অপ্রকাশিত ডায়েরী
পাঠকই লেখক ডেস্ক : বহুদিন ধরে এক অজানা হতাশা তাড়া করে বেড়াচ্ছে আমায়। তাই সেদিন মাকে বলেছিলাম। মা তোমার আল্লাহকে বল আমাকে মানসিক কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে। সত্যি মা আমি বাঁচতে চাই। আর্থিক প্রতিবন্ধকতা আর মানসিক কষ্টে বিভোর হয়ে দিব্রি নাকানি-চুবানি খাচ্ছি এই অসভ্য শহরটায়। ভাবছেন একি বলছি আমি। পাগল নই তো? মা কেন তার আল্লাহকে বলতে যাবে আমার কথা। নাহ! আমি একদমই পাগল নই। মাকে বিষয় গুলো বলার অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত একটি কারণ ছিল। সেই চোট্ট বেলায় একেবারে বুঝ হওয়ার পর থেকে দেখি মা অত্যান্ত বিনয়ের সহিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ছাড়াও সকাল-রাতে রোজ কোরআন তেলোয়াত করে। তাই মনের ভাবনা হয়তো ‘মা’তেই সমস্যার সমাধান।
আসলেই, কত বসন্ত এলো গেলো। দাদা মারা গেল। ভাইটা বিয়ে করেছে। দাদি-নানি বর্তমানে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। যে কোন সময় খবর আসতে পারে তারা আর পৃথিবীতে নেই। ভাইটা বিয়ের পর মাকে রেখে শহরে এসে নতুন ভাবিকে নিয়ে যতটা আনন্দে দিন কাটাচ্ছে দাদি-নানি আর বৃদ্ধ বাবাটাও অসুখ-বিসুখ নিয়ে ততটা কষ্টে আছে। সময়ের পালাবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মহল্লার স্কুল পড়ুয়া তিন্নি-জয়ীতারা এখন পরের বাড়িতে। হাবাগোবা ছোট্ট তুষারও ভীষণ পেকেছে। সময়ের উথান-পতনের সঙ্গে সঙ্গে কারো মনে ‘রঙ’ ধরেছে আবার কারো মনে ‘জং’।
বর্তমান স্বার্থপর সভ্যতায় সবার মাঝেই খুঁজে পাচ্ছি আমিত্বটা। সবাই এই ‘আমি’ কে নিয়েই ভীষণ ব্যস্ত। অন্যকেও নিয়ে ভাবার যেন কারোরই বিন্দু মাত্র সময় নেই। তাই স্বার্থপরের মত আমারও প্রশ্ন কেমন আছি ‘আমি’? কেমনইবা পরিবর্তন হয়েছে এই আমার...?
প্রশ্নটা নিতান্তই বেখাপ্পা। কেমন জানি স্বার্থপরতার ইঙ্গিত! তারপরও বলবো। বলতে চাই। স্বার্থপরদের সমাজে মিশে দিন দিন আমিও স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছি। অনেকটা পরিবর্তনও এসেছে আমার মাঝে। তবে কি যেন কি স্বার্থের আশায় সারাক্ষণ ছুটছি তো ছুটছিই। কোথায় ছুটছি। কি স্বার্থের উদ্দেশ্যে ছুটছি সেটি আদৌ জানা হয়নি।
অজানা গন্তব্যে পৌঁছে সাফল্য জয়ের লক্ষ্যে সেই পাঁচ বছর আগে ঢাকায় আসি। তখন থেকেই পালবিহীন নৌকার মত ছুটে যাচ্ছি। তবে আজও দেখা পায়নি কুলের সন্ধান। প্রতিদিনই অনেক আশা-ভরসা আর এক বুক স্বপ্ন নিয়ে অনেক ভোরে বাসা থেকে বের হই। আর সন্ধ্যে চরম হতাশা নিয়ে নিয়ন বাতির আবছা আলোয় বাসায় ফিরি। এইতো এভাবেই যাচ্ছে জীবন, জীবনের নিয়মে। পড়াশুনার পাশাপাশি একটি পত্রিকা অফিসে কিছু মাইনের বিনিময়ে কাজ করার সুবাধে হয়তোবা জং ধরা মনে এখনো কিছুটা রঙের আবাস আছে। এখনো ভাবি তা না হলে কোথায় স্থান পেতাম এই স্বার্থপর শহরটায়? নুন আনতে পানতা পুরায়, সেমিস্টার ফি’র ঘানি আর মেস খরচ চালাতে গিয়ে যাচ্ছেতাই অবস্থা। তার ওপর আবার বড় বড় স্বপ্ন। অফিসে এসে প্রতিদিন একবারের জন্য হলেও ভাবি কত মানুষের জীবনী নিয়েও তো ফিচার লেখি। সমাজের সমস্যার কথা তুলে ধরি। অনেক জোড়া তালি লাগিয়ে সত্যটা তুলে ধরার চেষ্টা করি। কিন্তু আমার মত ঠক ঠক করে খুড়িয়ে চলা সাংবাদিকদের মনের রক্তক্ষরন আর বিয়োগ ব্যাথা কি আদৌ কেউ জানে?
মাকে দেয়া কথা আর তোমাকে দেখানো স্বপ্ন আজ আমায় কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। দুপায়ে শিকল লাগানো। তার পরও ছুটছি স্বপ্ন জয়ে। জানি না চলার পথটা কখন জানি আবার বন্ধ হয়ে যায় স্বার্থপরদের রোষানলে পড়ে।
মনের শত কষ্ট আর বিয়োগ ব্যাথা গুলো হয়তো এভাবে হারিয়ে যাবে কালের গহ্বরে। সময় ছুটে চলবে সময়ের গতিতে। কিন্তু আমার মনের কথা গুলো অপ্রাকাশিতই রয়ে যাবে।
লেখক: সাংবাদিক ও অধ্যয়ণরত মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (সাংবাদিকতা ও গণসংযোগ বিভাগ)। ই-মেইল:
[email protected] । ফোনঃ ০১৭৬৮৫৫৯০৬১
০৭ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/আরএ
�