বিচিত্র জগৎ ডেস্ক: যেন সাক্ষাৎ যমপুরী। সরাসরি মৃত্যু নেই, কিন্তু মৃত্যুর চেয়েও ভয়ঙ্কর শাস্তি আছে। অনেকটা রূপকথার গল্পের মতো, সুন্দর অথচ ভয়ঙ্কর। তানজানিয়ার এই হ্রদটি এখনও রহস্যময়। গেলেই দেখা যাবে হ্রদের ধারে সারে সারে পড়ে রয়েছে পাথরের পশুপাখির মূর্তি। দেখে মনে হবে কোনও ভাস্করের নিখুঁত ভাস্কর্য। কোনও খামতি নেই, সযত্নে তৈরি করা হয়েছে বাদুড়, মাছরাঙা, রাজহাঁস, ঈগলের মতো অনেক নাম না জানা প্রাণীর মূর্তি। অবশ্য, মূর্তি বলা ভুল হবে, যেন জীবন্ত জীবাশ্ম, আবার মমিও বলা যায়।
কথা হচ্ছে তানজানিয়ার নেট্রন হ্রদের। এই হ্রদে কোনও প্রাণী গেলে, তাকে বেঁচে ফিরতে হয় না। তার মানে এই নয়, যে সব প্রাণীর সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হচ্ছে। পাখিগুলি হ্রদের মধ্যে নেমে পড়লেই বিপদ। একে তো ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। এক মুহূর্ত ওই হ্রদে তিষ্ঠোনোর জো নেই। কোনওক্রমে তাপমাত্রার হাত থেকে বাঁচলে, সে বাঁচা হবে মৃত্যুর থেকেও ভয়ঙ্কর। ডাঙায় উঠেও রক্ষে নেই। ধীরে ধীরে পাথরের মতো হয়ে যাবে শরীর। পুরাণের অহল্যার মতোই, পড়ে থাকতে হবে প্রস্তর মূর্তি হয়ে।
কিন্তু ভয়ঙ্কর এই বিভীষিকার কারণ কী? মূলত জলের ক্ষারধর্মের জন্য হয় এই সমস্যা। অগভীর নেট্রন হ্রদটি দৈর্ঘে ৫৭ কিমি ও প্রস্থে ২২ কিমি। জলের গভীরতা মাত্র ১০ ফুট। প্রচুর সোডিয়াম ও কার্বোনেট যুক্ত ট্র্যাকাইট লাভা দিয়ে বহুকাল আগে তৈরি হয়েছে নেট্রন হ্রদের তলদেশ। যার ফলে, উত্তাপ সবসময় ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে থাকে।
বেশি তাপমাত্রার ফলে, হ্রদের জল দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে যায়। তাঁর পরিবর্তে পড়ে থাকে লাভা, যা জলের মতোই তরল। এদিকে, সোডিয়াম এবং কার্বনেটের ক্ষারধর্মের জন্য হ্রদে জন্ম নেই সায়ানোব্যাকটেরিয়া নামের অণুজীব। এদের শরীরে আবার লাল রঞ্জক থাকে। ফলে দূর থেকে লেকের জল মনে হয় লাল রঙের। লেকের এই লাল রংই আকৃষ্ট করে পাখিগুলিকে।