শুক্রবার, ২০ মে, ২০১৬, ০৮:৩৬:৫৯

মনের কাঠ গড়ায়

মনের কাঠ গড়ায়

মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বাবু, (সিঙ্গাপুর প্রবাসী): আসলে এক সাথে সব গুনের অধিকারী হওয়া যায় না ,নামাজ পড়লেই সত্যবাদী হয় না ,হজ্ব করলেই ন্যায় বিচারক হয় না । বোরখা ,নেকাব,হিজাব পরলেই সতী নারী হয় না।নামাজ রোজা হজ্ব যাকাত দান খয়রাত ধর্মীয় কার্য কলাপ সব নির্ভর করে শুদ্ধ মন মানসিকতার উপর। তা না হলে অন্য ধর্মের বা যারা অপেক্ষা কৃত কম ধর্মের প্রতি আনুগত্য শীল তাদের কাছে ধর্ম হয় পশ্ন বিদ্ধ ।  এই জন্য ধর্ম দায়ী নয় ।ধর্মীয় দিক থেকে প্রত্যেকটি বিষয়ের লোক দেখানোর দিকটা বা ব্যক্তি গত পাবলিসিটি অনেকের কাছেই জরুরী।লেবাস কে প্রাধান্য দেয় মানুষ।মনুষত্ব কে নয়! এমন ও নারী আছে হাজার লেকের ভিড়ে হিজাব না পরে ও নিজের সতীত্ব রক্ষা করতে পারে। অনকে এ আছে নেকাবের আড়ালে চোখের পলকেই বিলিয়ে দিতে পারে তার সম্ভ্রম। মুখে ভালবাসার কথা কত জন বলে বেড়ান ,ঘরে স্ত্রী সন্তান রেখে ভালবাসার বাণিজ্য করে যাচ্ছেন অনবরত। হজ্বের ফ্লাইট থেকে নেমে টাইটেল লাগিয়ে জমি-জমা ব্যবসা ,কর্ম ক্ষেত্র সব খানেই চালাচ্ছেন তার নিজস্ব মাতামত ।

অনেক বাবা মা সন্তানদের মাঝে নিজেরদের মনের অজান্তে তৈরী করছেন দেয়াল। নিজেরাই প্রস্তুত করছেন খুনাখুনির ময়দান। পরিবারে যে পুত্র বধুর প্রসংসায় পঞ্চ মুখ দ্বিতীয় পুত্র বধুর আগমনে পাল্টে দিচ্ছেন পুরাতন সুর,গাইছেন নতুন গান!  প্রথম যে পুত্র বধু ঘরে এসেছিলো অনেক দিন পূর্বে অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে সংসারটাকে সাজাতে শেষ করেছেন যৌবনের অনেকটা সময়, ছোট খাটো ভুলে যাকে সইতে হয়েছে মানসিক নির্যাতন ,বাপ দাদা চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার হয়েছে শশুর বাড়ির কথার বানে ,কোন কারণে এক বেলা না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে যে পায় নি একটু সোহাগ ভরা ডাক, চোখের জ্বলে ভিজিয়েছে বালিশ। .নতুন পুত্র বধু যখন সংসারে কিছুই না করে পেয়ে যায় বাহবা ,না খেয়ে ঘুমালে তাকে ডাকতেই  পাঠানো হয় ,অভিমানী বড় বউ কে , নতুন  বউকে খাওয়ানো জন্য। তখনি আগের বধু চলে যান কম্পারিজনে। শুরু হয় সংসারে তুষের আগুনের প্রজ্জলন। ত্যাগী বউটি তখন অন্তর জ্বালায় শত্রু হয়ে উঠছেন একই পরিবারে। অনেক পরিবারে ছোটবেলায় ভাইয়ে ভাইয়ে কি যে মধুর বন্ধন। এক জন আর এক জনকে দিল কেটে দিতে চান। নতুন নতুন বউদের আগমনে একান্নবর্তী শান্তির পরিবার গুলিতে শুরু হয় মহাযুদ্ধ। কখনো ও প্রকাশ্যে। কখন ও গোপনে। মা-বাবা তার অতিশয় দুর্বল ছেলে মেয়ের সুখের কামনায় ভুলে যাচ্ছেন বড় গাধা মার্কা ছেলেদের কথা। এই সবই শুরু বা সুত্র পাত দ্বিতীয় বৌয়ের আগমনের পর থেকে । একদা যে দেবর ভাবির মধ্যে থাকে বন্ধুর বন্ধন আরেক নতুন বৌয়ের আগমনী বার্তা তখন হয়ে উঠে বিষাদের কারণ! ভাবি বা দেবরের সামান্য সন্মান হানী ও রোপন করে সংসারে সন্দেহের বীজ !উভয়ের মধ্যে তখন কাজ করে, ঠিক আছে আমিও দেখে নিব। যে দেবর কথার ছলে ঠাট্রা মস্করা করে কিংবা কখনো সঙ্গত কারণে কঠোর হয়েছিলো ভাবির সাথে , ভাবি ও সময়ের ব্যবধানে অপেক্ষায় থাকে প্রতিশোধের। বলেই বসে বিয়ে কর আমি ও দেখে নেব ?

সংসার ভাঙ্গনের বার্তা শুরু হয় যৌথ পরিবারে।প্রবাসীদের বেলায় প্রবাসীরা বাবা ভাই বোন স্ত্রী সন্তান সবাইকে বিশ্বাস করে ,কাজের মাঝে বুনে স্বপ্নের সুউচ্চ ইমারত , স্বপ্ন দেখে শান্তির প্রাসাদের। সবাইকে সুখী করতে প্রাণ পন চেষ্টা । শতকরা নিরানব্বই জন  প্রবাসী ফেরেন শূন্য হাতে।জীবনের শেষ বেলায় কাটে দারুন কষ্টে। যে প্রবাসী তার পরিশ্রম অর্থের বিনিময়ে সংসারটাকে দাড় করান একটা শক্ত ভিতে,ছোট ভাইরা তখন নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে হন সচেষ্ট । হয় তাদের নতুন সংসার। আর প্রবাসী তখন দাড়ায় স্ত্রী সন্তান নিয়ে রাস্তায় !

আজও  মনে পড়ে ফেনীর নুর হোসেন ভাইয়ের কথা, ফরিদ গঞ্জের মমিনের কথা, নোয়াখালীর ইলিয়াস। এই তো সে দিন আমার সৌদির এক পুরাতন শ্রমিক ভাইকে  দেখলাম সিঙ্গাপুরের অতি পরিচিত জনপ্রিয় শপিং মল , মোস্তফা সেন্টারে,১৯৯৭ এর দুরন্ত যুবক আজ বুড়িয়ে গেছে ,সেই আমাকে চিনেছে, মুখ সাদা দাড়ি তার।  ভাইয়েরা সব আলাদা হয়ে গেছে। মেয়ের বিয়ে দিয়েছে অনেক কষ্টে। কলেজ পড়ুয়া ছেলে, সংসার চলে না, আরেকটি মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত, বুড়ো বয়সে ট্রেনিং করে নতুন করে বিদেশ এসেছে হাঁপানি  আছে তার.

নিজেদের মেয়েদের বেলায় মা-বাবা যতটা উদার , কেনো জানি প্রকৃতি গত ভাবে পুত্র বধুদের বেলায় তা আর হয়ে উঠে না, পান থেকে চুন খসলেই লঙ্কা কান্ড। সন্তানদের বউদের যেমন থাকা উচিত সন্মান বোধ ,বাবা মায়ের ব্যবহারে থাকা উচিত শালীনতা।  মেয়ে যদি রাত করে ঘরে ফিরে ,মা বাবা ভাবেন কাজ ছিল,আর বউ ফিরলে ভাবেন হয়তো নতুন নাগর জুটিয়েছে! প্রবাসীর বৌএর কোন প্রয়োজনীয় জিনিস পত্তের প্রয়োজনে বাজারে গেলে শশুর শাশুড়ি ভাবেন কলি যুগ, বউরা বাজার উঠেছে। জাত গেলো, অবশ্য বাজারে অফিস আদালতে যাওয়ার ফলে কোন কোন নারীর হচ্ছে মতি ভ্রম দুর্ঘটনা ও ঘটছে, এ জন্য দায়ী যেমন স্বামী বা শশুর বাড়ির লোক জন, তেমনি ওই বধুর নৈতিক চরিত্র। মেয়ে বাজারে গেলে হাসি মুরুব্বিদের ঠোঁটে! যে প্রবাসী সারা পরিবারের জন্য অর্থের যোগান দিচ্ছে তার কন্যার স্কুল ব্যগ ছিড়ে গেলে কেনার লোক থাকেনা! তখন চাচাদের থাকে না হাতে টাকা। তারই কিছু দিন পর দেখা যায় মোটর সাইকেল হাঁকিয়ে  বউ নিয়ে হাওয়া  খান সংসারের অন্য ছেলেরা।

এই সব কাহিনী দুর্বিসহ করে তোলে প্রবাসী বৌএর মন। কষ্টের অনলে জ্বলতে থাকেন। মোবাইল ফোনে, প্রবাসীর হাল করেন বেহাল। সংসার জীবনে যদি শান্তি নাই আসে ,অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে না রেখে সমঝোতায় আসা উচিত। একটা নির্দিষ্ট সময়ে বোঝা পড়ার মাধ্যমে আলাদা হয়ে যাওয়া উচিত!

বন্ধন,ভালবাসা ,দায়িত্ব ও কর্তব্য ,সম্মান ,ন্যায় বিচার, ত্যাগ ,কৃতজ্ঞতা ,আত্বশুদ্ধির গ্যাড়া কলে আজ অনেকের  অবস্থা স্যান্ড উইচের মত ! শ্যাম রাখি না কুল রাখি . যে বাবা মা তাদের জীবনের সব কিছুর বিনিময়ে এক জন সন্তানকে মানুষ করেন, সে বাবা মায়ের প্রতি আনুগত্য থাকা তার জন্য ফরজ হয়ে দাঁড়ায়। অন্তত আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে। সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যত মা বাবার চাইতে কেউ বেশি চাইতে পারে না, এটাই স্বাভাবিক।বিয়ের পর বউ ঘরে এসে একটু বেশি ভাবেন, তার সন্তান এবং তার ভবিষ্যত নিয়ে। ছেলের বউ যত দিন মুখ বন্ধ করে স্বামীর বা শশুর শাশুড়ির প্রতিটি বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখবে সে বউ হবে ঘরের লক্ষী,নাইলে ডাইনী। বউ কথা বললেই সমস্যা, বাবা মা বিষয়টি বুজতে পেরে বলেই  বসেন, ছেলেকে বুজি হারিয়ে ফেললেন। "সন্তানকি আমরা জন্ম দিয়েছি নাকি বউ" কি উদ্ভট উক্তি।

যার যার অবস্থানে উভয়ই পক্ষ  ঠিক থাকেন। বিপাকে  পড়ে  বাবা মায়ের সন্তান বা অন্য পরিচয়ে বলা যায়  স্বামী।একেবারে স্যান্ড উইচ।

এ ব্যাপারে ইউরোপের সংস্কৃতি অনেকেই পছন্দ করেন ,তাদের কোন পারিবারিক টেনশন নেই। দায় বদ্ধতা নেই ।সবাই চলছেন নিজেদের মত ।বছর সাতেক পূর্বে আমার এক বন্ধু কিছু উচিত কথা শুনিয়েছিলো ,সে সময় তাকে আমার একটু ও ভালো লাগেনি। অনেক নীতি কথা শুনিয়েছিলাম তাকে। আমার কাছে ভালো বাসা,কৃতজ্ঞতা ,দায়িত্ববোধ,ন্যায় নীতির মুল্য  সে দিনের মতো আজোও  বেশী।

আমার জীবনে বছর তিনেক আগে  ছোট্ট একটি ঘটনা ঘটেছে। আজ মনে পড়লো , আমার কাছের মানুষ ছিলেন , নাখোশ তার দিক থেকে নীতি গত কারণে বিশেষ করে তার দৃষ্টিতে সে অবমুল্যায়িত হওয়ার কারনে তার অসন্তুষ্টি। দিয়েছিলেন  তার আলটিমেটাম, সে দিয়েছে তার রায়, আমি দিয়েছিলাম  আমার রায়! পরিস্থিতি বিশ্লেষণে তার রায়ের ফলাফল ১০০% তার দিকেই , বিশ্বাস করতাম সেই জিতবে। মনের কোন এক কোনে আমার ভরসা ছিলো  ভালবাসা, আমি বিশ্বাস ছিলো  ভালবাসা দিয়ে আমি জয় করবো সবাইকে। তার যুক্তি,সাক্ষী ছিলো  খুবই জোরালো,বাস্তব সম্মত ,আমার ছিলো সেকেলে ।

ভালবাসার অপরাধে সে দিন ছিলাম আসামির কাঠ গড়ায় আজো  আছি। এই রায়ের অপেক্ষায় থাকতে হবে আরও  শেষ বিদায়ের অপেক্ষা ,হয়তো বিচারের দেখে যেতে পারবো না । যদি সবাই বেঁচে থাকি কেউ দিবে এক যুগ পরেও হাতে  তালি। , দিবে হর্ষ ধ্বনি .আমি হয়তো মাথা নিচু করে থাকব। যে সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে পৃথিবীর সৃষ্টি লগ্ন থেকে, আমার প্রতিপক্ষ সে দলে.আমি চলেছি শুধু আবেগ,আর ভালবাসা,মমতা,দায়িত্ব ও কর্তব্যের পথে।  যে দিন রায় হবে সে দিন হবে আমার আরও কষ্টের, দুই পক্ষ জয়ী হলে আমি খুশি হতাম, তা তো হবার নয়! স্বার্থপরতা আর আবেগের এক স্নায়ু যুদ্ধ। তবে আমি ওয়াদা রক্ষা করেছি এ বলতে পারি। ওয়াদা রাখতে গিয়ে আজ আমি অপরাধীর কাঠ গড়ায়!  প্রতিপক্ষ বলেছে মাত্র দু থেকে পাঁচ বছরের মধ্যেই রায়ের সম্ভাবনা,সে জিতবেই। আর বেশি দিন নেই সেই আলটি মেটামের ,তার প্রমান দলিলই সাক্ষী ভারী,শক্ত। ভারতীয় সিরিয়াল আদালতের মিঃ কে ডি পাঠক ও যে আমার পক্ষে নেই। তাই ভালবাসার বিচারের কাঠ গড়ায় আমি একা!একাকী একজন!

যার হাতের নাগালে আছে সুখ পাখি ,যাদের আঙ্গিনায় গাছের মগ ডালে বসন্তের কুকিল ডাকে কুহু কুহু , সময় থাকতে আলস্য করে কিংবা ঘুমিয়ে সে সময় নষ্ট করা ঠিক নয়। আমি চেয়ে ছিলাম আমার জীবনে অনেক কিছু!  চেয়েছিলাম ভালবাসার বন্ধনের এক সুখের নীড় গড়তে। নীড় বাধা হয়নি। যাযাবর হয়ে বেঁচে আছি। যাদের ভালোবেসেছি ,যা কিছু ছিল দিয়েছি হৃদয় উজাড় করে, সবাই অতৃপ্ত! দুরে থেকে কি ভালবাসা যায় ? অর্থ দিয়ে কি ভালবাসা কেনা যায়? যাদের চাই বাড়ি গাড়ি বিত্ত বৈভব ,তাদের কাছে ভালবাসার মুল্য আর কতটুকু ? প্রবাস জীবনের কর্ম ব্যস্ততায় ভুলিনি যাদের তারা ও আজ অতৃপ্ত!  সামান্য কিছুতেই অতি আপন জন যখন হারায় নির্ভরতা, তখন অনেক কষ্ট হয়। কিছু কষ্টের কথা কাউকে শেয়ার করা যায় না।  এক জন নিঃস্বার্থ মানুষ হতে চেয়েছিলাম, এক জন ত্যাগী মানুষ হতে চেয়েছিলাম। চেয়েছি একজন সুসন্তান হতে ,চেয়েছি একজন ভালো প্রেমিক হতে,হতে চেয়েছি একজন ভালো স্বামী ,এক জন ভালো পিতা ,এক জন ভালো ভাই ,এক জন ভালো বন্ধু,সব সমপর্কে রেখেছিলাম  বন্ধুত্বের বন্ধন।

ভালবাসা আর ওয়াদা আজ মুখোমুখী দাড়িয়ে। রেখেছি ওয়াদা,ভালবাসা আর বিশ্বাস হয়েছে প্রশ্ন বিদ্ধ! ওয়াদা রক্ষার মুল্য পাব কি? ভালবাসার কাঠ গড়ায় দাড়িয়ে আছি, প্রতিক্ষা বিচারের রায়ের।পৃথিবীর কোন আদালতে নয়।মনের কাঠ গড়ায় শুধু এই কষ্টের জীবনের কষ্টময় বিচার। সংসার সমরাঙ্গনে দুঃখ তরঙ্গের খেলা ,আশা তার এক মাত্র ভেলা, ভাবসম্প্রসারণ  এর জন্য মুখস্ত করে ছিলাম ,কার লেখা মনে নেই ,দশম শ্রেণীতে থাকতে না বুঝলেও আজ বুঝি ,যখন দাঁড়িয়ে আছি মনের কাঠ গড়ায় !
২০ মে,২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে