পাঠকই লেখক ডেস্ক : নুসরাত ইন্টার ফাষ্ট ইয়ারে পড়াশুনা করে। তার ছোট ভাই মেহেদী ৫ম শ্রেণীতে।
পরিবারটিতে ভাই বোনের দারুণ ক্যামিষ্টি।
মেহেদী : আপু আইসক্রিম ওয়ালা এসেছে। একটা আইসক্রিম কিনে দেনা!
নুসরাত : আইসক্রিম খাওয়ার দরকার নেই। আমার কাছে টাকা নেই।
মেহেদী : আমি ত জানি তোমার কাছে টাকা আছে।
নুসরাত : কই টাকা আছে বের করে দিয়ে যা।
এই বলেই একটা চড় বসিয়ে দিতে গেলেই দৌড়ে পালাল মেহেদী।
মেহেদী : দূর থেকে মুখ ভেংচি মেরে বলল, তর টাকা দেখিছ রাতের ভিতরেই চুরি হয়ে যাবে।
আর আব্বু আজ বাড়িতে আসলেই বলে দিব কলেজে গিয়ে শুধু ফুচকা খায়। ছোট ভাইয়ের জন্য একটা ফুচকাও আনেনা।
নুসরাত : তুই দাড়া আজ.....মুখে মুখে তর্ক করা শিখে গেছিস কেমনে।
এই বলেই আরেকটা দৌড়ানি দিল।
এবার মেহেদী এক দৌড়ে খেলার মাঠে চলে গেলো। মাঠে খেলাধুলা শেষে বন্ধুদের নিয়ে মাছ ধরতে বিলে নামল।
মাছ ত ধরার নামে খবর নেই।
বিলের কাঁদায় লাফালাফি করে বাড়ি ফিরল।
মেহেদী : মা- মা- কই গেছ....
নুসরাত : মা ডাক্তারের কাছে গেছে। তুমি কোথায় থেকে এসেছ মহাজন।
মেহেদী : আপু আমারে মাড়িছনা। সাজাহানে আমারে ধাক্কা মেরে পানিতে ফেলে দিছে।
নুসরাত : তরে মাড়মুনা ত কী আদর করুম।
মেহেদী : আদর করলেই ত হয়। আমি তোমার একটা মাত্র ভাইনা?
মেহেদীর পাকনা পাকনা কথা থামিয়ে দিয়ে কানে ধরে কলপার নিয়ে গেলো।
মেহেদী : আপু আপু ব্যথা লাকতাছে ছাড়না।
মেহেদীর আব্বু জামাল সাহেব ঢাকায় চাকরি করে ।
বাড়িতে এসেই মেহেদী....অ মেহেদী.... কই গেলি।
মেহেদী : আব্বু আমি এই যে, এইখানে। আমার জন্য কি এনেছ বল।
জামাল : মেলা কিছু আনছি তোমার জন্য।
মেহেদী : আব্বু প্রথমে আমার একটা বিচার আছে।
জামাল সাহেব : কী বিচার বাবা?
মেহেদী : আপু কলেজে গিয়ে শুধু ফুচকা খায় আমার জন্য একটা ফুচকাও আনেনা।
জামাল সাহেব : ফুচকা খায় তুমি জানলা কিভাবে?
মেহেদী : আপু ত নিজেই প্রতিদিন আমার কাছে বলে, আজ তোতা মিয়ার ফুচকাটা, কি যে মজা হইছে।
আজকে ঐ দোকানের আঁচারটা যে কি মজা হইছে।
জামাল সাহেব : আচ্ছা ঠিক আছে,তোমার আপুরে ডাক দেও।
মেহেদী দৌড়ে পুকুরঘাটে আপুর কাছে গিয়ে।
মেহেদী : আপু...আপু। তোমারে আব্বু ডাকে।
নুসরাত : আব্বু কখন আসল?
মেহেদী : এই তো এই মাত্র এসেছে। এখন তাড়াতাড়ি আস। বিচার আছে।
নুসরাত : বিচার আছে মানে।
মেহেদী : আব্বুর কাছে বিচার দিয়েছি, তোমার বিচার আছে।
এভাবেই ধারুন মজার জুটি ভাই বোনের খুনশুটি চলছেই।
রাতে মেহেদী ও নুসরাত পড়ার টেবিলে একসাথে পড়তেছে।
মেহেদী : আপু আমারে তোদের কলেজে নিয়ে যাবি?
নুসরাত : না। তোকে নেওয়া যাবেনা।
মেহেদী : কেন রে...আমি কী তোর জনম জনমের শত্রু?
নুসরাত : হা তুই আমার চির শত্রু।
মেহেদী : আচ্ছা ঠিক আছে মনে থাকে যেন। আমাকে যখন বলবি মেহেদী দোকান থেকে এটা নিয়ে আয়না,ওটা নিয়ে আয়না, তখন শত্রু মনে হয়না।
নুসরাত : এত কথা বাদ দিয়ে পড়াশুনা কর।
মেহেদী : আমি পড়বনা। তুমি ত সাড়াদিন মোবাইল টিপাটিপি কর।
আমারে একটা গেমসও খেলতে দেওনা।
পর দিন সকাল বেলা :
নুসরাত : মেহেদী...মেহেদী...
মেহেদী : জ্বী আপু বল।
নুসরাত : দোকান থেকে ১ টা গোসলের সাবান ও স্যাম্পু নিয়ে আয়।
মেহেদী : আমার বিস্কুটের টাকা সহ দাও। নয়ত আমি যাবনা।
নুসরাত : ভাই এখন অতিরিক্ত টাকা নাই। ভাইনা ভালো এখন যা পড়ে তরে দিমুনে।
মেহেদী : আচ্ছা ঠিক আছে, ঠিক আছে। মনে থাকে যেন।
টাকা নিয়ে মেহেদী দোকানে গিয়ে চিপস কিনে খেলার মাঠে খেলতে গেলো।
মেহেদী দুপুরের সময় বাসায় ভয়ে, ভয়ে চুপচাপ আসল।
নুসরাত : মেহেদী সাবান, আর স্যাম্পু কোথায়?
মেহেদী : দোকানে ত সাবান নেই।
নুসরাত : টাকা কোথায়?
মেহেদী : টাকা ত খেয়ে ফেলেছি।
এসকল নিত্যনতুন ঘটনা নিরবেই সহ্য করে নিতে হয় নুসরাতকে।
সামনে ২১ ফ্রেব্রুয়ারী উপলক্ষে নুসরাতদের কলেজে বিশাল বড় অনুষ্ঠান।
মেহেদী রাতে আপুর সাথে ঘুমাতে গেলো।
মেহেদী : আপু...আপু.. রে কালকে আমারে তোদের কলেজে নিয়ে যাবিনা?
নুসরাত : তুই কলেজে গিয়ে কি করবি?
তাছাড়া তুই কলেজে গেলে, নানা বাহনা ধরবি।
তোরে নেওয়া যাবেনা।
মেহেদী : আপু আমি বাহনা ধরবনা। নিয়ে যাবিনা??
নুসরাত : এখন ঘুমা। আচ্ছা নিয়ে যাব।
মেহেদী : আপু কালকে কী অনেক দোকান পাট আসবে?
নুসরাত : হা অনেক দোকান পাট আসবে।
তবে আমি টাকা ছাড়া যাব।
মেহেদী : আমার কাছে ৯ টাকা আছে। আব্বু ঢাকা যাওয়ার সময় দিয়ে গেছে।
তার পর দিন ২১ ফ্রেব্রুয়ারী। মেহেদী গোসল করে বড় বোনের পূর্বেই রেডি হয়ে গেছে।
অনুষ্ঠানে যাওয়ার খুশিতে অন্য রকম আমেজ কাজ করতেছে।
মেহেদী রুমে গিয়ে দেখে তার আপু সাজতেছে।
মেহেদী : আপু তোমার এত দেড়ি হচ্ছে কেন?
আস আমি তোমাকে সাজিয়ে দেই , আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবেনা।
নুসরাত : তর এত পাকনামি করতে হবেনা। তুই যা আমি আসতেছি।
অবশেষে দুইজন অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হলো।
মেহেদীর প্রশ্নের ভান্ডারে প্রশ্নের ত অভাব নেই, সেখান থেকে একটা একটা প্রশ্ন করা শুরু করে দিয়েছে বড় আপুকে।
নুসরাত বিরক্ত হয়ে বলল আর একটা কথা বললে তোকে নিয়ে যাবনা।
মেহেদী : আচ্ছা ঠিক আছে,ঠিক আছে আর কথা বললামনা।
পথে নুসরাতের বান্ধবী রাবেয়ার সাথে দেখা।
রাবেয়া : কিরে নুসরাত তোর সাথে ও কে?
মেহেদী : নুসরাতের মুখের উত্তর কেড়ে নিয়ে,
আমি নুসরাতের ছোট ভাই। আমার নাম মেহেদী।
অবশেষে অনুষ্ঠানে পৌছালো ২য় কোন রকমের ঝামেলা ছাড়াই।
একুশে ফ্রেব্রুয়ারীর দিন হওয়ায় চারদিকে জাতীয় পতকার এক বিশাল সমাবেশ।
হটাৎ মেহেদী রাস্তার একপাশে দাড়িয়ে দেখতে পেলো---
এক মটর সাইকেল ওয়ালার সামনে থাকা জাতীয় পতাকাটা পড়ে গেছে।
অনেকেই পড়ে যাওয়া জাতীয় পতাকার উপড় পাড়িয়ে যাচ্ছে।
মেহেদী অনেক্ষন লক্ষ করে দেখল দেশের জাতীয় পতাকাকে সবাই কিভাবে পায়ের নিচে রেখে অসম্মান করতেছে।
মেহেদীকে তার আপু হাত ধরে রেখেছে । মেহেদী হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে গেলো ঐ জাতীয় পতকার দিকে। যেটার উপর দিয়ে মানুষ পা রেখে দেশের প্রতীককে অসম্মান করতেছে।
যেই ময়লা লাগা পতাকাটি তুলতে গেলো তেমনি ডান দিক থেকে আসা একটি বাস খুব স্পিডে এসে মেহেদীর উপর দিয়ে চলে গেলো।
মেহেদীর বুকের পাঁজর মিশে গেছে রাস্তার সাথে।
মেহেদীর রক্তে সেই সবুজ পতাকাটি লাল হয়েগেছে।
নুসরাত : এই দৃশ্যে দেখে এক চিৎকার দিয়ে মেহেদীর কাছে গেলো।
ততক্ষনে মেহেদী চলে গেলো না ফেরার দেশে..........
লেখক পরিচিতি :
মোঃ সেলিম মিয়া,
গ্রাম : ভিটিপাড়া, পো : সিংহশ্রী,
থানা : কাপাসিয়া, জেলা : গাজীপুর,
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস