এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় আলুর উৎপাদন খরচ প্রতি কেজি ২৩ টাকা হলেও পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৪ টাকায়। ফলে কৃষকরা প্রতিকেজি প্রায় ১০ টাকা লোকসান করছেন।
উদপাড়া এলাকার চাষি জলিল সরদার বলেন, ছোট্ট মেয়েটির জন্য ইলিশ কিনতে হাটে আলু বিক্রি করেছেন তিনি। শুক্রবার তাহেরপুর হাটে পাঁচ মণ আলু বিক্রি করে ২৭৫০ টাকা অর্জন করলেও, অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার পর পর্যাপ্ত অর্থ থাকা সত্ত্বেও ইলিশ কেনা সম্ভব হয়নি। জলিল অভিযোগ করেন, “সামনের বছর আর আলু চাষ করব না। এর চেয়ে মানুষের বাড়িতে কামলা দেওয়া ভাল।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী, বাগমারায় এই মৌসুমে ৯৮৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। মোট উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫০০ টন। উৎপাদনে মোট খরচ হয়েছে ৭৫৬ কোটি ৬৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা, কিন্তু বাজার মূল্যে বিক্রি হলে আয় হবে মাত্র ৪৪৫ কোটি ৪১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এতে কৃষকের লোকসান দাঁড়িয়েছে ৩৩১ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
যোগীপাড়া ইউনিয়নের চাষি সামছুর রহমান বলেন, “পাইকারি বাজারে দাম কম, খুচরা বাজারে বেশি। কৃষি বিপণন ব্যবস্থার কারণে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে।”
রাজশাহী অঞ্চলের কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সুমন হালদার জানান, পাইকারি বাজারে আলু ১৩-১৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে তা ২০-২১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ে আবেদন দেওয়া হয়েছে, আশা করা হচ্ছে দাম কিছুটা বাড়বে।
হামিরকুৎসা ইউনিয়নের জহুরুল ইসলাম এবারের আলু চাষ থেকে দুই লাখ ৫৭ হাজার টাকার ক্ষতির মুখোমুখি। তিনি জানান, ঋণ ও সার-ওষুধের টাকা পরিশোধের জন্য হিমাগারের খরচও দিতে পারছেন না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “খাদ্যে উদ্বৃত্ত থাকলেও কৃষকরা দাম না পেয়ে হতাশ। আগামী বছরে আলু চাষে অনুৎসাহী হবেন।”
রাজশাহী কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্র জানায়, চলতি বছরে রাজশাহীর মোট ৩৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। বাগমারার উৎপাদন ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫০০ টন, মোহনপুরে ১ লাখ ১ হাজার ৬৮৬ টন, পবায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৩৫ টন, দুর্গাপুরে ৫ হাজার ৩৭০ টন ও চারঘাটে ৭ হাজার ৭৮১ টন। আঞ্চলিক কৃষি কর্মকর্তা মোছা. ফরিদা ইয়াসমিন জানান, কিছুদিনের মধ্যে আলুর দাম বাড়তে পারে।