'পৃথিবীতে মায়ের মতো আপন কেউ নেই'
মোস্তাফিজুর রহমান : মানব শিশু জন্ম নেয়। থাকে মায়ের কোলে। আর অনান্য সৃষ্টির যাইতে মানব শিশূ খুব দুর্বল ভাবে জন্মায়। তার নিজের তেমন কোন ক্ষমতা থাকে না। পারেনা সাথে সাথে কথা বলতে , নিজের প্রয়োজন বোঝাতে। এই বোঝাতে না পারা শিশুর সমস্ত প্রয়োজন কেউ বুঝতে না পারলেও পারে কেবল একমাত্র মা। এই ক্ষমতা দেয়া হয়েছে মা, আল্লাহর পক্ষ হতে। মা অনেক কষ্ট করে প্রায় দশ মাস পেটে আগলে রাখে প্রিয় শিশূকে,নতুন মেহমান কে। তাকেই জীবন এর চেয়ে বেশী ভালোবাসে। এই ভালোবাসার কারনে অনেক মা সন্তান প্রসব কালে নিজের জীবন দিয়েও তা প্রকাশ করে থাকে।
একজন জীবন্ত মানুষের পেটে আর একজন মানুষকে বয়ে নিয়ে সব কাজ সম্পাদন করা যে কতটা কষ্টকর তা, ভুক্ত ভুগি মা ছাড়া আর কেউ অনুভব করতে পারবে না । যদি কাউকে হাজার হাজার টাকার বিনিময়ে, একটা ইট পেটের উপর বেধে নিয়ে মাত্র এক সপ্তাহ চলা ফেরা সহ সমস্ত কাজ সপমাদন করতে বলা হয়। তাহলে এমন কাউকেও খুজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু হাজার কষ্ট সহ্য করে সন্তানকে আগলে রাখে পরম যন্তে মাসের পর মাস ধরে।
মা, দুনিয়ার সবচেয়ে মধুর একটি নাম । হাজার ব্যাথা ভুলে থাকা যায় শুধু এই ডাক ডেকে । মা ডাকের উচ্চারণ গত বৈশিষ্ঠ লক্ষ করলে দেখা যায়, দুটি ঠোট এমন ভাবে মিশে যায়, যা অন্য কোন ডাকে এমনটা হয়না। আরবিতে মা হয় মীম অক্ষর এ, সেখানেও ঊচ্চারনে দুটি ঠোট খুব নিখুদ ভাবে মিশে যায়। এই কিছু কারনেও মা ডাকটি এত মধুর বলে অনেকে মনে করেন।
একটা শিশু জম্ন গ্রহন করে ক্ষিদা লেগেছে বলতে পারে না, পিপাসা লেগেছে পারে না বোঝাতে। পারে শুধু ট্যাটা করে কাঁদিতে। কিন্তু মা তার এই কান্না দেখে, শুনে বুঝতে পারেন, ভালো ডাক্তারের মত, কোন কান্না পিপাসার, আর কোন কান্না ঘুমের। তিনি ছাড়া আর কেউ বলতে পারেনা। এবং সেই অনুযায়ী তার চাহিদা পুরন করেন।
মহান আল্লাহ তাআলা মায়েদের এমন জ্ঞান দিয়েছেন, সে মা যদি বয়সে কম ও হয় তবুও সন্তানের সব কিছূ বুঝতে পারেন। বাচ্চা প্রসব কালে এক জন মায়ের যে কি পরিমান কষ্ট হয় , তা লিখে আলোচনা করে কখনও বোঝানো যাবে না। কেবল মাত্র মায়েই পারে তার অনুভব করতে। এত শত কষ্ট , রক্তের বন্যার বয়ে জম্ন হয় একটা শিশূর। মায়ের এই হাজার কস্ট নিমিষেই আনন্দে পরিনত হয় প্রিয় সন্তানের মুখ দেখেই। সব দুক্ষ দুর্দশা দূর হয়ে যায়।
শিশু যখন সুস্থ্য থাকে, মায়ের মন তখন খুশি থাকে।
সম্পাদন করতে পারে সমস্ত কাজ আনন্দ নিয়ে সাথে। কিন্তু যখন সন্তানের অসুস্থ্যতা দেখা দেয় , তখন মায়ের দুক্ষ ও পেরেশনের শেষ থাকে না। মা পারেনা তখন ঠিক মত খেতে , না পারে ঘুমাতে। সব সময় সন্তানকে চিন্তা করে। আর যদি বাচ্চার কঠিন রোগ দেখা যায় , তাহলে রাতের আধারে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর কাছে নিজের জীবন এর বিনিময়ে সন্তানের সুস্থ্যতা কামনা করেন।
পিয় পাঠক আপনার ছোট অবস্থায় আপনার মা যে কি পরিমান কস্ট করেছেন তা হয়ত মনে নেয়। কিন্তু আপনার জ্ঞান হওয়ায় পর যদি কখনো অসুস্থ্য হওয়ার ঘটনা মনে থাকে। তাহলে একটু ভেবে মনে করার চেস্টা করুন। আপনার অসুস্থ্যায় আপনার মা কি পরিমান পেরেশান হয়েছিলেন। আমার একটা ঘটনা মনে পড়ে তখন আমি এইচ এস সি পরিক্ষা দিচ্ছিলাম, হঠাৎ পরিক্ষা চলাকালীন সময়ে টাইফয়েড জরে আক্রান্ত হয়ে যায়। সে দিন এমন একটা রাত এসেছিলে আমার জীবনে।
সেই রাত যেন দশ রাতের চেয়েও বড় হয়েছিলো। সেই রাতে পাইনি আমি ঘুমের ছোয়া , কিন্তু সারা রাত ধরে জেগে ছিলাম আমার প্রিয় মা। জরে গা যেন পুড়ে যাচ্ছিল, তখন মা গায়ে হাত দিয়ে জর কমানোর চেস্টা করছিল। সারা রাত জেগে ছিলেন তিনি বাবা বারবার রুমে আসে আর যায়। আমি সেইদিন রাতে শুনেছি , দেখেছি , আমার সুস্থ্যতার জন্য চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে। এমন ঘটনা সব সবার জীবনে ই আছে। তা খেয়াল করুন বুঝবেন মা কে। তাইতো সন্তানের সুখে মা সবচেয়ে বেশি খুশী হয় , আর কাদে সবার চেয়ে বেশি সন্তানের বিপদে ।
তাই তো কবি বলেছেন ,
মাগো তুমি এই ধরণীর শ্রেস্ট নিয়ামত , তোমারি পদতলে রয়েছে জান্নাত।
ইসলামে মায়ের মর্যদা দেয়া হয়েছে তিন গুন বেশি বাবার চেয়ে। সন্তানের বেহেশত মায়ের পায়ের নিচে বলে ঘোষনা দিয়েছেন প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ(সাঃ)। আল্লাহ তাআলা মায়ের সাথে সর্বোউত্তম ব্যবহার করতে আদেশ দিয়েছেন।
নিষেধ করেছেন কড়া কথা, ঝিড়কি দিয়ে কথা, কস্ট দিয়ে কথা বলতে। পিতা মাতার খেদমত করা জান্নাত কামায় করার এক উত্তম উপায়। যে বৃদ্ধ বয়সে তার পিতামাতা অথবা তাদের দুই জনের একজনকে পেল অথচ জান্নাত কামায় করে নিতে পারলনা সে ধ্বংস হোক বলে রাসুল(সাঃ)দোয়া করেছেন।
পৃথিবিতে মাকে যত সহজে খুশী করা যায় , তা অন্য কোন মানুষকে খুশী করা যায় না। মায়েরা অল্পতেই তুস্ট থাকে। সন্তানের সাফল্য দেখে মা জান্নাতী সুখ অনুভব করেন। মায়ের ঋণ গায়ের চামড়া দিয়ে মাকে পাপুচ বানিয়ে দিলেও তা শোধ করা যাবে না।
অথচ আমরা এমন হয়েগেছি আজকাল, নিজের পরিচয়, কর্তব্য ভুলে গেছি। হারিয়েছি আমার জন্ম গ্রহন থেকে বড় হওয়ার পেছনে কার অবদান বেশি তাকে। আমাদের প্রিয় মাকে আজ অনেকে শত্রু বানিয়ে ফেলেছি নৈতিকতা, ও জ্ঞানের বিপর্যয়ের কারনে।
যে মা সারা জীবন নিজের জীবন পানি করে আমাদের মানুষ করলেন , অথচ কয়েক দিনের পরিচিত হওয়া স্ত্রীকে পেয়ে / তার কারনে মা কে শত্রু বানিয়ে নিয়েছি। নিজে বউকে নিয়ে ভালো খায় অথচ মায়ের কোন খবর নেই না ।
কোন সন্তানের প্রতি যদি মা অসন্তটুস্ট হয়ে যদি আকাশের দিকে দীর্ঘশাস ছাড়েন তাহলে আল্লাহ তা তার জন্য অভিশাপ হিসেবে ধরে নেন। মায়ের দোয়া সবার আগে কবুল হয়। মায়ের ভালো দেয়া ইহকাল ও পরকাল এ সাফল্যের জন্য পাথেয়। আর মা এমন এক নেয়ামত যা হারিয়ে গেলে আর পাওয়া যায় না। যারা মা কে ছেড়ে বাইরে থাকেন , তারা আসলে বুঝতে পারেন মা কে ছাড়া থাকতে কি পরিমান কস্ট হয়।
তাই মা দিবসে পাঠকদের প্রতি আমার আবেদন। যারা আমরা মায়ের সাথে ভুল ব্যবহার করেছি, মাকে কস্ট দিয়ে ফেলিছি। আর দেরি না করে মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। মা এত দয়ালু হাজার ভুল করলেও তিনি সাথে সাথে ক্ষমা করে বুকে টেনে নেয়। আমারা যেন মায়ের ঠিকমত খেদমত করতে আমি, আল্লাহ আমাদের সেই তৈফিক দান করুন। আমিন।
২৫ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ/ রাসেল/মাহমুদ
�