মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বাবু: কি কলি যুগ আইল! জওয়ান বুড়া সবাই খালি ওই টেলিভিশনের সামনে বইয়া থাকে।পান চিবুতে চিবুতে কথা গুলি বলছিলেন রহিমা খালা।এবার শীত ও পড়েছে। নিজের ছেলে মেয়ে নেই, বোনের মেয়ের কাছেই থাকেন। করিমন বিবি খালাকে মায়ের মত দেখেন, ছোট বেলা মা বাবা মারা যাবার পর খালা ই মানুষ করেছেন।করিমনের মায়ের আর খালার সম্পত্তি যা ছিল তা এখন সবই করিমনের। করিমনের স্বামীগ্রামের মাথায় একটা পান দোকানদার। সে ও এ পাড়ায় যুদ্ধের সময় এসেছিল .করিমনের স্বামী আব্দুল খালেক সহজ সরল প্রকৃতির।করিমনের বিয়ে ঠিক হয়েছিল ভিন গায়েঁর এক দশ ক্লাস পাশ দেয়া যুবকের সাথে ,বিয়ের সময় কথা ছিল বিদেশ যাবার সময় টাকা দিতে হবে পঞ্চাশ হাজার .খালা তা যোগাড় করতে পারে নি। বিয়ে যখন ভেঙ্গে গেল বিয়ে হল ভিন দেশী আব্দুল খালেকের সাথে। করিমন সারাদিন সংসারের কাজ করে, আবার দোকানে গিয়ে স্বামীকে সহযোগিতা করে। এভাবে চলছে সংসার বছর ঘুরতে ই করিমনের কোল জুড়েএল ফুট ফুটে এক কন্যা সন্তান, করিমন নাম দিলেন ময়না ।
ময়না এবার ক্লাস থ্রীতে পড়ে, করিমন আর খালেকের আনন্দের সীমা নেই। দুজনেই শিক্ষার আলো পায় নি। ময়না ছাত্রী ও খুব ভালো।পাশের গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে পড়ে। হেড মাষ্টার সাহেব বাড়িতে এসে একদিন বললেন, দেখ করিমন ময়নার বেরেন খুব ভালো।একটা মাস্টার রাইখ্যা প্রাইভেট পড়াও। করিমন রাজি হয়। প্রথমে হেড মাস্টার সাহেব কে অনুরোধ করে। হেড মাস্টার সাহেব বললেন ,করিমন আমি পারলেতো বিনি পয়সায় পড়াইতাম। শরীরটা ভালো না ,এক কাজ কর তোমাগো গ্রামের শেষে, ওই যে খান বাড়ি আছে , সেই বাড়ীর কাচারিতে আমার এক আত্বীয় আছে কলেজে পড়ে ,আরো কয়ডা ছাত্র ছাত্রী পড়ে ।স্কুলে যাইতে বা আসতে এক সময় পড়লে হইব।করিমন রাজি হয়।করিমন খালেক দুজনেই মেয়েকে নিয়ে যায় সে কাচারী ঘরে ময়না দেখে আরো কয়েক জন ছাত্র ছাত্রী পড়ছে .মাস্টার জামলের হাতে মেয়েকে তুলে দিয়ে বাড়ি ফেরে করিমন আর খালেক।কয়েক মাস হলো ময়না প্রাইভেট পড়ে, বাবাকে কবিতা শোনায়।
ময়ানকে পাশের বাড়ির সেলিমের বউ খুব আদর করে, সেলিম দুবাই থাকে। সারা দিন শ্বশুর শাশুড়ির সাথে ঝগড়া করে সেলিমের বউ শেফালী বেগম।শেফালী সারা দিন স্টার জলসা নিয়ে ব্যাস্ত ,একটি ননদ ক্লাস নাইন এর পর আর পড়়া শোনা করেনি .ময়না বেশ কয়েকবার শেফালিকে বিব্রতকর অবস্থায় দেখেছে শেফালির খালাত ভাইয়ের সাথে। কচি মন নানা প্রশ্ন, কাউকে কিছু বলে না , সেলিমের বোন্ লায়লা সারা দিন ফোন নিয়ে ব্যস্ত।ময়না দেখেছে, কিছুক্ষণ পর পর লায়লা ফোনে চুমু খায়, তাও শব্দ করে।এভাবে দিন চলছে করিমন ময়না খালেকের। সামনে ময়নার ফাইনাল পরীক্ষা।বেশ চিন্তায় আছে।করিমন একদিন ময়নাকে বলেকি মা তমি চুপ চাপ থাক কেন, তুমার কি হইছে।ময়না কেঁদে ফেলে মাকে জড়িয়ে ধরে।করিমন ময়নাকে বলে মা পরীক্ষার জন্য মন খারাপ,ময়না আরো বেশি করে কাঁদে . করিমন বই খাতা বন্ধ করে মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করে।কোলে রেখে খাওয়ায় ।সহজ সরল খালেকপাশে বসে মেয়ের খাওয়া দেখে, কান্না দেখে, মাঝে মাঝে পনির মগ টা এগিয়ে দেয়।হাত পাখা দিয়ে বাতাস করে।করিমন মেয়েকে শুইয়ে দেয় হাত বুলায়। ঘুমিয়ে পড়ে ময়না, সকালে ৮ টা থেকে ৯টা জামাল মাষ্টারের কাছে প্রাইভেট পড়ে ময়না। সেখান থেকে স্কুলে যায়। আজ একটু আগেই চলে এসেছে। কাচারী ঘরের বেশির ভাগ জায়গা জুড়ে খাঁ সাহেবদের ধান পাট রাখা আছে ভিতরে অংশে বেড়ার পার্টিশনকরা।সেখানে জামাল থাকে .ছাত্র ছাত্রী পড়ায় .ময়না সালাম দিয়ে ঘরে ঢুকে হতভম্ভ হয়ে পড়ে, খাঁ বাড়ীর মেঝ বউ শাড়ি গুছাতে গুছাতে দৌড়ে পালায়।জামাল মাস্টার লুঙ্গি পরে ,কষে এক চড় বসায় ময়নার গালে।তুই এত তাড়াতাড়ি এলি কেন?কাউকে কিছু বলবি না .বললে মেরে ফেলব।যা বিকালে আসবি।কাঁদতে কাঁদতে স্কুলে যায় ময়না। পুরো স্কুল ফাঁকা, এখন ও ক্লাসের অনেক দেরী। টিউব ওয়েলে মুখটা ধুয়ে নেয়্ব সে , বসে একটা গাছ তলায়।বাংলা বইটা খুলতেই চোখ পড়ে জামাল মাস্টরের দাগ দেয়া লাইনে আবার কেঁদে উঠে,গত কাল সকালের কথা মনে পড়ে .তার সাথে বিথী আপু আর রত্নাকে ছুটি দিয়ে একটা অংক করতে দেয় ,অংকটা ওর জন্য একটু কঠিন ছিল।দেরী দেখে জামাল মাস্টার পাশে বসে , কি ব্যাপার পড়া শোনায় মন নেই। এটা পারছিস না, কথা বলতে বলতে.. চিত্কার শুনে খান বাড়ির মেঝ বৌ কাচারিতে আসে।হাতে ছিল জায়গীর মাস্টারের সকালের নাস্তা। মেঝ বৌ ঘরে ঢুকে জিগ্গেস করে ময়নার চিত্কারে কারণ,জামাল বলে একটু ও পড়া শোনা করে না দিয়েছি কটা . এই যা আজ আরপড়া লাগবে না .ময়না চলে আসে।রাতে এই জন্যই ময়না মায়ের কাছে কেঁদে ছিল।
হেড মাস্টার সাহেব একটু আগেই আসেন স্কুলে, তারচোখ পড়ল গাছ তলায় যেন কে বসে আছে .এগিয়ে এলেন।কিরে ময়না এত তাড়া তাড়ি এলি যে .প্রাইভেট পড়তে যাস নি। ফাঁকি দেয়া শিখে গেছিস।ছোট কোমল মতি শিশু ময়না ,আরো কান্না আসে।হয়েছে আর কাঁদতে হবে না ,আয় আমার সাথে। টিচার রুমে বসিয়ে বললেন এখানে বসে পড়। ময়না ঠিক মত লেখা পড়া করিস।তোকে ডাক্তার হতে হবে।বুঝলি ময়না, মেয়েরা এখন উড়োঝাহাজ চালায়।কিরে তুই ওচালাবি নাকি বলে বেরিয়ে গেলেন।
স্কুল থেকে এসে ময়না মায়ের সাথে টুকিটাকি কাজ করে, অন্য ছেলে মেয়ের সাথে খেলা করে।আজ আবার বই নিয়ে বেরুচ্ছে, করিমন জিজ্ঞাসা করে কিরে এখন বই লইয়া কই যাস।প্রাইভেট পড়তে উত্তর দেয় ময়না, তুই না সকালে পড়ছস . স্যারে কইছে বিকালে যাইতে। তাড়া তাড়ি আসিস । আইচ্ছা।ময়না যায় জামাল মাস্টারের কাচারিতে।খাঁ বাড়ির কয়েকটি ছেলে মেয়ে পড়ছে .ময়না সালাম দিয়ে ঢুকে বেঞ্চের এক পাশে বসে, ঘন্টা খানেক হয়ে গেছে জামাল ময়নার দিকে কোন লক্ষই করছে না। ঘন্টা খানেক পর অন্য ছেলে মেয়েরা চলে যায়।ময়না চলে যেতে চাইলে জামাল বলে এই তোর্...
৩০ মার্চ,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএ