মাঠের ঘটনা এবং মাশরাফির সামান্য কথা! ঘটনাটি অনেকের মনে থাকার কথা, ২০১৭ বিপিএল রংপুর রাইডার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কোয়ালিফাইং ম্যাচ :
বৃষ্টি যখন নামে তখন আমার ঘড়িতে ৬.৪০ মিনিট। ৬ টায় শুরু হওয়া খেলা স্বাভাবিক নিয়মে ৯.২০ মিনিটে শেষ হবার কথা। বৃষ্টি এই থামে তো আবার শুরু হয়।
বসেছিলাম রংপুরের ড্রেসিং রুমের সাথেই। আশেপাশে বসুন্ধরা গ্রুপের লোকজন, যাদের অনেকের সাথে ওয়াকিটকি, মোবাইলে ম্যানেজার মিঠুর সাথে একজনের কথা হচ্ছিল। উনি জানালেন ১০ মিনিটের ভেতর বৃষ্টি না থামলে খেলা বাতিল হবে তবে রিজার্ভ ডে নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। তখন ৮.৪০ বাজে। নূন্যতম ৫ ওভারের খেলা হলেও রংপুরের আর ব্যাট করার সুযোগ নেই, সরাসরি কুমিল্লা ব্যাট করবে!
এই পর্যায়ে রংপুরের মন খারাপ ছিলো খেলা হয় কি-না! আর কুমিল্লা খুশি। ড্রামাটিকালি বৃষ্টি থামলো। কিন্তু তখন সম্ভবত খেলা শুরু করার কার্টেল টাইম শেষ। এরই ভেতর মাঠ প্রস্তুত! সবাই প্রস্তুত কিন্তু তামিম রাজি না খেলতে। বোর্ডের সব কর্মকর্তা, বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল সবাই মাঠে, তামিম সবার সাথে বেশ বিরক্ত হয়েই কথা বলছিলেন। মাশরাফি চুপচাপ দাড়ানো, তামিমকে ঘিরে জটলা আরো গভীর হচ্ছে। রংপুরের এক কর্মকর্তা গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে, তাকে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে? উনি জানালেন ৫ ওভারে ৬২ রানের টার্গেট দেয়া হয়েছে যেটা কুমিল্লা মেনে নিচ্ছেনা।
বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে খেলা হবে, যদিও সময় শেষ। এরকম ঘরোয়া ক্রিকেটে হতেই পারে। যদি ভুল না করি ২০১৩ সালে চিটাগাং বনাম সিলেটের প্লে অফের ম্যাচ রিজার্ভ ডে না থাকার পরেও রিজার্ভ ডে বানিয়ে পরের দিন হয়েছিলো। তো যাইহোক, খেলা হবে এই সিদ্ধান্ত শুনে রংপুরের প্লেয়ার, কর্মকর্তা সবাই বিরাট হাততালি আর উচ্ছ্বাস! তামিম তখনো তর্ক বিতর্ক চালিয়ে যাচ্ছেন। রংপুরের প্লেয়াররা ফিল্ডিং করার জন্য ওয়ার্ম আপ শুরু করেছে কিন্তু কুমিল্লা ব্যাটিং করার জন্য রাজি না, সব প্লেয়ার জটলা করে মাঠের ভেতর দাড়িয়ে।
এই পর্যায়ে দর্শকরা বেশ বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলো কুমিল্লার উপর। “বৃষ্টি নাই, খেলা চাই” শ্লোগান পুরা স্টেডিয়ামে। হুম তামিমের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কটুক্তিও চলছিলো। প্রথমে কুমিল্লার ফ্যানরা চেয়েছিলো খেলা না হোক, কিন্তু মাঠ প্রস্তুত, আম্পায়ার প্রস্তুত, বোর্ড কর্মকর্তারা মাঠে তামিমকে বুঝাচ্ছে এইরকম অবস্থায় মাঠের ভেতরই তামিম আর মাশরাফির ভেতর হাত নেড়ে নেড়ে কথা হচ্ছিলো, হাত নাড়ানো দেখেই আঁচ করা যাচ্ছিলো মাশরাফি তামিমকে কিছু বুঝাচ্ছেন, এক পর্যায়ে ম্যাশ গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের দর্শকদের দিকে আঙুল দিয়ে দেখালেন, পরে দুইজনই দর্শকদের দিকে হাত দেখিয়ে কিছু বললেন একে অপরকে। এই পর্যায়ে কুমিল্লার ফ্যানরাও দেখলাম চিল্লাচ্ছে “তামিম ভাই খেলেন খেলেন… ” গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের সামনেই সব। ক্লিয়ার সব বোঝা যায়।
এক পর্যায়ে মাশরাফি, তামিম আর দুইজন বোর্ড অফিশিয়াল ম্যাচ অফিশিয়ালদের রুমে যাবার করিডোরে আসলেন, বোর্ডের ওই দুইজন দুই অধিনায়কের সাথে আলাদা কথা বলেন। আমি মাত্র কয়েক হাত দূরে! সব স্পষ্ট শুনলাম। মাশরাফি বললেন “ভাই আমারতো কোন সমস্যা নাই, আমার টিম রেডি, এখন বলেন, কালকে বলেন আমার কমপ্লেইন নাই”।
তামিম বললেন “বিষয়টা আমার একার না….(কিছু অংশ বুঝিনাই)। এভাবে কি চেজ করা যায়? (৫ ওভারে ৬২)।
বোর্ডের একজন বললেন তাহলে আর কি, ডিসিশন হয়ে গেলো, কালকে খেলা হবে। তামিম অবশ্যই খুশিনা, তবে মেনে নিলেন যা বুঝলাম। দুই অধিনায়ক হাত মেলালেন, মাশরাফি ওই অফিসারের সাথে কোলাকুলি করলেন।
এর আগে মজা পেয়েছি একটা বিষয়ে, মাঠে মাশরাফির সাথে কথা বলে তামিম এগিয়ে যান টম মুডির দিকে, কিছু একটা বলতে চাইতেই মুডি তামিমকে থামিয়ে ব্যাটিং স্টান্স দেখালেন, এক পা সামনে নিয়ে শ্যাডো একটা শট দেখিয়ে তামিমকে কিছু বললেন, আর তামিম কি বলতে আসছিলেন সেটা বাদ দিয়ে নিজেও দেখালেন শ্যাডো করে শটটা সে কিভাবে কোথায় খেলতে চেয়েছিলো! তারপর হাসাহাসি! যাস্ট সিস্টেমে তামিমের সাথে ম্যাচ নিয়ে কথাটা এড়িয়ে গেলেন!
তারপর মাইকে ঘোষনা আসলো, ম্যাচ কালকে হবে। সব দর্শক বেরিয়ে গেলো। তামিম আর মাশরাফি তখন গৌতমের সাথে ইন্টারভিউ দিচ্ছে। সেটা শেষে ম্যাশ রংপুরের ড্রেসিং রুমের দিকে আসলেন, নীচে নেমে হাত বাড়িয়ে ডাক দিলাম “মাশরাফি ভাই” …. হেসে এগিয়ে আসলেন, পাঁচ ছয় জন ছিলাম, সবার সাথে হাত মেলালেন। বললাম ভাই কালকে জিতবেন ইনশাআল্লাহ! বস বললেন “আমাদের জন্য দোয়া করবেন, জেতার জন্যেই সবসময় খেলি। আপনারাও অনেক কষ্ট করে দুই ঘন্টা বসেছিলেন….দোয়া করবেন বাংলাদেশ দলের জন্যেও”।
সামান্য কথা, হয়তো ৩০ সেকেন্ড, কিন্তু মনটা ভরে গিয়েছে। প্রতিবারই মুগ্ধ হই। আগেও যখন কথা হয়েছে তখনো হয়েছি।
স্বাভাবিক, তামিম ভাইয়ের মন মেজাজ খারাপ। অনেক ডেকেও কাছে আনা গেলো না, হাত নেড়ে সরাসরি ড্রেসিং রুমে।
যাইহোক খেলা বাতিল না করায় বিসিবিকে ধন্যবাদ। হাজার হাজার দর্শক চেয়েছে খেলা হোক। ধন্যবাদ তামিম ভাইকেও, কারন শেষ পর্যন্ত মেনে নিয়েছেন।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)