অ্যাড. সোহেল এমডি রানা: সময়টা ভালো যাচ্ছে না হাসানের। প্রায়ই বাসায় ঝগড়া ঝাটি লেগেই থাকে। মানুষ বলতে ফ্লাটে ওরা হাসব্যান্ড ওয়াইফ দু'জন। তবু অশান্তি।
ইদানিং আর কেউ কাউকে সহ্য করতে পারছে না। মাঝে মাঝে কথাও বন্ধ থাকে কয়েকদিন। তাই প্রায় রাতেই লেট করে বাসায় ফিরে হাসান।
হাসানের অফিস ধানমন্ডি। লিয়ার অফিস গুলসান। একটা বায়িং হাউজের সিনিয়র মার্চেন্টডাইজার হিসেবে অনেক কমিটমেন্ট থাকার কারণে হাসানকে অনেকটা সময় অফিসকে দিতে হয়। বিনিময়ে হ্যান্ডসাম সেলারি ড্র করে। পরিবারে সময় দেয়া বলতে রাত ১১ টার পর থেকে ভোর ৬ টা। তারমধ্যে আবার কিছু টাইম নিউজ শোনা, টিভিতে টকশো দেখা, কিছু টাইম নেটে বসা, এরপর ঘুম।
অপরদিকে, লিয়াও অনেক ব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটায়। সারাদিন ব্যাংকের অনেক ক্লায়েন্ট ডিল করতে হয়। তার উপর সিনিয়র বিদেশে একটা ট্রেনিং এ যাওয়ায় কাজের লোড এখন দ্বিগুণ। আবার সব অফ ডে গুলোতে ফ্রি থাকতে পারেনা দু'জনেই।' ফলে কেউ কাউকে ঐভাবে সময় দিতে পারে না।
এতো কিছুর মধ্যেও সংসার সামলানো, ছোট বোনটার চিকিৎসার ভার বহন করা। সব মিলে সব কিছুর মধ্যেও হাসানের একটা শূণ্যতা বিরাজ করে। যা কাউকে বোঝানো যায়না।
হ্যা, ওদের একটা বেবী দরকার। বিয়ের দশম এনিভারসারীতে তাই কাউকে দাওয়াত করেনি ওরা। কারণ খানাপিনার পর ঐ একটা কথা সবাই তাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। আর তাদের সারাদিনের আনন্দটাই মাটি হয়ে যায়।
অথচ একদিন তাদের এই জুটিটা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সেরা জুটি ছিল। সবাই কত প্রেইস করতো ওদের। দুজনই খুব ব্রাইট স্টুডেন্ট ছিল। ফ্রেন্ডদের নিয়ে হৈচৈ আড্ডায় জমিয়ে রাখত। এগুলো এখন সবই অতীত।
সমস্যা ওদের দুজনের কারো নেই। ডাক্তার কিছু ঔষধপত্র দিয়েছে যা নিয়মিত সেবন ছাড়া আপাতত কোন ট্রিটমেন্ট নেই। গেল বছর ইন্ডিয়ায় ডাক্তার দেখিয়েছে। ফলাফল একই।
এদিকে তাদের এই ঝগড়াঝাটি দেখে একবার লিয়ার পরিবারের সবাই এসে হাসানের সাথে বসছিল। লিয়ার বাবা বলল- দেখো বাবা, তোমরা উভয়েই ম্যাচিয়ুরড। কি আর বলব, একটু মানিয়ে চল। একজন আর একজনকে ছাড় দাও। পরষ্পর সেকরিফাইজ, কম্প্রোমাইজ ছাড়া সংসার টিকে না। মা আবার মেয়েকে কিছু জি বাংলা টাইপ বুদ্ধি দিয়ে গেছেন। লিয়া আবার প্রচণ্ড জেদি আর একরোখাও বটে।
বেশ কিছুদিন হলো ওরা আলাদা রুমে থাকে। সম্পর্কটা চরম খারাপের দিকে গড়াচ্ছে। হাসান অনেকবার রিকোয়েস্ট করেও লিয়াকে ঘরে আনতে পারেনি। ভার্সিটির খুব ক্লোজ কিছু ফ্রেণ্ড ব্যাপারটা জেনে মীমাংসার চেষ্টা করেছে কিন্তু পেরে ওঠেনি। ফলে শেষমেশ ওদের মধ্যে সেপারেশনই হয়ে গেল।
সেপারেশনের তিনমাস পর হাসানের বোনটা মারা গেল। ওর বাবা মাকে ঢাকায় এনেছিল লিয়া চলে যাবার সপ্তাহ খানিকের মধ্যে। হাসানের বাবা-মা একমাস পর জানতে পারে হাসান-লিয়ার সংসার ভাঙ্গার কথা। এতে হাসানের সহজ সরল গ্রাম্য মা অনেক আফসোস করেছেন। আর বার বার বলতেন একটা মেয়ে এটা কীভাবে করতে পারে!
চাকুরীর সুবাদে একদিকে হাসান যেমন বেশ টাকা কামিয়েছেন তেমনি বিদেশে অনেক ক্লায়েন্টের সাথেও গুড রিলেশনও তৈরি করেছেন। তাদের একজন মিসেস পাওয়েল গন্জালেস। তিনি স্পেনের নাগরিক। প্রায়ই তাকে তার দেশে বেড়াতে ইনভাইট করতেন। তার সাথে কথা বলে হাসান চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে স্পেন চলে গেলেন।
সময়ের পরিক্রমায় লিয়া হাসানকে ভুলে গেলো; হাসানও লিয়াকে। লিয়া দেখতে খুব সুন্দরী আর স্মার্ট ছিল কিছুদিন হয় ওর এক ব্যবসায়ী মাধ্যবয়সি খালাতো ভাই ওকে বিয়ে করেছে।
স্পেনে গিয়ে মিসেস গন্জালেসের সহায়তায় একটা জব পেয়েছে হাসান। ভালই কাটছিল তার দিনরাত্রী। বছর তিনেক সে স্পেন ছেড়ে কোথাও যায়নি। একবার ছুটিতে ১৫ দিনের জন্য লন্ডন গেলেন হাসান। রাতের লন্ডন ব্রিজ দেখতে দেখতে তন্ময় হয়ে গেলেন হাসান। ঠিক এই মুহুর্তে এক মায়াবী কন্ঠে কে যেনো ডাকছে - হাসান এই তুমি হাসান না? বাঙালী? ঢাকা? যেন কয়েক মিনিটের জন্য হাসান তার কলেজ জীবনে ফিরে গেলো। এই মিস্টি স্বরে একটি মেয়ে তাকে ডাকতো তার নাম নীরা। কিন্তু নীরা এখানে আসবে কি করে? তাই সে কোন উত্তর করেনি ঐ ডাকের। কাছে এসে মেয়েটি বলল Hi, glad to meet you. Are you from Bangladesh? Mr. Hasan? হাসান অবাক হয়ে কয়েক মিনিট তাকিয়ে রইল নীরার দিকে কোনভাবেই তাকে সেই কলেজ জীবনের লাজুক শান্ত লাস্যময়ি মেয়েটির সাথে মেলানো যাচ্ছে না। হাসান বলল- হ্যা, আমি হাসান। বলতেই হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশ্যাক করলো নীরা।
১১ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এইচএস/কেএস