রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০১৬, ০৫:৫৬:১০

বন্ধুর খোঁজে পথের ধাঁরে

বন্ধুর খোঁজে পথের ধাঁরে

সবুজ আলম ফিরোজ: তোর অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকি অবিরল। আসবে কখন ফিরে। কখন পাব  তোদেরই খোঁজ। সেই অপেক্ষায় চেয়ে থাকি। সেই কবে দেখেছি তোদের, শুনেছি মধুরও কন্ঠ। তোদেরকে হারিয়ে এখন যেন নি:শ্ব। মনে আসছে না কোনই স্মৃতি। আর সহে থাকতে পারছিনা বন্ধু তোদের ছাড়া। খুব মিস করছি। হ্যা খুব খুব বেশি।


বলছি নবম-দশমের কথা। সেই পুরনো বন্ধুদের স্মৃতি আজ শুধু চোখের পাতায় ভাসছে। গ্রাম থেকে একটু দুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ সাইকেলের হেন্ডেল চাপিয়ে অধ্যায়নের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। যদিও এর আগে এক বছরের বেশি সময় পায়ে হেটে যাতায়াত করছি।


তখন আমি ৫ম শ্রেনীতে, অর্থাৎ ৫ম-৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পায়ে হেঁটে যাতায়াত করছি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এর পর একটি সাইকেল কিনে দেন আমার শ্রদ্ধাভাজন বাবা। যিনি আমাদের পরিবারের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দিতে অবিরাম পরিশ্রম করে যাচ্ছে প্রবাসে। প্রতিদিন পায়ে হেটে অধ্যায়নরত প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছি যেনে একটি সাইকেল কিনে দেন।


যাক এবার আসি মুল কথায়, সকাল ৯টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অধ্যায়নরত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সময় কাটে। এর মাঝে দুপুরে বিরতিতে প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা ঘুরাঘুরিতে সময় পার হয়। গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনায় আকা বাঁকা মেঠো পথে সবুজ ঘাস, গাছ-পালা, সবুজময় এক প্রকৃতি যেন হারিয়ে গেছে আমাদের কাছ থেকে। সেই সাথে হারিয়ে ফেলেছি বন্ধুদের কেও।


বন্ধুদের সাথে সেই আড্ডা আজ যেন স্মৃতিময়। সময়ের বিবর্তনে যেন সব বদলে গেছে। তবে এখনো খুব মনে পড়ছে ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শ্রেনীতে থাকা বন্ধু ইব্রাহিম মঞ্জুর কথা। একসাথে ঘুরাঘুরি আড্ডায়, অধ্যায়নে প্রতিযোগিতা ছিল বেশ। এভাবে বন্ধুত্ব জমে ছিল মঞ্জুর সাথে। এর পর যে বন্ধুত্ব ভেঙ্গে গেছে বিষয়টা একদমই সঠিক নয়।


নবম দশমই সবার সাথে বেশ ভাল বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে, অধ্যায়নের উদ্দেশ্য সারাদিনই সময় কাটে বন্ধুদের সাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সামনে এসএসসি পরীক্ষা তাই পরীক্ষার ভালো রেজাল্ট পাওয়ার জন্য ব্যস্ত সময় কাটছিল সেই সময়।


পড়ালেখা নিয়ে সব সময় থাকতাম চিন্তায় ভালো রেজাল্ট কিভাবে করা যায়। সারাদিনই সময় কাটতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনায়। প্রিয় পাঠক হয়তো ভাবছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম বলছি না কেন? হ্যা, একটু সমস্যা থাকার কারণে নাম বলতে পারছি না। তাই আন্তরিক ভাবে দু:খিত।


এখনো খুব মনে পড়ছে সেই বন্ধু আশ্রফুল, ইমরান, আমির, মঞ্জু, কামাল, মামুন, সারমিন, সায়মা, রুবি, সিরিন, বিথী সহ আরো অনেক বন্ধু। এর মধ্যেও বেশ ক’জনকে হারিয়ে ফেলছি। মেয়ে বন্ধুদের মধ্যে আবার অনেকের বিয়ে হয়ে এখন স্বামী, শশুড়-শাশুড়ি, ছেলে- মেয়ে সংসার নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।


এসএসসি পরিক্ষায় সবার সাথে যে একবার দেখা হয়েছে। আর দেখা হয়নি সেই স্মৃতি ময় বন্ধুদেরকে। আবার এদিকে ছেলে বন্ধুদের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার পরে পড়ালেখার ইতি ঘটিয়ে  ব্যবসা-বানিজ্য ব্যস্ত রয়েছে অনেকে। কেউ আবার বড় মাপের ডিগ্রি অর্জনের লক্ষে বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়ন করছে। আবার কেউ বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে জীবিকার তাগিদে।


এ যেন কঠিন এক বাস্তবতা। এটাই কি জীবন? এটাই কি বাস্তবতা? জীবনের এই কঠিন বাস্তবতায় কোন কিছুই জানা ছিল না সেই সময়। বাস্তব শব্দটির সাথে পুরোই ছিলাম জ্ঞানহীন। একদিন হারিয়ে যাবে এই সকল প্রিয় বন্ধুরা তখন হয়তো ভাবিনি কিংবা মাথায় চিন্তাও আসেনি। এই রকম বাস্তবতার সাথে খুব একটা পরিচিত ছিলাম না। পড়া লেখা এবং বন্ধুদের সাথে আড্ডায় সময় কিভাবে পার হতো তার কোন হিসেব ছিল না।


আজ সেই সকল স্মৃতি প্রতিটি ক্ষনে চোখের পাতায় অশ্রু জরাচ্ছে। এ যেন এক বেদনা দায়ক কষ্ট। তবে কেমন আছে সেই পুরনো বন্ধু জানা নেই, কারণ যোগাযোগ একদমই নেই। যেন ভ্রর্তত্ব বন্ধন চিন্ন হয়ে আজ যেন বড় অসহায় লাগছে। মনটা বার বার ব্যথায় ব্যকুল হয়ে যাচ্ছে। ফিরতে চাচ্ছে সেই পুরনো বন্ধু এবং  সময়ের স্মৃতিতে।


এক সাথে আড্ডায়, গল্পের মধ্যে সময় কাটবে। এর মধ্যে থাকতে চাই সারাজীবন। কিন্তু না! বাস্তব জীবনটা একটু ভিন্ন। যে অতিত হারিয়ে যায় একবার তা কখনো ফিরে পাওয়া যায় না। এটা আমরা সবাই জানি। তবুও মনের আবেগে কত কিছুই না চাওয়া পাওয়া থাকে। মনের সকল চাওয়া পাওয়া পূরণ নাহি হয়।


প্রিয় ছোট বেলার বন্ধু তোদের জন্য অবিরাম দোয়া থাকবে। তার সাথে থাকবে  জীবনের সফলতার মঞ্জিলে পৌছার সাহসিকতা এবং দোয়া। সেই সাথে দোয়া প্রার্থী হয়ে আমিও তোদের কাছে আবেদন করছি... আমার জন্য দোয়া করিস। যেখানে থাকিস ভালো থাকিস।
লেখক: সবুজ আলম ফিরোজ
সাংবাদিক

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে