তারেক হাসান: নব্বই দশকের শুরু দিকে আমি আমার নানার বাড়ীতে কিছুদিন কাটাই।নানার বাড়ী জামালপুর জেলা শহরে,ভাড়া বাসায় থাকতেন।ঐ বাসায় অন্য একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন শফিক আহমেদ তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে।শফিক আহমেদ সরকারী চাকুরী করতেন।যতটুকু জানতে পেরেছি তাদের বিয়েটা হয়েছিল প্রেমের শেষ পরিণতি। তিনি তখন দুই সন্তানের জনক,ছেলে লেমন ও কন্যা রিতা।সংসার কতটুকু সুখের ছিলো বাহির থেকে বোঝার উপায় নেই।সন্তান গুলো স্কুলে পড়াশুনা করে।চাকুরীতে দায়িত্ব পালনে মাঝেমধ্যে শহরের বাইরে থাকতে হতো।আর সে সময় মাঝেমাঝে একটা পুরুষ ঐ বাসায় আসতো,রাতটুকু থেকে সকালে চলে যেতো।পরে জানা যায়,সেই লোক শফিক আহমেদের ভাতিজা লুটু। চাচা ভাতিজা কিন্তু প্রায় সমবয়সী। ছোট ছেলেমেয়ে তাই তারা বুঝতো না বাসায় কি হচ্ছে।কিছুদিন পর জানা যায় শফিক আহমেদের স্ত্রী রিমা, বিয়ের আগে চাচা ভাতিজা দুজনের সাথেই প্রেম করতো কিন্তু বিয়ে হয় শফিক আহমেদের সাথে।কিন্তু হাল ছাড়েনি লুটু বারবার ভালবাসার দাবি নিয়ে ছুটে আসে রিমার কাছে।আর রিমার দূর্বলতা একটু বেশিই ছিলো লুটুর প্রতি।কিন্তু পরিবারের লোকজন শফিক আহমেদের সাথে বিয়ের ব্যাপারে রাজি হয়, কারণ সে সরকারী চাকুরী করে,আর লুটু বেকার।আর রিমার সেই দূর্বলতাকে পূঁজি করে প্রায় আসা যাওয়া করতো শফিক সাহেবের বাসায়।বিয়ের দশ বছর পেরিয়ে যায়,দুই সন্তানের জননী হন তবুও চালিয়ে যায় প্রেম ভালবাসা। শফিক আহমেদ সব জেনেও নীরব ভূমিকা পালন করে, সন্তানদের কথা চিন্তা করে।এতদিন আমরা শুনেছি সন্তানের জন্য মা সবকিছু নীরবে সহ্য করে, আজ দেখলাম তার বিপরীত। যাক এভাবেই আরো পাঁচ বছর কেটে যায়।কিন্তু এখন মাঝেমধ্যে ঝগড়া হয়, শফিক আহমেদ চিন্তা করে সন্তানদের ভবিষ্যৎ, সন্তানেরা এখন বুঝতে শিখেছে।মায়ের আচরণ সব বুঝতে পায়,তবুও কিছু বলতে সাহস পায়না।
এবার ট্রান্সফারের চিঠি আসে শফিক আহমেদে যেতে হবে নেত্রকোনা । একসময় নেত্রকোনায় জয়েন্ট করে,আরো বেপরোয়া হয়ে যায় রিমা।প্রথম প্রথম সপ্তাহে একবার আসতেন শফিক সাহেব, পরে স্ত্রীর দূর্ব্যবহার দেখে মাসে দুবার আসতেন।তখন আর দেখার মত কেউ নেই, দিনের বেলাও অসামাজিক কাজে লিপ্ত হতেন রিমা ও লুটু।আশপাশের লোকজন বুঝতে পেরে লেমনের সামনে নানা ধরনের কথা বলে।একদিন তার মাকে নিষেধ করে, লুটু যেন আর এই বাসায় না আসে।তার মা ক্ষিপ্ত হয়ে যায় লেমনের প্রতি, বকাবকি করে।লেমন তার বাবাকে জানায় সব কথা, কিন্তু উনি আসতে অস্বীকৃত জানায়।এরি মাঝে আরেকটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন রিমা,সন্তান দেখার জন্য আসেন শফিক সাহেব আবার চলে যান। এভাবে প্রায় তিন মাস অতিবাহিত হয়ে যায়, আর বাড়ী আসেনা শফিক সাহেব। শুধু একদিন ফোন করে জানিয়ে দেয় বাসা ছেড়ে শফিক সাহেবের নিজের বাড়ীতে চলে যাওয়ার জন্য।এতে আরো খুশি হয় তার স্ত্রী রিমা ঐ সপ্তাহেই চলে যায় সেই বাড়ীতে।একদিন হঠাৎ ফোন করে লেমনের কাছে, তিনি খুব অসুস্থ তাই বাড়ী আসতেছে।আর এই কথাটা জানায় তার মাকে।তার মা লেমনকে বলে-
-যা বাজারে যাওয়ার সময় লুটুকে বলবি আমি ডেকেছি।
-আচ্ছা ঠিক আছে
তখন লেমন বুঝতে পারেনি কিসের জন্য লুটুকে আসতে বলেছে।লেমন বাজারে যায়। আর এদিকে লুটু আসে রিমার সাথে দেখা করতে। দেখা করে আবার চলেও যায়। রাতের বেলায় শফিক সাহেব আসেন বিষণ জ্বর গায়ে।পরদিন সকালে লুটু গিয়ে ডাক্তার নিয়ে আসে শফিক সাহেবের জন্য।ডাক্তার দেখে ঔষধ দিয়ে যায়, কিন্তু তাতে ও জ্বর কমেনি।সন্ধ্যার সময় বটি ধার দিচ্ছিলো রিমা এটা দেখে রিতা জিজ্ঞেস করে
- দাঁ দিয়ে কি করবে মা?
-একটা মুরগীর বাচ্চা জবাই করবো,তোর বাবার জন্য
যাইহোক রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে লেমন ও শুয়ে পড়ে পাশের রুমে,আর রিতা তার বাবার পাশেই ঘুমিয়ে ছিলো। রাত যখন গভীর হয় লুটু আসে শফিকের বাড়ীতে, রিমা আর লুটু দুজনে মিলে জবাই করে শফিক আহমেদ কে।লুটু চলে যায় আর রিমা বালতিতে রক্ত নিয়ে বাথরুমে ঢালতে থাকে।একসময় বাবার ছটফটানি শুনে চেতন পায় রিতা,দেখে বাবা ফ্লোরে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে,জানতে চায় রিতা
-বাবার কি হয়েছে?
তার মা বলে
-কথা বলবি তোকেও এই বটি দিয়ে জবাই করে ফেলবো।
অজ্ঞান হয়ে যায় রিতা,শব্দ পেয়ে উঠে লেমন এসে দেখে তার বাবা খুন হয়ে গেছে,দৌড়ে যায় লুটুর কাছে। সে কোন কিছু না বলায়,কাছেই থানা সেখানে চলে যায় এবং পুলিশকে জানায়।সাথে সাথেই পুলিশ চলে আসে, এসে দেখে শফিক সাহেব মারা গেছেন। প্রথমেই জিজ্ঞেস করে রিতাকে
-কে খুন করতে পারে তোমার বাবাকে?
-আমার মা!
কোন কথা না বলেই লাশ পোষ্টমডামের জন্য পাঠিয়ে রিমাকে থানায় নিয়ে যায় । প্রাথমিক ভাবে জিজ্ঞাসাবাদে কোন তথ্য না পাওয়ায় রিমান্ডে নেওয়া হয়।রিমান্ডে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দেয়।তার স্বামীকে লুটু এবং সে মিলে হত্যা করে, নতুন করে ঘর বাঁধার জন্য।কতটুকু সফল হবে তাদের এই স্বপন দেখা চলুন পাঠক গণেরা সামনের দিকে।জেল হাজতে প্রেরণ করা হয় রিমা কে, সংগে জেল খাটতে থাকে নিঃপাপ শিশু নিঝুম। লুটু পলাতক তাকে পুলিশ খুঁজে বেড়াচ্ছে কিন্তু গ্রেফতার করতে পারেনি।রাগ অভিমানে মায়ের সাথে দেখা করেনি লেমন ও রিতা,শুধু ছোট বোনকে মাঝেমাঝে গিয়ে দেখে আসতো।বেশিদিন গড়ায় নি দ্রুত বিচার আইনে মামলা চলছিল। স্বাক্ষ নেওয়া শেষ,মেয়ে রিতা স্বাক্ষী হয় এবং মায়ের বিপক্ষে স্বাক্ষ দেয়।বিচারের রায় শুনানোর দিন ধার্য হয়।কাঠগড়ায় রিতা,ও লেমন শেষবারের মত বলে-যে মা আমাদের কথা চিন্তা না করে নতুন করে ঘর বাঁধার চিন্তা করে, আমার বাবাকে হত্যা করে, সে মায়ের জন্য কোন আফসোস নেই, তাকে যেন সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়।আদালত সবশেষ রায় প্রধান করে রিমা ও লুটুর মৃত্যুদণ্ড। শিশু নিঝুমের বয়স আইন মোতাবেক নির্দিষ্ট হওয়ার পর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার হুকুম দেয় আদালত। এবং লুটুকে জরুরী ভিত্তিতে গ্রেফতারের হুকুম প্রদান করে পুলিশের উপর।এভাবেই একটি পরকীয়ার জন্য তিনটি জীবন মৃত্যুর পথে ধাবিত হয়।অনিশ্চিত হয়ে পড়ে লেমন, রিতাও শিশু নিঝুমের ভবিষ্যৎ,,,,,
(সত্য কাহিনী অবলম্বনে একটি গল্প, গল্পের চরিত্রগুলো ছদ্মনামে)
১৬ জুন, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস