ক্লাস ফোরের কথা। একদিন আমি আর আমার বন্ধু মহিউদ্দিন পেছনের বেঞ্চে বসে ক্লাস করছিলাম। সেদিন ইংরেজি ক্লাসে হোমওয়ার্ক দিয়েছিলেন শারমিন আপা। মহিউদ্দিন সেদিন কোনো এক কারণে হোমওয়ার্ক করেনি। এমনিতেই ছেলেটা খুব ভদ্র আর ভীতু।
শারমিন আপা প্রথম বেঞ্চ থেকে হোমওয়ার্ক দেখছেন। যারা হোমওয়ার্ক করেছে তারা তো ভালোই, কিন্তু যারা আনেনি তাদের খুব মারতেন। কিন্তু মারার থেকে লজ্জার ছিল যে, ক্লাসের মেয়েগুলোকে দিয়ে কান মলা দিতেন। আর মহিউদ্দিনের মতো ভীতু আর লাজুক ছেলের পক্ষে এই কান মলা সহ্য করা সম্ভব ছিল না।
শেষ পর্যন্ত ম্যাডাম যখন প্রায় আমাদের বেঞ্চের কাছে চলে আসলেন তখন মহিউদ্দিন ভয়ে রীতিমত কাঁপছিল। আর সেই মুহূর্তেই কেলেঙ্কারিটা ঘটে গেলো। দেখলাম ওর খাকি কালারের হাফ প্যান্ট ভিজে গেছে। শুধু ভিজেই যায়নি, রীতিমত ওর শিসু ক্লাসের মেঝেতে গড়িয়ে পড়েছে।
ওর এই শিসু করার ঘটনা যদি ক্লাসে ফ্ল্যাশ হয় তবে ওর জন্য এর থেকে আর লজ্জার কিছু হবে না। আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আগাম লজ্জার পরিণতিতে ওর অবস্থা বুঝার চেষ্টা করছিলাম । আর ভাবছিলাম আমি ওর জন্য কি করতে পারি? কেননা ক্লাস ফোরে থাকার সময় ওর থেকে ভালো আমার আর কোনো বন্ধু ছিল না।
খুব চটপট আমার মাথায় একটা বুদ্ধি চলে আসে। আমি আমার বোতলের খাবার পানির প্রায় পুরোটাই ওর প্যান্টের উপর ঢেলে দেই। শিসু করার ফলে ওর প্যান্টের ভেজা জায়গার পুরোটাই আমি ভিজিয়ে দেই যাতে সবাই বুঝে যে, ও পানি খেতে গিয়ে ভিজিয়ে ফেলেছে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমার পানি ঢালার দৃশ্য ম্যাডাম দেখে ফেলেন। আর যায় কই? ম্যাডাম আমাকে দাঁড় করালেন, আচ্ছারকম মার দিলেন, আর মহিউদ্দিনকে টিস্যু দিলেন প্যান্ট মুছবার জন্য।
ওইদিন আর মহিউদ্দিনের হোমওয়ার্ক দেখে নাই। ও বেঁচে গেলো আর আমি ধরা খেলাম। ক্লাস ফাইভে মহিউদ্দিন স্কুল চেঞ্জ করে ফেলে। যতোটুকু মনে আছে ওরা ওর ফ্যামিলি নিয়ে রাজশাহী চলে আসে। তখন ওর ফোন নম্বরটা রেখে দিতে পারিনি। ও যে চলে যাবে তাও আমি জানতাম না। শেষ দেখাতে কি বলেছিলাম তাও মনে নেই।
আজ প্রায় ১০ বছর আমি মহিউদ্দিনকে দেখিনি, কথা বলিনি, জানিনা ও দেখতে কেমন হয়েছে? ও বেঁচে আছে কিনা সেটাই বা কে জানে? যদি বেঁচে থাকে তবে কি আমাকে মনে আছে?
মাঝে মাঝে কিছু কিছু স্মৃতি তার অস্তিত্ব এতো গাঢ়ভাবে মনে রেখে যায় যে, সময় কখনো তা বিলীন করতে পারে না।
লেখক: গরুর বেপারী (ছদ্মনাম)