ভালবাসার দীর্ঘশ্বাস
আকাশে মেঘ জমেছে।সূর্যটা মেঘে ঢেকে আছে।চারিদিকে আধার
আধার ভাব।বাতাস বন্ধ।প্রকৃতি যেন কারও ওপর অভিমান
করেছে।মুখ ভার করে আছে।চোখ ছলছল করছে।একটু চোখ
রাঙালেই অঝোরে বৃষ্টি ঝরাবে।একটুপরেই বৃক্ষের তৃষ্ণারত গলা
ভিজিয়ে নামবে বৃষ্টি।বসে আছি একটা চায়ের দোকানে।বাড়ি
ফিরতে হবে।তবে বৃষ্টির সাথে আমার বাড়ির দুরত্বটা মিলছে
না।কাছে তেমন কোন ছাতাও নেই।এদিকে বৃষ্টি পড়তে আরম্ভ
করেছে।ভিজতে হবে।সম্ভব না। বৃষ্টিতে ভিজলে আমার শরীর
খারাপ হয়।ঠাণ্ডা লাগে।সর্দিকাশি, জ্বর হয়।বাধ্য হয়েই চায়ের
দোকানে বসে থাকতে হলো।মোবাইলটা বাড়ি ফেলে এসেছি।
বৃষ্টি হচ্ছে মুষলধারায়।সে ধারা বেলে মাটিতে নতুন সুতার আচড়
দিয়ে স্রোত তৈরী করছে।ডানা মেলে ভিজছে কতগুলো রাজহাঁস।
বৃক্ষরা বৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে সুরের মুর্ছনা ছড়াচ্ছে।
আকাশ আজ পরম উদরতার সাথে বৃষ্টি বিলাচ্ছে ধরনীর উপর।
এমন সময় মনে পড়ছে পেছনে ফেলে আসা দিনগুলি। একাকীত্ব
মানুষের পিছনের স্মৃতিকে জাগিয়ে তোলে।স্মৃতিকে সঙ্গী করে
মানুষ বেচে থাকে।তবে সে বেচে থাকাটা হয় অন্যরকম।বৃষ্টির
গতি যেন আরও বাড়ছে।শান্তভাবে বৃষ্টি হচ্ছে যেন।আকাশে
বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে না।মেঘের গুড়ুমগুড়ুম আওয়াজও বন্ধ।এমন বৃষ্টি
সহজে থামে না।অন্যদিন যখন বৃষ্টি থাকে না তখন কেরাম
খেলি।ভাল সময় কাটে।আজ একা বসে আছি।একদল ছেলেরা
ফুটবল নিয়ে হাজির হয়েছে মাঠে।গ্রামের ছেলেরা বৃষ্টিতে ভিজে
ফুটবল খেলতে মজা পায়।খেলাতে বেশি আমেজ থাকে।কারন
পিচ্ছিল কর্দমাক্ত মাঠে দৌড়াতে গিয়ে সবাই দুচারটা আছাড়
খাই।এজন্য মজাটা একটু বেশিই।আমি যে দোকানটাতে বসে
আছি তার সামনেই খেলার মাঠ।মাঠের পশ্চিম পাশে ঈদগাহ।
ঐখানেই প্রথম দেখেছিলাম তাকে।নীল ফ্রক পরা টুকটুকি একটা
মেয়ে।প্রাণভরা উচ্ছালতা তার মধ্যে।দেখলেই প্রেমে পড়তে মন
চায়।কিন্তু আমার তা হল না।আমি তার প্রেমে পড়েছিলাম কিনা
তা সন্দেহাতীত ।বেশি গুরুত্ব দিলাম না।তবে কয়েকদিন পার
হতেই তার জন্য কেমন যেন হতে লাগল।আরও কয়েকদিন পর
সম্পর্ক হলো।বেশ চলছিল দিনক্ষণ।
কিন্তু সুখ বেশিদিন সইল না।খুব সম্ভব একুশদিনের মাথায় তার বিবাহ হয়ে গেল। (ইনবকসের মেসেজ চেক করলে এমনই একটা হিসাব পাই
আমি)জানতে পারলাম না।কয়েকদিনপর জেনেছিলাম বিয়ে হয়েছে।
ভেবেছিলাম ঘটনা ঐখানেই শেষ।তা হল না।ক্রমেই ঘটনা বাচ্চা
পাড়তে শুরু করল।ও আর শ্বশুর বাড়ি গেল না।মানে স্বামীর ঘর
করল না।মুখে একটাই কথা—আমি নিঝুমকে ছাড়া আর কাওকে
বিয়ে করব না।তবে আগে কেন করলি বিয়েটা? এখন কেন বলছিস?
তার পরিবারের সাথে আমারও পরিবারের সম্মানের টানাপোড়ন শুরু হল।
আমাকে দেখিয়ে শেষমেশ ডিভোর্স করিয়ে নিল।যাক,গলার কাটা নেমে গেল।
কাটাটা বিঁধেছিল ওর গলায়।ও আবারও স্কুলে ভর্তি হল।
পড়াশোনা শুরু করল।আমি ফোন দিই,ফোনে পাইনা।ভাল।
অনেক চেষ্টা করি ওর সাথে যোগাযোগ করার।কিন্তু কিছুতেই পারিনা।আমার মধ্যে একটা ব্যাপার কাজ করত।সেটা হল, সে যদি আমার জন্য এতটা
করতে পারে তাহলে তাকে ফেলে দেওয়া আমার ঠিক হবে না।
তাছাড়া ভালবাসার দিক দিয়ে তাকে পেতে আমি বদ্ধপরিকর
ছিলাম।আজ অনেকদিন তার সাথে যোগাযোগ নেই।সে কেমন
আছে জানিনা।প্রত্যেকটা মুহুর্তে তার কথা আজও মনে পড়ে।
বৃষ্টি থেমে গেছে।কিন্তু গাছের পানি পড়ছে টুপটুপ, টুপটুপ।বাড়ির
দিকে পা বাড়ালাম।চারিদিকের ছোটখাটো ডোবা, নালা ভরাট
হয়ে গেছে।পুকুরে ব্যাঙ ডাকতে শুরু করেছে। ঘ্যাঙরঘ্যাঙ
ঘ্যাঙরঘ্যাঙ।সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্যায়।মোবাইলটা হাতে নিয়ে
দেখি আননোন ন্মবার থেকে দুইটা মিসডকল। কলব্যাক করলাম।
সেই চেনা কণ্ঠ,সেই পরিচিত সুর।ওপাশ থেকে হ্যালো বলতেই
আমার বুঝতে বাকি রইল না।বুঝে গেলাম হারিয়ে ফেলা সেই পরম
আত্মীয়কে শুনছি।ভেবেছিলাম মুহুর্তেই তার গলা ভারী হয়ে
উঠবে তার।কিন্তু শেষ মুহুর্তে সে যা কিছু শোনাল আমায় তাতে
আমার কণ্ঠ ভারী হয়ে এল।বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম।কিছুই বলতে
পারলুম না।মাথার ভেতর চক্কর মেরে উঠল।এরপর কি হল জানি
না।যখন আমি চোখ মেললাম,তখন চারিপাশে অন্ধকার।বাইরে
থেকে ঝিঝি পোকার আওয়াজ আসছে।একটানা বিরক্তিকর
আওয়াজ করে যাচ্ছে পোকাগুলো।এভাবেই প্রথমে মনের ভেতর শূন্যতা
বাসা বেধেছিল।তারপর বেদনা।তারপর হাহাকার। এবং শেষবার
বেচে থাকার জন্য একটা সুকরুণ দীর্ঘশ্বাস।ভালবাসার দীর্ঘশ্বাস।
লেখকঃ নাজমুল ইসলাম
২৬ জুলাই ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস