পাঠকই লেখক: নাও বাইতাম বলে মানুষ মালেক মাঝি ডাকে। বয়স ৭০ কাছাকাছি। বাড়ি ভোলা জেলার তজুমুদ্দিন। তবে এহন কিছুই নাই। সব নদী ভাইঙ্গা ফালাইছে। এহন নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ উরিরচরে বসত। ৪ ছেলে ৪ মেয়ে।সবাই সবাইকে নিয়ে ব্যস্ত। ছেলেরা বধুমালা ছাড়া কিছুই বুজে না।আমার তো কিছুই নাই। দাম ও নাই।এহন রিক্সা, রোড, অলিগলিই জীবন।
তবে রোজা রাখার কারনে দিনের বেলায় পারিনা বাবা।ইফতারের পরপরই চালাই।
স্ত্রীর কথামত বিশ্বরোডের পাশেই ভ্রাম্যমাণ তরকারি কিনার সময়ই এই মুরুব্বী আমাকে ফলো করছে প্রায় ৫ মিনিট। কত রিক্সা। সবারই তাড়াহুড়া। মুরুব্বীর তো আগের সেই শক্তি নেই। ফ্যালফ্যাল দৃশটিতে তাকিয়ে আছেই। যেন ওনার রিক্সায় আমাকে উঠতেই হবে।বললাম চাচা, আমিতো ৫ টাকা দিয়ে অটোতে যাবো! দিলেন মৃদু হাসি। উঠলাম! পথে ওনাকে দাঁড় করিয়ে আরো কিছু বাজার করলাম। ২০ টাকার ভাড়া। পথে পথে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে গল্প হলো। রিক্সার প্যাডেল চাপতে খুব কষ্ট হচ্ছে। ঘামের দরিয়ায় ভেসে যাচ্ছে। আগের মত হাতল ও মাথা সমান তালে কাজ করতে চায়না।
বাসার কাছে আসতেই মনটা খাঁ খাঁ করে উঠলো। বললাম ঈদে বাড়ি যাবেন না? বলল,,ঠিক নেই। রিক্সার লক নেই। তাই ছোট ছেলেকে রিক্সার কাছে দাড় করিয়ে, মায়ের দেওয়া গাছের কাঁঠাল ভেংগে খাওয়ালাম। মোবাইল নম্বর দিলাম। ঈদের দাওয়াত দিয়ে ৫০ টাকা ভাড়া দিলাম। চাচার চোখেমুখে হাসির চিহ্ন আর দোয়া।।
জানি না এ বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে আরও লাখো আব্দুল মালেকের জীবনীতে পুত্র ও পুত্রবধূ দের অনীহা আর অবজ্ঞার কাহিনী। মনে হয় যেন কখনো তাদের কাহিনী শেষ হবে না। আর অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে উঠছেন আরো কত আব্দুল মালেক! কে জানে??
লেখক: শামিম মিয়া। (শিক্ষক)
২৩ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর