জুবায়ের রাসেল : রাজধানীতে পৌষ মাস জুড়ে শীতের তেমন একটা প্রাদুর্ভাব না থাকলেও মাঘ মাস শুরুর পরপরই শীত যেন জেঁকে বসেছে। হাড়কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে ঘর থেকে বের হওয়াটাই যেন এখন দায়। তবুও রাজধানীর কর্মব্যস্ত মানুষগুলো জীবনের ডাকে নৃত্য দিন এর মধ্যেই বের হয়ে ছুটোছুটি শুরু করে। কেউ অফিসে যায়, কেউ স্কুলে কেউবা দুঃখের সাগরে জীবন তরী বাইতে।
রাজধানীর মানুষগুলো এতো ব্যস্ত যে অন্য কোন দিকে তাকানোর সময়টুকু পর্যন্ত তাদের কাছে নেই। তবে ঢাকাবাসী নৃত্য দিন তাদের কর্মব্যস্ত জীবনের একটা সময় যানজটে আটকা পড়ে অতিষ্ঠ হওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা কিন্তু ঠিকই অর্জন করে।
বুধবার আমিও অন্যদশজনের মতো এই তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। সেদিন যানজটে বিরক্ত না হলেও আপ্লুত হয়েছি ছোট্ট একটি শিশুর কথা শুনে। তীব্র যানজটে সবাই যখন ত্যক্ত বিরক্ত, ঠিক সে সময়টি কারো কারো জীবনের জন্য হয়তো আর্শিবাদ।
যানজটে সবাই যখন অতিষ্ঠ ঠিক সেই মুহূর্তে আমার বাসের জানালায় একটি শিশু এসে হাজির। এক হাতে গোলাপ অন্য হাতে রজনীগন্ধা। আর গলায় ঝুলানো সাদা শিউলির মালা। জানালা দিয়ে তার দিকে তাকাতেই ছেলেটা বলে উঠল ‘স্যার একটা ফুল নেন না, সারাদিন কিছু খায়নি।’
ঘড়িতে তখন সোয়া একটা। যানজটে পরে আমিও তার সঙ্গে কথা বলতে শুরু করলাম। কোথায় থাকে, বাবা-মা আছে কি না-এই সব আরকি। কথা শেষ না হতেই যানজট থেকে মুক্ত হলাম। ছেড়ে দিল
আমাদের বাস। কিন্তু ছেলেটি না খেয়ে আছে, তাই ফুল না নিয়েই তার দিকে তড়িঘড়ি করে তাকে ২০ টাকার একটা নোট ছুড়ে দিলাম। পরক্ষণে গাড়িতে বসে বসে আমি ভাবছিলাম এই টুকু একটা শিশু দুপুর গড়িয়ে চললো এখন পর্যন্ত সে নাস্তা পর্যন্ত খায়নি! নাস্তা খাবে কি করে আজ যে তার ফুলই বিক্রি হয়নি। এদের জন্য মনে হয় প্রতিটি যানজট কতই না আর্শিবাদ।
রাজধানীতে ওই শিশুটির মত শত শত শিশু জীবনযাপন করছে তা আমাদের চিন্তার বাইরে গিয়ে। শুধু রাজধানী নয় এমন শিশু বাংলাদেশের আনাচে কানাচেও হয়তো আছে। সব শিশুর হিসাবটা আমার কাছে নেই, সেই সংখ্যাটা হয়তো কয়েক লাখ পেরিয়েও যেতে পারে।
কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো এই শিশুদের হাতে এখনতো বই থাকার কথা, স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করার কথা। কিংবা স্কুল থেকে ফিরে সারা বিকেলে খেলাধূলা করে সন্ধ্যা পেরিয়ে যাওয়ার পর মায়ের বকুনি খাওয়ার কথা। তাদের জীবনটা তেমন না হয়ে কেন এমন হলো? কে দেবে আমার মনের মধ্যে উদিত এই প্রশ্নের জবাব?
২১ জানুয়ারি ২০১৬/এমটি নিউজ২৪ ডটকম/জুবায়ের রাসেল