শীতের পিঠার স্বাদ গ্রহণে ব্যস্ত নগরবাসী
পাঠকই লেখকঃ হালকা কুয়াশা আর ঠান্ডা হাওয়ার মধ্যদিয়ে আগমন ঘটেছে এ বছর আগ্রহায়ণ-পৌষের শীত। গাছে পাতা ঝরে নতুন পাতা গজানো, বাহারি রঙের ফুল, গাছে গাছে নতুন ফুলের কলি, পুরো প্রকৃতিটাই সাজতে শুরু করছে নতুন সাজে। চারদিকে পরিষ্কার পরিছন্নতা, পোশাক-আশাকে দেখা যাচ্ছে বৈচিত্রতা। আর এই শীতকে বরণ করে এবং কিছুটা বেশি মুনাফার আশায় নিম্ম আয়ের ব্যবসায়ীরা পাল্টিয়েছে তাদের ব্যবসায়ের ধরণ । বাহারি পসরা সাজিয়ে বাজার, ফুটপাত, শহরের অলি-গলি, রাস্তা-ঘাট ও স্কুল-কলেজের মাঠের কোণে জমিয়ে তুলেছে ঋতুনির্ভর ভ্রামমাণ শীতের পিঠা বিক্রির ব্যবসা।
নিজের স্থায়ী পেশার পাশাপাশি অনেককে দেখা গেছে মৌসুমী এই ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়তে। তাদের কল্যাণে এ ঢাকাতে শীতে চলছে পিঠা বিক্রির ধূম। তেমন একটা পুঁজি না লাগায় সহজেই এ ব্যবসা শুরু করছে নিম্ম আয়ের ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা। জ্বালানি হিসেবে খড়ি, অকেজো কাঠের টুকরা, কিংবা গাছের শুকনা ডাল ব্যবহার করেছেন তারা। কিছু গুড়, আটা, নারিকেল এবং পাচঁমিশালী বর্তা নিয়ে খুলে বসেছেন এ মৌসুমী ব্যবসায়।
শীতের মৌসুমে গ্রামের বাড়িতে নানা রকম পিঠার আয়োজন চললেও রাজধানীতে বসবাসকারী স্থায়ী-অস্থায়ী বাসিন্দারা তেমন সুযোগ পায় না। তাদের কিছুটা আয়েশ মেটানোর নিমিত্তে প্রতি বছরই অপ্রাণ চেষ্টা করে থাকেন নিম্ন আয়ের ভ্রাম্যমাণ পিঠা ব্যবসায়ীরা। সন্ধ্যা নামলেই ব্যস্ত নগরবাসী তাদের বানানো শীতের পিঠার স্বাদ খোঁজেন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে। মতিঝিলি আইডিয়াল স্কুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ কেন্দ্র টিএসসি, ফার্মগেট এর আনন্দ সিনেমা হলের পাশে, মহাখালী কাচাঁবাজারের আশ-পাশ,মিরপুর-১ ও ১০ অর্থাৎ জনবহুল জায়গা কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ভ্রামমাণ শীতের পিঠা ব্যবসা গুলো। পেশাগত, জাতগত এবং কি উঁচু নিচুর বৈষম্য দেখা দিত না কারোরই, ধনী-গরিব কিংবা খেটে খাওয়া রিক্সাওয়ালার পাশে দাঁড়িয়ে পিঠার স্বাদ নিতে আপত্তি করতে দেখা যাচ্ছে না কাউকেই।
জীবিকার তাগিদে এবং পরিবারকে কিছুটা সচল করতে রাজধানীতে যারা পিঠার ব্যবসা করছেন তাদেরই একজন জামাল হোসেন। শীতের আগমনের শুরুতেই রাজধানীর মিরপুর-১ এ শীতের পিঠা বিক্রি করছেন তিনি।
শীতের পিঠার স্বাদ নিতে নিতে তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘জামাল হোসেনের বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনাতে। তার মূল ব্যবসায় হচ্ছে হেটে হেটে পান সিগারেটের ব্যবসায়। জামাল হোসেন প্রতি বছরই শীতের দিনে বাড়তি আর্থিক মুনাফার আশায় সাইড বিজনেজ হিসেবে পিঠা বিক্রির ব্যবসা করে থাকেন এবং এই ব্যবসা থেকে দিনে তিন থেকে চারশত টাকা আয় করেন তিনি। পিঠাভেদে তার পিঠার দাম ৫টাকা থেকে ১০ টাকা।
রাজধানীতে পুরুষদের পাশাপাশি এ ব্যবসায় নারীদেরও অংশগ্রণের বিষয়টি ভালোভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাজধানীর মহাখালীর ঢাকা ব্যাংকের পাশে এক নারী পিঠা বিক্রেতার দোকানে প্রায়ই ভীড় জমান পিঠাপ্রেমীরা।
জামাল হোসেনদের মত নগরীতে মৌসুমী পিঠা ব্যবসায়ীর সংখ্যা ঠিক কত তার সঠিক হিসেব নেই। এ সব ভ্রামমাণ ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা প্রতি বছরই চেষ্টা চালিয়ে যান ব্যস্ত রাজধানীবাসীদেরকে কিছুটা হলেও বাড়িতে চলা পিঠা উৎসবের আনন্দটুকু ভুলিয়ে রাখতে। রাজধানীতে এমন অনেক পেশাজীবি আছে যারা কাজের চাপ আর ব্যস্ততার গ্রামের বাড়িতে যেতে পারে না ঠিকমত। তারা সামন্যতম হলেও রাস্তার পাশের ভ্রামমাণ পিঠা দোকান থেকে পিঠার স্বাদ গ্রহন করে ভুলতে সক্ষম হয় সেই দুঃখের কথা।
লেখক: সাংবাদিক ও অধ্যয়ণরত মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিস ডিপার্টমেন্ট)।ই-মেইল:
[email protected]।ফোনঃ০১৬৮৩৩১১৮১৫০৭ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/আরএ