অজানাকে জানতে
শাহীন আখতারঃ সকাল আটটা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের সামনে থেকে বাস ছাড়ল। গন্তব্য স্থান ‘নুহাশ পল্লী’ ও ‘বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক’। গন্তব্যের উদ্দেশ্যে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে বাস। বাসের চেয়েও অদম্য গতিতে গন্তব্যপানে ছুটছে সবার মন। নুহাশ পল্লীতে পৌঁছেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলাম সবাই। অবাক বিস্ময়ে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম প্রিয় লেখকের প্রিয় বাগানবাড়িটিকে।
নুহাশ পল্লী : নুহাশ পল্লীর মোট আয়তন প্রায় ৪০ বিঘা। দেশের কালজয়ী কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ নিজের প্রচেষ্টায় বিশাল এই জায়গাটিতে গড়ে তোলেন ‘নুহাশ পল্লী’ নামক বাগান বাড়িটি। বিভন্ন সময়ে তিনি এটি তার নির্মিত নাটক ও সিনেমার শ্যুটিং স্পট হিসেবেও ব্যবহার করেছেন। নুহাশ পল্লীর প্রবেশদ্বার দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল কাঁচা ঘাসের সবুজ গালিচা। দেখেই বোঝা গেল অতি যতœ সহকারে নিয়মিত পরিচর্যা করা হয় এই দুর্বা ঘাসগুলোর। প্রবেশদ্বারের ডান পাশেই রয়েছে বেশ বড় ধরনের একটি দৃষ্টি নন্দন স্ট্যাচু। স্ট্যাচু’টিতে একটি ছেলে তার মায়ের কোমার ধরে দাঁড়িয়ে আছে। স্ট্যাচুর পাশেই আছে একটি ছোট সুইমিং পুল। সুইমিং পুলে বিশাল এক কঙ্কাল মূর্তির মুখ দিয়ে মটারের সাহায্যে পানি পড়ছে। এছাড়াও নুহাশ পল্লীর বিশাল মাঠের দুই পাশে স্থানে স্থানে রয়েছে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি জলাধার। যেগুলোতে পদ্ম, শাপলাসহ রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির জলজ ফুল গাছ। আরও একটু সামনে যেতেই চোখে পড়ল একটি একতালা দালান বাড়ি। বিভিন্ন প্রজাতির জবা ফুলসহ অনেক ধরনের লতাপাতা জাতীয় গাছে পুরো বাড়িটা বেষ্টিত।
সেখান থেকে আরও একটু এগিয়ে যেতেই দেখতে পেলাম ‘বৃষ্টি বিলাস’ নামের বহুল পরিচিত টিনের বাড়িটি। ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’ সিনেমায় এই বাড়িটি ব্যবহৃত হয়েছিল। বৃষ্টি বিলাস যাওয়ার রাস্তার পাশেই রয়েছে একটি খেজুর বাগান। এরপর পা বাড়ালাম পুকুরের দিকে। ভিত্তি ফলকে লেখা ‘দিঘি লীলাবতী’। তার নিচে মেয়ে লীলাবতীর উদ্দেশ্যে লেখকের আকুতি- ‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে।’ পুকুরের উত্তর পাড়ে মাঝারি সাইজের একটি বটগাছ। দক্ষিণে একটি একতলা ছোট চালের ঘর। পুকুরের মাঝখানে মাটি দিয়ে বানানো দ্বীপের মতো ছোট্ট একটি উঁচু জায়গা। তাতেও আছে একসাড়ি নারকেল গাছ। দ্বীপে যাওয়ার জন্য একটি কাঠের সেতু। সেতুর পাশেই আছে ‘ভূত বিলাস’ নামে দালানের দু’টি ছোট ঘর। বটতলায় বুড়ো দৈত্যের ভাস্কর্য। তার নিচে বস্ত্রহীন মৎসকুমারী জলাধারে একা দাঁড়িয়ে আছে। এরপর গেলাম দাবা খেলার জন্য তৈরি বিশাল দাবা বোর্ডের কাছে। এতবড় দাবার বোর্ড আগে কখনো দেখিনি। তাতে সাজানো আছে কাঠের তৈরি বিশাল সাইজের সব দাবার গুটি। জানা গেল, সবমিলিয়ে এখানে প্রায় ২৫০ প্রজাতির দুর্লভ ঔষধি, মসলাজাতীয়, ফলজ ও বনজ গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছের গায়ে দেওয়া আছে গাছের পরিচিতি ফলক, যা দেখে গাছ চিনতে অসুবিধা হবে না কারোর। লিচু বাগানের পাশেই রয়েছে হুমায়ূন আহমেদের সমাধি। সমাধি স্মারকে লেখা–‘চরন ধরিতে দিয়ো গো আমারে, নিয়ো না নিয়ো না সরায়ে।’
বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক : সাফারী পার্কে ঢুকে প্রথমেই বাসে করে ঘুরে দেখলাম সাফারী উদ্যান। যেখানে বাঘ, সিংহ, আফ্রিকান সাদা সিংহ, হরিন, জেব্রা, জিরাফ, গয়াল সব উন্মুক্ত ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর মানুষ খাচায় বন্দি (গাড়িতে চড়ে) হয়ে তা দেখছে। বিশাল এলাকায় মিনি বাসে করে ঘুরে দেখতে প্রায় ১৫-২০ মিনিটের মতো সময় লাগল। চোখের সামনে উন্মক্ত এইসব ভয়ঙ্কর পশু আগে কখনো দেখা হয়নি। আমরা আছি বাসের উপরে আর বাসের নিচে রাস্তার পাশেই বসে আছে সিংহ। ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। এরপর টিকিট কেটে দেখলাম বিভিন্ন প্রজাতির টিয়া পাখি। লাল, হলুদ, সবুজ, আকাশী, সাদা, কালোসহ অনেক রঙের ও ঢঙের সব পাখি যা আগে কখনো দেখা হয়নি। দেখলাম মেরিন এ্যাকুরিয়াম; দেখলাম ময়ূরের বিশাল খাঁচা। সেখানে অনেক ময়ূর ও ময়ূরী অবাধে বিচরণ করে বেড়াচ্ছে। ময়ূরের সঙ্গে ছবি তোলারও চেষ্টা করা হলো। তোলা হলো বেশ কিছু ছবি। সত্যিই প্রশংসার দাবিদার প্রজাপতির বিশাল সংগ্রহশালাটি। রাস্তার পাশেই আছে কুমিরের জন্য ছোট্ট দুটি জলাধার। যেখানে খুব কাছ থেকেই কুমির দেখার অভিজ্ঞতা হলো।
দেখার আরও অনেক কিছুই ছিল। তবে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার কারণে দেখা হয়নি সবকিছুই। পার্ক ত্যাগ করার জন্য মাইকে ঘোষণা হলো। আমরা সবাই বাইরে বেরিয়ে এলাম। রাত প্রায় সাড়ে আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছালাম। তখনো স্মৃতিতে অতি উজ্জ্বল হয়ে ভাসছিল নুহাশ পল্লী ও সাফারী পার্কের রোমাঞ্চকর স্মৃতিগুলো। যা কখনো ভুলবার নয়।
-শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ
০১৭৪১ ০৫৪৪৯৭
২৬নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস