আমার দুই মেয়ে ঈদের কোরবানির জন্য কেনা ছাগল ঘরে নিয়ে এসেছে। ঘরে না ঠিক, রুমে। ছাগলকে প্রথমে সেস্রায়ে আনতে হয়েছে লিফটে করে বাসায়... সে আসবেই না। ২ দিন পরে, ঈদের দিন সকালে তাকে সেস্রায়ে বের করতে হয়েছে বাসা থেকে... সে যাবেই না। কেনই বা যাবে, সে তো বাসায় মজা পেয়ে গেছে। আমি শিওর আর ৩/৪ দিন থাকলে আমার মেয়েরা তাকে পটি ট্রেইন করিয়ে দিতে পারত। সে গোসল করেছে বাথটাবে, আমার মেয়েদের সাথেই। পুরো বাসায় সে গলায় দড়ি ছাড়া ঘুরেছে।
ইচ্ছে হলেই ড্রয়েং রুমে যেয়ে পিপি করছে... তো ইচ্ছে হলে সোফার উপরে বসে পাতা চিবাচ্ছে। প্রথম প্রথম আমারই বিরক্ত লাগত... হয়ত খেতে বসেছি, সে খাবার টেবিলে আমার সামনে এসে করুন চেহারা করে তাকিয়ে আছে। একটু ভাত দিলাম... সে ভাতও খেলো। আলু দিলাম, তাও খেলো... লেবু চিপে দিয়ে ডাল দিয়ে ভাত দিলাম, তাও খেলো। ছোট মেয়ে ফান্টা দিলো, তাও খেলো। কাস্টারড, ডিমের হালুয়া, ফালুদা সবই তার প্রিয়।
ঈদের আগের দিন বাজার করতে বের হবো মেয়েদের নিয়ে... গেটের কাছে জুতা পড়তে এসে দেখি ছাগল করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। “বাবা পুরো বাসায় লেক্সাস একা কেমনে থাকবে?... ভয় পাবে তো” ও হ্যাঁ তার নাম লেক্সাস... কারণ বাসায় এসে প্রথম সে লেক্সাস বিস্কুটের কৌটা শেষ করেছে দেখে তার নাম দেয়া হয়েছে লেক্সাস। পরে দেখা গেলো সে সব খায়... তার নাম কাস্টারড দিলেও মানাত... পরে আর আলসেমি করে নাম চেইঞ্জ করা হয়নি।
যাই হোক, এখন আগোরা যাব ঈদের বাজার করতে, বাসায় লেক্সাস একা কেমনে থাকবে? ওকে গাড়িতে করে নিয়ে গেলাম। গাড়ি পার্ক করে নামতে যাব, মেয়ে বলছে, “বাবা পুরো গাড়িতে লেক্সাস একা কেমনে থাকবে?... ভয় পাবে তো” আমি আর লেক্সাস গাড়িতে বসে ছিলাম... সেও আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমিও তার দিকে। তার কোন ভ্রূক্ষেপ নেই। উল্টা গাড়ির টিস্যু পেপার বক্সের সব টিস্যু খেয়ে ফেলেছে।
ঈদের দিন সকালে আমার দুই মেয়ে তাদের নিজেদের বাথরুমে লেক্সাসকে গোসল দিলো... এখন নিচে নিয়ে যাওয়া হবে একে কোরবানির জন্য। আমার দুই মেয়ে সমানে কাঁদছে। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে লেক্সাস আমার নতুন কেনা বাটার জুতা খেয়ে ফেলতে নিলো। কোন মতে কোলে করে ওকে লিফটে উঠানো হলো। দুই মেয়ে বারান্দা দিয়ে তাকিয়ে আছে রাস্তার দিকে।
হুজুর আসলো... কসাই আমার হাত থেকে তাকে নিলো। লেক্সাস আমার দিকে তাকানোরও সুযোগ পায়নি... মুহূর্তেই কসাই তাকে উল্টে ফেললো। হুজুর আমার দিকে তাকিয়ে বলছে ‘নাম দেন, কি নামে জবেহ হবে?’ হুজুরের ছুরি লেক্সাসেস গলা বরাবর অপেক্ষা করছে। বারান্দা থেকে দুই মেয়ের চিৎকার শুনছি, “বাবা প্লিজ বাবা প্লিজ”।
(প্রতিটা পশুর এরকম কোন না কোন গল্প থাকে শিওর... প্রত্যেক গরুই কারো না কারো পালা গরু তো বটেই... কেউ না কেউ থাকবেই সেই পশুটার পিছে, যার সেই পশুর দড়িটা ছেড়ে দিতে একটু হলেও বুক কাঁপবে। এ বছর প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা খরচ করে ৯০ লাখ পশুকে কোরবানি দেয়া হয়েছে। ... এদের মধ্যে, আমাদের আশেপাশেরই কয়জনের কোরবানি কবুল হয়েছে আই ডাউট, আই স্ট্রংলি ডাউট। দুর্নীতির টাকায় কোরবানি দেয়াও তো এক ধরনের দুর্নীতি।
সুতরাং প্লীজ সামনের ঈদ থেকে ঘুষ/দুর্নীতির টাকা দিয়ে পশু কিনে কেউ কোরবানি অন্তত দিবেন না প্লীজ। বিশ্বাস রাখেন; এতে, আশেপাশের কেউ খুশি না হলেও... উপরওয়ালা অন্তত খুশি হবে আপনার উপর, এই একটা ভালো কাজ অন্তত করলেন। ‘বাবা প্লীজ বাবা প্লীজ’ শুনতে থাকার পরেও, “করেন জবাই” বলতে কলিজা লাগে।
সেই কলিজাটা থাকলেই তবে প্লিজ কোরবানি করতে আসবেন... তা না হলে, অন্য যে কোন হত্যাকারীর মত, আপনিও একজন হত্যাকারী... ধর্ম তো আপনার জন্য জাস্ট উসিলা, টাকা উড়িয়ে লোক দেখিয়ে করা এই মার্ডার কেইসটা ঢাকার)
- আরিফ আর হোসেন এর ফেসবুক থেকে