শুক্রবারে ধানমন্ডি- ২৭ এ চা খাচ্ছিলাম। আমার পাশে দাঁড়িয়ে তিনিও চায়ে চুমুক দিয়েছেন। কেনো জানি খটকা লাগলো। নিজ থেকেই আগ বাড়িয়ে পরিচিত হলাম। খানিকটা ইতস্তত তিনি। এ কথা, সে কথার সুত্র ধরে তার অনেক কথাই শুনলাম।
মোহাম্মদ ফারুকের বাড়ি দিনাজপুরের বিরামপুরে। নানা কারণে পড়াশোনা এগোয়নি। তবে জানার ইচ্ছা প্রবল। যেখানে যা পান, পড়েন। অনলাইনে কিংবা অফলাইনে সবখানে পড়েন। নতুন কিছু করার ইচ্ছা তার। বিরামপুরের মানুষকে 'ওয়ান স্টপ' সেবা দিতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন বিরামপুর ইনফোরমেশন ম্যানেজমেন্ট সার্ভার [ BIMS24 ]. সব ধরনের তথ্য যেনো সহজে মানুষ পায়, সেজন্য এই উদ্যোগ। আর সংসার চালানোর জন্য 'হাউজ হোল্ড ওয়ারিং' এর কাজ করেন তিনি। সেজন্য একটা ছোট খাটো গ্রুপও গড়ে তুলেছেন। তার ভাষ্যমতে, ওখানকার সবগুলো লাক্সারি বাড়িগুলোর কাজ তার হাতে করা।
কর্মীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে মফস্বলেও হেলমেট, বুট জুতা থেকে শুরু করে অন্যান্য সেফটি ইকুইপমেন্ট দিয়েছেন ফারুক। মফস্বলে এমন আয়োজন করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। সবার কাছে পরিচিতি পেয়েছেন এক নামে।
অসম্ভব স্বপ্নবাজ ফারুক৷ চমকে দেয়ার মতো কিছু করার স্বপ্নে বিভোর। আমিও চমকে যাওয়ার মতোই তার কথা শুনছিলাম। ফারুক বলেই যাচ্ছেন। একটু পরে মোবাইল বের করে ফেসবুকে নিজের ছবি আর কাজের ছবিও দেখালেন প্রবল আগ্রহে। আরো আরো অনেক কথা...।
সেই ফারুক এখন রিকশা চালান। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে প্যাডেলে পা ফারুকের। তিনদিন হলো এলেন ঢাকায়। ইচ্ছা, সামান্য কিছু টাকা জমিয়ে নিজের স্বপ্নের চাষাবাদ করবেন বিরামপুরে গিয়ে।
ফারুকের সাথে গল্প করতে গিয়ে কয়েক কাপ চা শেষ হলো, গল্প ফুরায় না। গড়গড় করে স্বপ্নের কথাগুলো শুনিয়েই যাচ্ছে। শেষ কথাটা ছিলো এমন- ভাই, আমি রিকশা বেশিদিন চালাবো না। কিছু টাকা দরকার। সেগুলো জোগাড় করে ফিরে যাবো বিরামপুরে। আমার স্বপ্নগুলো ওখানে বড় হচ্ছে। বিরামপুরের সব সেবা যেনো মানুষ আমার কাছেই পায়। কিছু একটা করে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।'
হাত মিলিয়ে ফারুক চলে গেলো। পেছন থেকে দেখে গেলাম, প্যাডেলে এক স্বপ্নবাজ যুবকের আনাড়ি পা...।
- মুনিফ এর ফেসবুক থেকে