আদৌ জানা হয়নি সেই ব্যখ্যাটি
আরিফুর রাজু: শুরুতেই বলে রাখি, আমি স্বপ্ন বিলাসী নই। ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখা তো দূরের কথা, জেগে জেগেও স্বপ্ন দেখতে প্রচন্ড ভয় পাই। কারণ,আমার স্বপ্নের ব্যাখ্যা কখনই সুখের না হয়ে বরং অনেক গুণ দুঃখের হয়ে দাঁড়ায়।
তবে হ্যাঁ। আজ এমন একটি স্বপ্নের কথা বলবো যার ব্যাখা আজও আমার জানা হয়নি। জানি না এই স্বপ্নে কোন সুখ অথবা দুঃখের বার্তা আছে কি না। তাই প্রায়ই খেই হারিয়ে ফেলি কি হতে পারে আমার সেই স্বপ্নের ব্যাখ্যা।
আমি আমার চাচাতো ভাইসহ বেশ কয়েক জন দাঁড়িয়ে আছি নাম না জানা কোন এক খরস্রোতা নদীর পাড়ে।বর্ষাকাল, স্বাভাবিকভাবে নদী উপচে তার আশ-পাশের জমি গুলোতে গলা পরিমাণ পানি। নদীর পাড়ে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্য একটাই খরস্রোতা নদীটি পাড়ি দিয়ে দূরের নিরাপদ দ্বীপে পৌঁছানো। কিন্তু সমস্যা হল অপেক্ষমান যাত্রীদের জন্য কেবল অদ্ভুত টাইপের দু’টি নৌকা। নৌকার পাটাতনে মানুষ ধারণ ক্ষমতা সর্বোচ্চ ২/৩ জন, মুখটা বিশাল। আর আমরা যাত্রীর সংখ্যা ১৪ কি ১৫ জন।
নৌকার মাঝির সঙ্গে অপেক্ষমান যাত্রীদের তুমল কথা কাটাকাটি চলছে কিভাবে এত চোট্ট নৌকায় এত যাত্রী যাবে। হঠাৎ করেই মাঝির চিৎকার ভাই তাড়াতাড়ি নৌকায় উঠেন। পিছনে থেকে কি যেন ধেঁয়ে আসছে। তাকিয়ে দেখি পেছন কিছু হিংস্র নেকড়ে পানির ওপর দিয়ে দৌঁড়ে আসছে। তো জীবন বাঁচাতে মরিয়া হয়ে অদ্ভুত নৌকাটিতে উঠার জন্য সবাই একের পর এক নদীর উঁচু পাড় থেকে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ল। আমিও তাদের অনুসরণ করলাম। অনেক চেষ্টা করলাম নৌকায় উঠতে। কিন্তু হঠাৎই মনে হলো আমার চেয়ে সহযাত্রী নারীদের নৌকায় উঠা বেশি জরুরি। কারণ তাদের দু একজনের কোলে বাচ্ছা আছে। তাই আমি নৌকা থেকে নেমে অধিকতর দূর্বল নারীদের উঠিয়ে দিলাম।এর পর ভেবেই অবাক হলাম। হায়, কি করলাম! বাঁচার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আমিও প্রাণপনে ছোটাছুটি শুরু করলাম।
কিন্তু একি। ততক্ষনে দেখি হিংস্র নেকড়ে গুলো আমার খুব কাছে চলে আসলো। আমিও তা দেখে গলা পরিমাণ পানিতে দৌঁড় শুরু করলাম। বাঁচার জন্য, নিরাপদ দ্বীপে পৌঁছার জন্য।কিন্তু পথ যে অনেক দূরের, তার মাঝে নেকড়ে গুলো হিংস্র ধাবায় ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে পিছনের একের পর এক যাত্রী। প্রাণ পনে ছুটছি তো ছুটছি। আমি খুব বেশি দৌঁড়াতে পারছিলাম না, গায়ে পাঞ্জাবি ছিল বলে। তাই কোনভাবে গায়ের পাঞ্জাবিটা খুলে আবার দৌঁড়াতে লাগলাম। প্রায় আধা ঘন্টা যখন এভাবে ছুটলাম, আমার শক্তিও প্রায় নিঃশেষ। পিছনে তাকিয়ে দেখি নৌকায় উঠতে না পারা সব যাত্রী হিংস্র নেকড়ের আঘাতে মরে পানিতে মিশে গেছে। আর সামনের নৌকা গুলো ততক্ষণে নিরাপদ দ্বীপে পৌঁছে গেছে।আর আমিও নেকড়েদের আঘাত ছাড়াই ক্লান্ত হয়ে পানিতে ডুবে গেলাম। কিন্তু আমার আত্মা পৌঁছে গেছে সেই নিরাপদ দ্বীপে।
সে দ্বীপের বর্ননা সত্যিই অন্যরকম। আনন্দের ছড়াছড়ি। দেখতে পেলাম এক শিশুর জন্ম নিয়ে সেখানে সবাই খুশিতে মাতম। অট্টহাসি সর্বোত্ত।
আর ততক্ষণে ঘুম ভেঙে গেছে, ঘামে ভিজে গেছে পুরো শরীর। মাথার পাশের মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি রাত প্রায় সাড়ে ৪টা। বেডের পাশে জানালা থাকায় পর্দাটা সরিয়ে দেখি দূরের ল্যাম্প পোস্ট গুলোর আলো ঠিক ভাবে দেখা যাচ্ছে না গণ-কুয়াশায়। জানালা গ্লাস বেয়ে পড়ছে জমে থাকা কুয়াশা। তার পরও আমি ঘেমে অস্থির। মুখ বেয়ে টপটপ করে ঘাম ঝরছে। হায়, একি দেখলাম আমি। কি হতে পারে এ স্বপ্নের ব্যাখা? সব যেন অধরাই রয়ে গেল গণ ঝাপসা কুয়াশার মত।
লেখক: সাংবাদিক ও অধ্যয়ণরত মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিস ডিপার্টমেন্ট)। ই-মেইল:
[email protected]
২৪ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ