আমাকে ঘাটাস নে, আমাকে আমার মত থাকতে দে
আমার কবিতা লেখা বন্ধ করিসনে ।
কবিতা, ও যে আমার সন্তান, হোক না কালো কুত্সিত বিকলাঙ্গ
পঙ্গু অথুর্ব অন্ধ কালা বোবা, বেটে মোটা সোটা
হোক না অভিজাত সাহিত্যে সমাজে বেমানান
এ ছিন্ন কবিতা আমার সৃষ্টি, আমার লেখা, আমার সন্তান।
কবিতা নাড়ীর স্পন্দন, হোক না ধমনীতে দুর্বল শব্দের বিচরণ
এ যে ,সৃষ্টি কর্তার দেয়া ধন।
তোমার সুন্দর আমার কালো, তাতে কি
নুন ভাতে বড় হয়েছি, তোমাদের পাতে ছিলো ঘি.
"আমি শ্রমিক ঘামের কালিতে
হৃদয়ের কোরা কাগজে লিখে যাই শ্রম সাহিত্য
না হোক এ লেখা কোন গদ্য কিংবা পদ্য। "
দুধে ভাতে বেড়ে উঠিনি আমি, সোনার চামচে খাইনি পনির ,ফিন্নি ,
তপ্ত দাহে বিদ্যুতের পাখার বাতাসে শীতল হইনি
বেড়ে উঠেছি কাদা মাটিতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী জোটেনি, তবু লিখি
লিখে যাই যান্ত্রিক জীবনের করুন কাহিনী।
প্রকৃতি হৃদয়ে করি লালন প্রাকৃতিক উপায়ে
প্রকৃতির আলো বাতাসে, নদীর বুকে পাল তোলা নৌকা ,
কলসি কাঁখে গাঁয়ের বধুর হেলে দুলে হেঁটে যাওয়া ,
অবারিত সবুজের মাঠ দেখে কবি হইনি !
শ্রমিকের উপর শোষণ নির্যাতন, ন্যায্য মুজুরীর দাবীতে কবি হয়েছি ।
প্রিয়জনের অর্থাভাব, দিক বিদিক ছুটাছুটি
সময়ের প্রয়োজনে, হৃদয়ের রক্ত ক্ষরণে ,অন্তর্জ্বলা শীতলে ,
তুষের আগুনে এক ফোটা জল আমার অপাংতেয় কথার মাঝে ।
আমার শব্দ মালায় রড, ইট, বালি, পাথর, সু উচ্চ ইমারত ,
যার প্রতি রদ্দায় দাফন করি, কষ্ট যন্ত্রণার বাসর।
চাটুকারী করি না পেশী শক্তির, দলবাজি করে হইনা সাহিত্যের কান্ডারী
হতে চাই না, গরিবের রক্ত শোষণ করি নগ্ন রাজনীতির দর্জি !
ট্যাক্স ফাঁকি দেই না করিনা দুর্নীতি ,কারো বাড়া ভাতে দেই না ছাই
নেই না মানুষের জীবন, রেমিটেন্সে সচল রাখি অর্থনীতি ,
আমি এক প্রবাসী ।
প্রতিটি অন্যায়ে গর্জে উঠে আমার মস্তিস্কের সন্তানেরা
নারী, শিশু নির্যাতনে কেঁপে উঠে কবিতার শিরা উপশিরা
তলোয়ার নয়, বন্ধুকের গুলি নয়, পেট্রল বোমা নয়
বেহুশ করা মলম নয়, আমার কবিতা।
অসহায়, দলিতের উপর অত্যাচার করে না আমার কবিতা
নিরবে বুক ভাষায়, হয় হতবাক কখনো!
কখনো আমার কবিতায় হয় ভূমিকম্প, জলোচ্ছাস !
আমার কবিতা যেমন প্রিয়তমার ভালবাসায় ,
তেমনি প্রতিবাদের, আকাশ বাতাস কাঁপানো স্লোগানে।
নগ্ন তরবারী হাতে প্রকাশ্যে খুন করে না আমার কবিতারা !
আমাকে আমার মতো থাকতে দাও
না হলে কবিতার জন্য বিপ্লবী হবো আমি।
কবি: মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বাবু, (সিঙ্গাপুর প্রবাসী)
১৪ মে ২০১৬/ এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস