মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বাবু, সিংগাপুর থেকে: ঠিক মনে নেই, সময়টা ১৯৯৮ অথবা ৯৯ হবে হয়তো। তখন সৌদি আরবের রিয়াদে ছিলাম। কিংডম টাওয়ার বা মারকাজ মুমলাকার কাজ চলে তখন। ওয়ালিদ বিন তালালের সু উচ্চ ইমারতের কাজ। বাংলাদেশ আর জিম্বাবুয়ে বা কেনিয়ার সাথে খেলা হবে হয়তো। দুপুরে কাজের সাইটের বাউন্ডারী ওয়াল বা বেড়া ভেংগে এক পাকিস্তানীর সহযোগীতায় মালিক ফাহাদ রোডের অপর পাশের রোডে বের হই। অনেক দূর হেঁটে লিমুজিন বা ট্যাক্সি নিয়ে ক্যাম্পে আসি। আমার স্যাটেলাইট ডিশ এন্টিনা, রিসিভার ছিলো। থাকতাম হাইয়ুল নফল, মোটামুটি শহর থেকে ট্যাক্সীতে মিনিট পনের বিশ এর দূরত্ব। শহরের কাছাকাছি মরুভুমি। পনের রিয়েল ভাড়া দিয়ে রুমে গেলাম। ঘন্টা খানেক এর মধ্যেই বাংলাদেশ দল পরাজয় উপহার দিলো। তিন অংকের দেখা পায়নি প্রিয় স্বদেশ।
দুপুরই বলা যায়। বিষন্ন মনে ক্যাম্প থেকে আবার কাজের উদ্দ্যেশে বের হলাম। মরুভুমিতে কোন ট্যাক্সি নেই। হাটা শুরু করলাম। সুর্য্যটা পশ্চিম আকাশে হেলে পড়লেও প্রখরতা, তেজ একটু ও কমায়নি। আসে পাশে কেউ নেই। আমি এক মরু যাত্রি।মরীচিকার খেলায় তপ্ত বালুকারাজির মাঝে মনে হচ্ছিল, কিছু দূরে হয়তো নদী কিংবা সমুদ্র। প্রায় ঘন্টা দেড়েক মরুভুমির উপর দিয়ে হেঁটে একটি এলাকায় পৌছাই। এলাকার নাম মনে পড়ছে না। তার পর দশ রিয়েল দিয়ে একটি ট্যাক্স করে সাইটের বাউন্ডারী ওয়াল, টিনের বেড়া, সেই আলতো করে রাখা টিন সরিয়ে কাজের সাইটে ফিরে আসি। তখন নির্মীয় মান ভবনের যার উচ্চতা তিনশো ত্রিশ মিটার। তার সিঁড়ির তৈরীর দায়িত্বে ছিলাম। আমার সহকর্মীরা জানতে চাইলো খেলার কি খবর ভাই,আমি হু হু করে কেঁদে উঠলাম।
আজ অনেক দিন পর সেই স্মৃতি মনে পড়ল। কাজ শেষ হয়েছে রাত দশটায়। বাসা থেকে দশ মিনিটের পথ। আসলাম রাত একটায়। জয় পরাজয় খেলায় থাকবে।আজকের খেলায় জয় হলেও বাংলাদেশ সেমিফাইনাল খেলার সুযোগ থাকতো না। কিন্তু এই পরাজয়ে মুস্তাফিজের বাইশ রানে পাঁচ উইকেট অর্জন হলো ম্রিয়মান।
যারা বাংলাদেশে থাকে তারা বিদেশীদের সাথে থাকে না।বিশেষ করে ভারত,পাকিস্তান। আমরা প্রবাসে থাকি। আমাদের আশে পাশে ওরা। আমাদের লজ্জা পেতে হয়।ভারতের সাথে সে দিনের তিন বলে দুই রান নিতে পারেনি।ভারতীয়রা তিরস্কার করেনি। বলেছে,বাংলাদেশ চেঞ্জ হোগেয়া, লেকিন শর্ট কিউ খেলা? অষ্টেলিয়ার সাথে একশো ছাপ্পান্ন রানের খেলায় সাত উইকেট নিয়ে লড়াই করে হেরেছে।কষ্ট হয়নি কিন্তু নিউজিল্যান্ডের সাথে একশ রান করতে না পারার কষ্ট অনেক কষ্ট দিয়েছে। ভারতীয় সহকর্মীরা আবারো বলেছে।দেখা আভি তক তুম লোগ এক্সডেন্টালি জিততে হো।আসলে কি আজো আমরা এক্সিডেন্টাল জিতি?
অবশ্যই না।আমাদের ছেলেরা ভালো খেলে। তবে স্নায়ু চাপ সইবার দক্ষতা হয়নি।আবেগ টাকে বাদ দিয়ে প্রতিশোধ, প্রতিরোধ, দায়িত্ব বোধ জাগাতে হবে মনে।
ফেসবুকে বাংলাদেশ ভক্ত, বাংলাদেশীরা টিম সাজাতে পারে।আফসোস আমাদের ক্রিকেট বোর্ড সাজাতে পারেনা। ক্রিকেটে সব খেলোয়াড়ের ফর্ম এক যায় না। এ বিষয়ের উপলব্ধি করার জ্ঞান নেই যাদের তারা যদি হয় সিলেক্টর তাহলে ক্রিকেটের জন্য উম্মাদ হয়ে আমরা কি করব?
আমরা ভালো খেলি।তাই ভারতের মাঠে এই খেলায় দর্শক ভক্তরা প্লেকার্ড নিয়ে দেখিয়েছে,হারি,জিতি যাই করি, আমরা আছি তোমাদের সাথে।এইটা এমনি হয়নি।দেশ প্রেম থেকে হয়েছে। নাসিরের মতো খেলোয়াড় সাইড লাইনে বসে থাকে, মিঠুনের ভুলে তামিম আউট হয়।অভিজ্ঞ মুশফিক হারিয়ে গেছে, নির্ভরশীল মাহমুদ উল্লাহ দাড়াতে পারেনা।বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার সাকিব দুর্বল মুহহুর্তে হারিয়ে যায়।কেন? একটু খতিয়ে দেখবে কি কেউ? সরকার খারাপ করলেও শুভাগত ষোল রান করেছে সর্বোচ্চ। যাক, নিউজি ল্যান্ডের সাথে জিতবে এমন আশা স্বপ্ন হলেও ভালো খেলবে,লড়াই করবে এই আশা কিন্তু ছিলো।
বাংলাদেশ দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়ের জন্য শুভকামনা।ক্যাপ্টেন মাশরাফি, বেচারা আবেগে ফেলে চোখের জল।বাংলাদেশ দলের কেউ আমার মতো প্রবাসীর লেখা পড়বে কিনা জানিনা,তবু বলি, তোমরা এগার জন মাঠে থাকো,ষোল কোটি মানুষের বত্রিশ কোটি চোখ তোমাদের জয়ে উচ্চসিত যেমন হয়,তেমনি হেরে গেলে হয় অশ্রু সিক্ত। আর এমন পরাজয়ে প্রবাসিরা হয় লজ্জিত।জয়ে শির হয় উঁচু,সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায়।
-প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার
ডি জে বিল্ডার্স
সিংগাপুর
২৮ মার্চ, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এইচএস/কেএস