পাঠকই লেখক ডেস্ক: আজ মুমুর বাসর রাত, পারিবারিকভাবেই ওর বিয়ে হয়েছে । ও গুটিশুটি মেরে খাটের মাঝখানে বসে আছে। এইমাত্র ওর বর রিয়াদ রুমে প্রবেশ করলো।
- কেমন আছ মুমু?
- দেখুন আমি আপনাকে বিয়ের আগেই সব কিছু বলতে চেয়েছি, কিন্তু আপনি আমাকে বলার কোনো সুযোগ দেননি।
- ঠিক, কিন্তু আমি বলেছিলাম বাসর রাতে সব শুনবো। এখন বলো তোমার কি সেই জমে থাকা কথা ।
- আমি জানিনা আমার সব কথা শোনার পর আপনি আমার দিকে তাকাতে পারবেন কিনা ।
- আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারো..
মুমু ফিরে গেল এক বছর আগে। মুমু মফস্বলের এক কলেজ থেকে এইচ.এস.সি দিয়ে ঢাকায় এসেছে কোচিং করতে, উঠেছে এক দূরসর্ম্পকের আত্মীয়ের বাসায় । সেখান থেকে ও কোচিং করতো নিয়মিত, আস্তে আস্তে ওই কোচিং সেন্টারের এক বড় ভাইয়ের সাথে ওর কিছুটা ঘনিষ্ঠতা হয়, যে কিনা ওকে বিভিন্ন বিষয়ে হেল্প করতো।
ছেলেটির নাম ছিল রতন। আস্তে আস্তে ওদের সম্পর্ক আরও গভীর হলো, আপনি থেকে তুমিতে গড়ালো। যেদিন কোচিং শেষ হলো সেদিন রতন মুমুকে বলেছিল, কালকে আমরা একটা ছোটখাট অনুষ্ঠান করবো তোমাকেও আসতে হবে।
পরের দিন মুমু গিয়ে দেখে কেউ নেই, রতন তাকে বলেছিল সবাই এখনি চলে আসবে তুমি ভিতরে গিয়ে বসো, টেবিলের উপর জুস রাখা আছে ইচ্ছে করলে খেতে পারো। মুমু এক গ্লাস জুস পান করলো ,কেমন যেন খারাপ লাগছে ওর মাথাটা ঝিমঝিম করছে। এরপর আর ওর কিছুই মনে
নেই !
হুশ ফিরে পাওয়ার পর ও বুঝতে পারলো কি হয়েছে ওর সাথে। তারপর রতনকে সে অনেক খুঁজেছে, কোনো ভাবেই আর রতনের দেখা পেল না।
এই ঘটনার পর মুমু খুব ভেঙে পড়ে, ভার্সিটি পরীক্ষা না দিয়েই বাড়িতে ফিরে আসে। মা বাবাকে সে বলেছিল, তাদের ছেড়ে ওর পক্ষে ঢাকায় থাকা সম্ভব না। তারপর সেই মফস্বল কলেজেই অনার্সে ভর্তি হয় ও।
মুমুর নিজের কাছে খুব হালকা মনে হচ্ছে এখন, রিয়াদকে সে কথাগুলো বলতে পেরেছে। আবার পরক্ষণেই ওর মনটা ভারী হয়ে গেল কারণ এসব কথা শুনার পর রিয়াদের রিয়েকশান ভালো হবার কথা না ।
- তোমার কথা শেষ ?
- হুম
- তুমি এতক্ষণ যা যা বললে সবই আমি জানি।।
- মানে?
- মানে রতন আমার আপন বড় ভাই ! (মুমুর মনে হচ্ছে, ও হাজারভোল্টের একটা বৈদ্যুতিক শক খেল)!!!
- আপনি এসব কি বলছেন?
- আমি তখন লন্ডনে, বিবিএ শেষ হয়নি তখনো। জানতে পারলাম ভাইয়া রোড এক্সিডেন্ট করেছে, এর তিনদিন পর আবার খবর এলো ভাইয়া মারা গেছে। এর কয়েক মাস পর আমার বিবিএ শেষ হয়ে যায় এবং আমি দেশে ফিরি। ভাইয়া মারা যাবার আগে মা বাবার কাছে তোমার ছবি এবং ঠিকানা দিয়ে যায়।
আর তোমার সাথে সে যা যা করেছে সব মা বাবার কাছে স্বীকার করে। মারা যাওয়ার ঠিক আগ মূহুর্তে সে বলছিল 'মুমুর সাথে আমি যে অপরাধ করেছি তার জন্য আল্লাহ আমাকে এই শাস্তি দিয়েছে, তোমরা পারলে ওর জন্য কিছু করো'।
- আপনি এসব কথা আগে বলেননি কেন?
রিয়াদ বললো, আমার ভয় ছিল যদি তুমি সব কিছু শুনে বিয়েতে রাজি না হও।
- একটা প্রশ্ন করতে পারি?
- অবশ্যই ।
- দুনিয়াতে এতো মেয়ে থাকতে আপনি আমাকে কেন বিয়ে করলেন?
- প্রায়শ্চিত্ত করতে, আর মা বাবাও চায় তোমার সাথে আমার বিয়ে হোক।
- অপরাধ করেছে আপনার ভাই আপনি কেন প্রায়শ্চিত্ত করবেন?
- বিশ্বাস করো মুমু সব ঘটনা শুনার পর আমার মনে হতে লাগলো যেন আমি নিজেই এর জন্য দায়ী, আমি নিজেই অপরাধটি করেছি ! আমি মানতে পারছিলাম না কি করে আমার ভাই এমন একটি কাজ করতে পারলো! ভাই হারানোর শোকও তখন তুচ্ছ হয়ে গিয়েছিল আমার কাছে।
রিয়াদ আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে, সে মুমুর হাত ধরে বললো, আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি আমার ভাইয়ের পক্ষ থেকে। আমি জানি তোমার সাথে যে অন্যায় করা হয়েছে তার কোনো ক্ষমা নেই, প্রায়শ্চিত্ত নেই ।
মুমু অবাক হয়ে ভাবছে, কি বৈপরীত্য দুটি মানুষের মাঝে । একজন তার জীবনকে কলঙ্কিত করে গেছে , আর একজন এসেছে তার জীবনকে অলংকৃত করতে, তার পাশে থাকতে, তার সুখ-দুঃখের অংশীদার হতে । একদিন একজনকে বিশ্বাস করে সে প্রতারিত হয়েছে কিন্তু আজ আরেকজন তাকে বিশ্বাস করে তার দিকেই হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
'মুমুর পক্ষে এই বিশ্বাসের হাতকে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব না, কখনোই না'।
লেখক: মেঘে ডাকা তারা
বি:দ্র: সম্পাদক দায়ী নয়
৫ মার্চ,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস