আবদুল মান্নান : রিয়াজুলভিমরুলের আক্রমণ থেকে বন্ধুকে বাঁচাতে চেয়েছিল সে। কিন্তু ভিমরুলের আক্রমণে তাকেই প্রাণ দিতে হলো। মাত্র আট বছরের এই ছেলেটির মৃত্যুতে আত্মীয়স্বজন তো বটেই, গ্রামের লোকজনও কেঁদেছেন।
ছেলেটির নাম রিয়াজুল ইসলাম ওরফে রিশান (৮)। সে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গোল্লারপাড় গ্রামের সুরুজ্জামানের ছেলে। রিশান পৌর শহরের সেঁজুতি বিদ্যানিকেতনের প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল। একই গ্রামের তার বন্ধুটির নাম সোহাগ মিয়া (৯)। সোহাগ গোল্লারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে রিশানের পরিবারের লোকজন বলেছেন, গত বুধবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে রিশান ও সোহাগ সাইকেলে চড়ে বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে বেড়াতে যায়। সেখানে সড়কের পাশের একটি গাছে ভিমরুলের চাক ছিল। সোহাগ ওই চাকে ঢিল ছোড়ে। এতে কয়েকটি ভিমরুল ছুটে এসে সোহাগের শরীরে হুল ফোটায়। এ সময় তাকে রক্ষা করতে রিশান এগিয়ে যায়। একঝাঁক ভিমরুল তাকে ঘিরে ধরে হুল ফোটায়। একপর্যায়ে সোহাগ দৌড়ে পালায়। কিন্তু রিশান হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায়। তখন অসংখ্য ভিমরুল তার শরীরে হুল ফোটায়। এতে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলে সে। পরে গ্রামবাসী দুই বন্ধুকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে রিশানের অবস্থার অবনতি হলে সন্ধ্যার দিকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে রাত সাড়ে আটটার দিকে রিশানের মৃত্যু হয়।
রিশানের বাবা সুরুজ্জামান বলেছেন, গত সপ্তাহে ছেলেটির পছন্দমতো একটা সাইকেল কিনে দিয়েছিলাম। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরেই সে সাইকেল নিয়ে বের হতো। বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে বেড়াত। এভাবে ছেলেটি আমাদের ছেড়ে চলে যাবে, স্বপ্নেও ভাবিনি।
গোল্লারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, দুই বন্ধু প্রায় সময়ই একসঙ্গে থাকত। সোহাগকে বাঁচাতে গিয়ে রিশানের এমন করুণ মৃত্যু সবাইকে কাঁদিয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মসিউর রহমান বলেন, রিশানের শরীরে ভিমরুলের অসংখ্য হুল ফোটানো ছিল। রাতে ময়মনসিংহ মেডিকেলে তার মৃত্যু হয়। আর সোহাগকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সে শঙ্কামুক্ত।-প্রথম আলো
৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/এমকেএইচ