পাঠকই লেখক: স্নিগ্ধ সকাল , ক্লান্ত দুপুর ,গোধূলী বিকেল ,নিঝুম সন্ধ্যা ,স্তব্দ রাত ,একাকী জীবন ,যান্ত্রিক জীবনে চাওয়া পাওয়ার নেই কিছুই। অনেক অনেক কাজ বাকী এখনো , চলে যাবো এই পৃথিবী ছেড়ে ,যদিও থাকলে কিছুই ক্ষতি হতো না পৃথিবীর। সবই চলবে আপন গতিতে।
হয়তো আমার কোন একটি লেখা যদি ভেসে উঠে ফেসবুকের পাতায় একটি লাইক পড়বে ,কেউ একটা কমেন্টস ,ভুলে কেউ একটা শেয়ার করবে। কোন দোকানে কাগজের প্যাকেটে যদি নজরে আসে কয়েকটি শব্দ ,পুরানো বইয়ের দোকানে হয়তো দু একটালেখা, মলাট হীন ,ছেঁড়া কাগজের বই থাকবে অশ্লীল চিত্রা -বিচিত্রার ভিড়ে। গুগল সার্চে ইউটিবে অপ্রত্যাশিত ভাবে ভিউ হবে আমার কর্কশ কণ্ঠের কবিতা,অভিনয় কিংবা বাবর আলী শো নামের ভিডিও বিনোদন।
যেদিন থাকবো না। পৃথিবী থমকে যাবে না ,তুমি ,সে, তোমরা সবাই নিষ্টুর প্রকৃতির নিয়মে ছুটবে। আমার জায়গায় আসবে নতুন কেউ। কেউ হবে তোমার,তোমাদের আপন ,অতি আপন জন,বন্ধু সুজন। আমার কিছুই থাকবে না ,আমার ঘামের অর্থ ,জায়গা ,জমি , প্রেম ভালোবাসা আদর সোহাগ সব হারিয়ে যাবে কালের আঁধারে। মহাজ্ঞানী,মহাকবি,মহান নেতা হতে চাইনি ,বিশ্বপ্রেমিক হতে চাইনি ,ভালো পিতা ,শ্রেষ্ঠ বন্ধু হতে চাইনি। মানুষ হতে চেয়েছিলাম ,হতে পারিনি।
বেঁচে থাকতে যখন যাকে যতটুকু দিতে চেয়েছি ,অন্তর থেকে ,হৃদয় উজাড় করে দিয়েছি। বিনিময়ে কষ্ট,কষ্ট আর কষ্ট পেয়েছি।বিদায় বেলায় কিছু অভিমান ,কিছু স্মৃতি নিয়ে গেলাম। স্বার্থপরতার বিষাক্ত স্মৃতি নিয়ে গেলাম। রক্তাক্ত স্মৃতি ,হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণের স্মৃতি ,বিকলাঙ্গ ,বধির,অন্ধ হয়ে সয়ে যাওয়ার স্মৃতি ,বুকের মাঝে পাহাড় সম যন্ত্রনা নিয়ে গেলাম। কিছু অপমান সয়ে গেলাম,অনেক অসামঞ্জস্য দেখে গেলাম ,অবিচার কি সাজানো গোছানো সুন্দর অবিচার দেখে গেলাম। আমার বিশ্বাস,আমার ধর্ম নিয়ে তামাসা দেখে গেলাম। উফ করে শব্দ করতে না পারার বেদনা নিয়ে গেলাম। কারো কাছে প্রশ্ন করতে না পারার অক্ষমতা নিয়ে গেলাম।
এই পৃথিবীর মানুষ ,যদি সময় হয় কখনো ,আমার শব্দের গাঁথা, গন্ধহীন ,বর্ণ হীন লেখা গুলি দেখ ,কি চেয়েছিলাম,কি বোঝাতে চেয়েছিলাম ।কোন লেখায় ভালোবাসা ,কোন লেখায় প্রেম , কোন লেখায় ধর্ম ,কোন লেখায় কর্ম ,কোন লেখায় না পাওয়ার বেদনা ,কোন লেখায় ছিলো স্বপ্ন। জানি পড়বে না কেউ ।
বেঁচে থাকতে বলতে এতো বড় লেখা,পড়ার সময় কোথায় ?যাবার বেলায়, বলে যাই ,আমি কিন্তু ব্যবহার হয়েছি ,সবসময় ব্যবহার হয়েছি,সবাই চায় বিনিময়,বিনিময়ে ব্যবহার হয়েছি ! কখনো বাসরের বিছানায়,কখনো দায়িত্ব কর্তব্যের কোয়েদ খানায় ,কখনো পত্রিকার পাতায় ,কখনো এক রত্তি ভালোবাসায়,কখনো নিজেই নিজের কাছে ব্যাবহার হয়েছি ।
মুক্তি যুদ্ধ দেখিনি তবু আমি যুদ্ধ করেছি আমার কবিতায় ,মঞ্চের নাটকে আগামীর প্রজন্মের কাছে তুলে ধরেছি স্বাধীনতার ইতিহাস ,রক্তাক্ত ইতিহাস। স্বৈরাচার নিপাতের আন্দোলনে রাজপথের স্লোগান দিয়েছি , সময়ের ঘূর্ণণে মৃত্যুর আগে নির্লজ্জ স্বৈরাচারের নগ্ন নৃত্য দেখেছি ! দেশদ্রোহীদের গাড়িতে দেখেছি লাল পতাকা। দুর্দান্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার বীরত্বের কাহিনী উজ্জীবিত হয়েছি ,ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ,তাদের সাথে শত্রুর গলাগলি দেখেছি।
বিশ্ব জুড়ে দেখে গেলাম অস্থিরতা ,ক্ষমতার জন্যে খুন আর বর্বরতা। বিধাতার কাছে চাইবার নেই কিছুই ,পৃথিবী দেখিয়েছেন এতেই ঋণী। অপরাধের শাস্তি দেবেন আগেই বলেছেন। তবে হ্যা ,আক্ষেপ আছে , পাঠিয়েছেন পৃথিবীতে পঙ্গু করে ,অন্ধ করে,বধির করে। চিন্তা দিয়েছেন ,সেই মোতাবেক কাজ করার আনুষাঙ্গিক কিছুই দেননি,অর্থ,বিত্ত ,বৈভব কিছুই না ,দিয়েছেন সামান্য একটু মগজ ,যার মাঝে হিংসা আর স্বার্থপরতায় ভরপুর ! সারা জীবন পরের গোলামী করার সার্টিফিকেট! অবৈধ অর্থের মালিক ,চোরা কারবারি ,ক্ষমতা বাজির মগজ দেননি। এক পা এগোলেই পিছুটান ,সতর্কতা সংকেত ,বিপদ জনক রেড সিগন্যাল , এমন পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন , যেখানে কবিতা লিখতে হয় হিসেবে কষে ,এমন পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন , যেখানে বন্ড সই দিতে হয় কবি কোন পক্ষের, এমন পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন ,যেখানে কবুল করা শয্যা সঙ্গীর চাইতে বারবনিতা সস্তা। প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে এক বিদপদ জনক জীবন নিয়ে দিন অতিবাহিত করেছি। প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর খড়গ ছিলো উপর। দরিদ্র করে পাঠিয়ে পৃথিবীতে স্বপ্ন দিয়েছে অনেক। যা কেবলি দুঃস্বপ্ন হয়ে ছিলো সারাটি জীবন জুড়ে !
ক্ষমা করো হে পৃথিবী ,কোন কাজে আসিনি কারো, কাজে আসিনি তোমার । ক্ষমা করো। শুধু তোমার বুকে চালিয়েছি খুন রাহাজানির অস্ত্র। ভারসাম্য রক্ষার বরফ গলিয়ে করে দিচ্ছি পানি,শীত কালে নিয়ে এসেছি বর্ষা ,সারা পৃথিবী জুড়ে রেডিয়েশন,আর রেডিয়েশন।সৃষ্টি নয় ধ্বংসে পারদর্শী। ক্ষমা করো হে পৃথিবী।
লেখক: মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বাবু (সিঙ্গাপুর প্রবাসী)
৬ আগস্ট ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এইচএস/কেএস