত্না চলে গেলে যেমন মানুষ মরে যায়,ঠীক তেমনি তোমাকে ছাড়া আমার বেচে থাকা অসম্ভব, আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি, আর মরার পড়েও আমি তোমাকে ভালোবাসব।
এমটি নিউজ/আ শি/এএস