শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৬, ০৬:৪৫:১৮

সাত ভাই চম্পার আলো আধার এবং

সাত ভাই চম্পার আলো আধার এবং

পাঠকই লেখক ডেস্ক:

                                                                                         ১ম পর্ব

বাংলাদেশের নরাইল জেলার ছোট্ট  একটি গ্রাম যার নাম কুড়িগ্রাম, সবুজে ঘেরা মমতায় ভরা এই  গ্রামে সনাতন ধর্মের এক কৃষকের ঘরে  জন্ম হয় ফুটফুটে সুন্দর একটি মেয়ে । বড় সাতটি ভায়ের মাঝে একটি বোন তাই আদর করে নাম রেখছে চম্পা । বাবা ছিল কৃষক, সাত বছর বয়সে বাবা মারা যায়। মা আর ভাইদের সংসারে বেড়ে  উঠা সেই চম্পা যখন ১২/১৩ তে পা দিলো যখন থেকে সে বুঝতে শিখল তখন থেকেই তার ভালো লাগত মুসলমানদের আচার অনুষ্ঠান । স্কুলে বন্ধুদের সবাই ক্লাস টিচার আসলে আসসালামু আলাইকুম বলে সালাম দেয়া, তাদের দল বেধে ৫ বার নামজ পাড়তে যাওয়া রোজা রাখা ঈদে নতুন জামা কাপড় পড়ে ছোট বড় সবাই ঈদের নামাজ পরতে যাওয়া ইত্যাদি। তার মূর্তি পুজা ভালো লাগতনা, সে ভাবত হিন্দুদের মাঝে শুধু মেয়েরাই পুজা করে সংস্কার রক্ষা করে কিন্তু ছেলেদের মাঝে তেমনটা দেখা যায় না । কিন্তু মুসলিমদের মাঝে ছেলে মেয়ে সবাই তাদের ধর্ম কর্ম পালন  করে। সে যে কোনও উছিলা দিয়ে মন্দিরে যেত না। এই জন্য অনেক বোকা জোকা সইতে হয়েছে তাকে। সব কিছু মিলিয়ে তার মনে এই ধর্ম সম্পর্কে জানার আগ্রহ আরও  বেড়ে যায়, সেই থেকে সে চুপি চুপি ইসলামের বিভিন্ন বই সংগ্রহ করে পড়তে  লাগলো । একবার  রাতে তার ঘরে বাতি জলা দেখে তার বড় ভাই দরজায় নক করতেই চম্পা ভয়ে কেপে উঠে আর কাপা কাপা গলায় বলে কে? উত্তরে কিরে চম্পা দরজা খোল। আসি ভাইয়া বলে দরজা খুলতেই ভাই ঘরে ডুকে সার্চ করতে লাগলো ,এতো রাত করে জেগে কেন? বই পড়ছিলাম, দেখি কি বই পড়ছিলি, বই ঘাটতেই দেখে ইসলামিক বই,  ভাইদের কাছে ধরাও পড়ে যায় ইসলামিক বই সহ। এর জন্য বকাও দেয়া হয় তাকে। এভাবেই কাটছিল তার দিন । s s c পাস করে সে চাকরী নিলো নরাইল জেলখানার মহিলা কয়েদীদের সেলাই প্রসিক্ষনের । সেই সুবাদে তার বাড়ি টু কর্মস্থল একলা পথচলা গাড়ীতে । প্রতিদিনি তাকে বাসে করে কর্ম স্থান যেতে হতো। একদিন পরিচয় হয় একটি ছেলের সাথে নাম সিরাজুল ইসলাম, বাড়ী যশোর ।  ঐ দিন বাড়ী ফেরার সময় তার পাসের ছিটে বসে সিরাজুল। বেস কিছু দূর সময় কেটে গেল, কারো সাথে কোনও কথা নাই। হুট করে সিরাজুল বলল এক্সকিউজ মি আপা আপনি কোথায় যাবেন, মেয়েটি তার  দিকে বিরক্তি ভরে তাকিয়ে কিছু না   বলে আবার বাইরের দিকে আপন মনে তাকিয়ে রইল  । সিরাজুল এক টু  পরে আবার একটু সাহস নিয়া  বলল আপা কি রাগ করলেন। তখন মেয়েটি মুখে কিছু না বলে একটু মাথা নেরে বলল না । তার পর আস্তে আস্তে দুই একটা কথা বলে পরিচয় বিনিময় হয়। ছেলেটির নাম সিরাজুল ইসলাম বাড়ী যশোর । মেয়েটির নাম   চম্পা দাশ বাড়ী নড়াইল। এক পর্যায়ে ছেলেটি তার একটি মোবাইল নাম্বের দিল এবং মেয়েটির মোবাইল নাম্বের চাইলে মেয়ে ট বলে তার কোন মোবাইল নাই। এরকম কিছুক্ষণ গল্প চলতে চলতে চম্পা তার গন্তব্য স্থলে চলে আসলে চম্পা নেমে যায়। এভাবেই যোগাযোগ ছাড়াই চলে গেলো বেশ কিছু দিন ।
                           
                                           ২য় পর্ব

একদিন চম্পা তার ব্যাগ ঘাঁটতে গিয়ে সিরাজের মোবাইল নাম্বের টি পায় । তখন চম্পার মনে সিরাজ কে নিয়ে কওতুহল হল, সেই সুবাদে চিন্তা করল যে দেখিনা একটু ফোন করে। চিন্তা থেকেই বাড়ীর পাশের ফোনের দোকান থেকে মনে একটু ভয় কিছু দিধা নিয়ে নাম্বের টিতে কল করল, কানের কাছে রিং বাঁজার শব্দে চম্পার হৃদয় ধক ধক করতে লাগলো রিং যতই বাজছে  চম্পার হৃদয় কাপান ততই বেড়ে যাচ্ছে সে হাল্কা ঘামছে তা তের পাওয়া গেলো তার ওড়না দিয়ে কপাল মুছা দেখে । যখনি ওপাশ থেকে হেলো একটি পুরুষ কণ্ঠ ভেসে এলো তখন চম্পার হৃদয় শীতল পানি প্রবাহিত হয়ে গেলো। কাপা কাপা কণ্ঠে চম্পা বলে he he helooo আপনি কি সিরাজ বলছেন ? তখন ওপাশ থেকে জবাবে বলল না আমি ওর বন্ধু আনিস বলছি,। অনেক দ্বিধা ভরা মন নিয়ে চম্পা বলে  এট  কি  সিরাজের নাম্বের। না এ টা আমার মোবাইল নাম্বের  সিরাজের কোন মোবাইল নাই আমার নাম্বের টাই সবাই কে দেয় প্রয়োজনে।  কেন কিছু কি বলতে হবে আর আপনার নাম টা  কি? আপনি ওনার কি হন? আমি কি আপনাকে চিনি? সিরাজ কি আপনার সাথে চাকরি করে ? এত সব প্রশ্ন একসাথে সুনে সে একটু লজ্জা পেল আর একটু ঘাবড়ে গেলো । আমি চম্পা আসলে সুধু এই  টুকু বলবেন, আচ্ছা রাখি । এই  বলে চম্পা  ফোন রেখে দিল। কয়েক  দিন পর বিকাল ৫ টার দিকে একটি ছোট চেলে এসে বলে চম্পা আপু আপনার ফোন আসছে দোকানে আপনাকে ডাকে। সে ভাবল কে আমাকে ফোন করতে পারে। ভাবতে ভাবতে সে দোকানে গিয়ে ফোনটি হাতে নিয়ে কানে ধরে helo বলতেই অপার থেকে একটি ভরাট পুরুষ কণ্ঠ আমি সিরাজ ঐ যে বাসে আমার সাথে আপনার পরিচয় হয়ে ছিল আপ নি কি চম্পা বলছেন ? হ্যাঁ কেমন আছেন আপনি আমি ভাল। কিন্তু আপনি আমার নাম্বের পেলেন কি ভাবে, কেন আপনি না আমার দেয়া নাম্বারে ফোন করেছিলেন , ও হ্যাঁ মনে পরেছে তা এত দিন পর ফোন করলেন, আমি একটু বাড়ী গিয়ে ছিলাম এসেই শুনলাম আপনি ফোন করেছিলেন তাই। এভাবে তাদের মাঝে কথার আদান প্রদান হতে লাগলো । কিছুটা ভাল লাগার জন্ম নিলো । আর ভাল লাগা থেকে কখন যে তাদের মাঝে ভালবাসার জন্ম হোল তারা  নিজেরাও টের  পায়নি । ধর্ম তাদের মাঝে কখনই মন কে প্রভাবিত আথবা বাধা হয়ে দারায় নি। সুরুতে কিছুটা দ্বিধা ছিল চম্পার কিন্তু ইসলাম তার  কাছে ভাল লাগতো ,আবার সমাজের ভয় ও ছিল মনে, সব  কিছুই জেন ভাল বাসার কাছে হেরে গেলো।  একদিন সিরাজ তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল। বিয়ের প্রস্তাব শুনে চম্পা চমকে জায় ।

                                             ৩য় পর্ব
 চম্পার মনে ভয় আবার পছন্দের মানুস কে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তাকে বিচলিত করেছে। সে তাকে বলে এতা কি করে সম্ভব তুমি মুসলিম আর আমি  হিন্দু আমার পরিবার এটা মানবেনা আর তোমার পরিবার কি আমাকে মেনে নিবে। সিরাজ বলে আমার পরিবার কে আমি মানাতে পারব, সুধু তুমি রাজি থাকলেই হবে,চম্পা তবুও আমার ভয় হয়। একদিন সিরাজ আর চম্পা তারা একটা কাজি অফিস গিয়ে বিয়ে করবে বলে থিক করল। দিন তারিখ দেখে চম্পা বান্ধবীর বড় বোনের বিয়ের অনুস্থানের কথা বলে সে মনের মতো করে সেজে সে তার  বাড়ীর সীমানা পার হয়ে  নতুন জীবন সুরু করার জন্য গেলো । চম্পা প্রথমে হুজুরের কাছে কলেমা  " আসসাহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল লা হু মুহাম্মাদুর রাসুল্লাহ (সাঃ)"  পড়ে সে একজন মুসলিম নারী হয়ে তার পর তারা কাজী অফিস গিয়ে ইসলামি নিয়মে বিয়ে করে যার যার বাসায় চলে যায়। তার একটা নতুন নাম রাখা হয় " জান্নাতুল নাঈম চম্পা" ।  এই ভাবে বিষয়টা গোপন থাকে প্রায় ১ বছর । কালের চক্রে অরা একদিন কোথাও দেখা করতে গেলে চম্পার ভাইয়ের এক বন্ধু ট্রলারে নদী পার হওয়ার সময় ওদের পাশাপাশি বসা অবস্থায় দেখে ফেলে আর তা চম্পার ভাইয়ের কাছে বলে দেয় । আর সেই দিনই চম্পার ভাগ্যের অগ্নি পরীক্ষা সুরু হয়। রাত তখন ১২ টা চম্পার বড় সহ সব ভাই ভাই ভাবি সবাই হাজির চম্পার ঘরে, চম্পা কি বেপার ভাই এত রাতে, তকে কিছু কথা জিজ্ঞাস করব সত্যি সত্যি জবাব দিবি, চম্পা কি কথা, তুই কি বিয়ে করেছিস ওই ছেলেকে। চম্পা একটু অবাক হওয়ার ভঙ্গীতে বলে "কি বিয়ে" না তো কে বলেছে, বর ভাই, সত্যি বল, তার পরও চম্পা অস্বীকার করলে তার ভাই তার গালে জীবনের প্রথম আর শেষ চর টা মারলে সে মাথা নিচু করে কাঁততে লাগলো। তোকে আমার বন্ধু ট্রলারে একটি ছেলের সাথে দেখছে। যে ছেলে টাকে বিয়ে করেছিস সে তো ও  ই ছেলে যে আমাদের বাসায় তোর সাথে এসেছিল সে। একটি কথা সিরাজ চম্পার অফিস সহকারী পরিচয়ে চম্পার বাসায় এসেছিল অনেক দিন। চম্পার পরিবার তাকে অনেক আদর সমাদর করতো। কিন্তু মুসলিম ঘরের ছেলে বলে চম্পার সাথে তার বিয়ে মেনে নিতে পারেনি তারা। ভাগ্যের কি পরিহাস সুধু ধর্মই যেন সব রক্তের সম্পর্ক ভেঙ্গে দিয়ে চম্পাকে তার পরিবার থেকে বিদায় নিতে হল চিরতরে। সেই দিন রাত একটার সময় চম্পাকে তার ভাই ঘর থেকে বের করে দিয়ে তার ঘরে তালা দিয়ে দিল। এত আদরের ছোট বোন মায়ের চোখের মনি, সবাই যেন এক নিমিষেই পর করে দিল। যে মা ১০ মাস গর্ভে ধারন করেছে দুধ পান করিয়েছে সেও যেন পাথর ফিরানোর কোন সাধধি নাই সুধু চোখের জল ফেলা ছাড়া। ভগবানের হয়ত এমনি নিয়ম। সবাই তাকে ছেড়ে  বর ভাইয়ের কথা মত যার যার ঘরে চলে গেলো । চম্পা শুধু তাদের কাছে এততুকুই চেয়েছে তাকে যেন সকাল পর্যন্ত থাকতে দেয়। কিন্তু লাভ হয়নি, পাথর হৃদয়  গলেনি ভাবেনি মানুষ হিসেবে একটি মেয়ে হিসেবে। অসহায় চম্পা এত রাতে কোথায় যাবে, চারিদিকে সিয়াল ডাকছে, আমাবরসার রাত গা ছম ছম করার মত অন্ধকার। থেকে থেকে ভুতুম প্যাঁচার  ডাকে তার অন্তরের পানি শুকিয়ে যাছে। ভয়ে ভয়ে একপা দুপা করে চলতে লাগলো নিজের অজানা অন্ধকার ভাগ্য নিয়ে। কিছুদুর যেতেই সামনে একটি বাড়ী একটু সাহস করে ওই বাড়ীর দরজায় নক করল কিন্তু কোন সারা সব্ধ নাই, সে মনে ভয় নিয়ে আবার নক করল একটু পরে অপার থেকে একটি বিরক্তি পুরুষ কণ্ঠে " কে?" আমি চম্পা , কোন চম্পা ,আপনাদের পাশের বাড়ীর, সুনিল দাসের, তখন একটি মহিলা এসে দরজা খুলে  বলে কিরে চম্পা এত রাতে তুই এখানে, বাড়ীতে  কোন বিপদ হইনি তো ? না মাসি মা, তাহলে ? আয় ভিতরে আয় বস। এইবার বল কি হয়েছে, চম্পা তখন অঝোরে কাঁদছে, মাসি মা তার নিজের আচল দিয়ে তার চোখ মুছে দিয়ে বুকে জরিয়ে নিল, মা চম্পা কাদেনা। মুহুরতের জন্য চম্পার মনে হয়েছিল চম্পার মা যেন চম্পাকে বুকে নিয়ে আদর করছে। সেই উষ্ণতা পেয়ে চম্পার বুকের কষ্টের মেঘ যে এক মুহুরতে মিশে গেলো মায়ের মমতার আচল তলে। এর পর চম্পা তার জীবনে ঘটে  যাওয়া সব কিছু বলে, সব শেষে বলে যে আজ রাত টা যেন তাকে মাসি মা তার বাড়ীতে থাকতে দেয়। কাল সকালে উঠে সে তার স্বামীর  কাছে চলে যাবে। সব সুনে মাসি মা  বলল ঠিক  আছে আয় তুই আমার সাথে ঘুমাবি। পরদিন সকালে সে তার মাসি মার কাছ থেকে  বিদায় নিয়ে চলে তার স্বামীর উদ্দেশে । প্রথমে একটি ফোনের দোকান থেকে তার অফিসের নাম্বারে ফোনে  সিরাজ কে সব কিছু জানায়, সিরাজ শুনে তাকে সান্তনা দিয়ে বলে ছিন্তা করোনা। তুমি চলে আস আমার কাছে। প্রথমে সে তার মেসে তাকে নিয়ে উঠে তার  ২ দিন পর অফিস থেকে ছুটি নিয়া  চলে যায় যশোর সিরাজের আপন বাড়ী । প্রথমে বাড়ীর সবাই চম্পাকে মেনে নিতে চায়নি কারন সে একটি হিন্দু পরিবারের মেয়ে এবং ২য় কারন সেই পুরনো রেওয়াজ প্রেম করে বিয়ে করলে তাকে মানতে আমদের সমাজের সবারই একটু কষ্ট হয় এর সাথে আবার  ত্যাজ্য পুত্র করা নিঃস্ব একটি হিন্দু নারী যার কাছ থেকে  পণ আসা করা অসম্ভব । শুরু থেকেই সবাই খারাপ ব্যাবহার করতো। তাকে দিয়ে বাড়ীর সব কাজ করাত এমন কি তাকে দিয়ে গরুর মাংস রান্না করতে বাধ্য করতো, উপরন্তু তাকে গরুর মাংস জোর  করতো খেতে । সব মিলিয়ে তার জীবনে যেন সুখের আলো নেই। সিরাজ যখন ঘরে থাকে তখন যেন সবাই তাকে আপন করে নেয় । কিন্তু ঘরে না থাকলেই শুরু হয়......। এ যেন বাংলা সিনেমার কুটনি ননদ জা আর শাশুড়ির অত্যাচারের গল্প। এভাবেই আগুনের গুলায় জ্বলছিল চম্পা ।
লেখক: মো: রেজাউল করিম রেজা
বি:দ্র:  সম্পাদক দায়ী নয়
২৩ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে