শেরপুর : শেরপুর শহর থেকে ২৮ কিলোমিটার আর নালিতাবাড়ী উপজেলা শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে বাঘবেড় গ্রাম। সেই ব্রজেন্দ্র মাস্টারের বাড়ি।
নালিতাবাড়ী-নন্নী সড়কের পূর্ব পাশে অবস্থিত এ বাড়িটি। আবার কেউ বলেন মেম্বারবাড়ি। তবে এখন এ বাড়িটি শুধু মেম্বার আর মাস্টারের বাড়িই নয়, বাড়িটি এখন পাখির দখলে।
বিলুপ্ত প্রায় কালো পানকৌরি আর সাদা বকের বাড়ি এটি। ওদেরই দখলেই পুরো বাড়িটি। সহস্রাধিক বক আর পানকৌরি মিলে বছরের পর বছর ধরে দখলে নিয়েছে বজেন্দ্র মাস্টারের বাড়ি।
যেন বক আর পানকৌরিদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে বাড়িটি। প্রায় এক যুগেরও অধিক সময় ধরে তার বাড়ির বাঁশঝাড় ও অন্যান্য গাছজুড়ে পাখ-পাখালির কোলাহল।
প্রতিবছরই একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে ব্রজেন্দ্র মাস্টারের বাড়িজুড়ে শোভা পায় পানকৌরি আর বকের মেলা। সকাল-সন্ধ্যায় পানকৌরি আর ঝাঁকে ঝাঁকে বকের কোলাহলে মুগ্ধ হন পাখিপ্রেমীরাও।
বাড়ির বাঁশঝাঁড় আর গাছগাছালি যেন এদের আলাদা এক পৃথিবী। দেখে বিশ্বাস করার মতো নয় যে, এরা মানুষের সাথে নিরাপদে এতো কাছাকাছি বসবাস করছে। অথচ ব্রজেন্দ্র মাস্টারের ভালোবাসা নিয়ে এরা আছে নিজেদের রাজত্বে। বাড়িজুড়ে মানুষ নয়, পাখিদেরই রাজত্ব।
সারাদিন খাল-বিল আর নদী-নালায় খাবার চাহিদা মিটিয়ে সন্ধ্যা নামার আগেই বাড়ি ফিরতে শুরু করে ঝাঁকে ঝাঁকে। এসময় বাড়ির চারপাশে শুধু তাদেরই কোলাহল ভেসে বেড়ায়।
কোনোটা বাঁশের ডগায় বসে ডানা ঝারছে আবার কোনোটা বা বাঁশের এক কঞ্চি থেকে আরেক কঞ্চিতে উড়াউড়ি আর ডাকাডাকি করে। সাদা বক আর কালো পানকৌরিরা মিলে সাদা-কালোর এক দারুণ সমাহার।
এ দৃশ্য দেখলে যে কারো মনটা জুড়িয়ে যাবে। নীলাভ অথবা মেঘলা আকাশের নিচে বাঁশপাতার সবুজ গালিচার ওপর এ দৃশ্য সতিই চোখ জোড়ানো।
সবুজের এ গালিচায় পাখিদের সাদা চকচকে মল থেকে অসহনীয় গন্ধ আসলেও কেউই তা ভ্রুক্ষেপ করে না। বয়সের ভারে ন্যুব্জ ব্রজেন্দ্র মাস্টার বসে থাকেন এরই আশপাশে।
হয়তো জীবনের শেষ সময়টুকু পাখিদের সঙ্গে কাটিয়ে দেবেন বলেই তার এ বসে থাকা।
এখানে বক ও পানকৌরির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
ফলে ব্রজেন্দ্র মাস্টারের বাড়িতে জায়গা আর ধরে না। তাই বাচ্চা ফুটাবার পর বড় হয়ে উঠলে নতুনেরা আবার একটু দূরে আরেকটি বাঁশ ঝাড়ে আশ্রয় নিতে শুরু করে। এ গ্রামের দু’টি পাড়ায় বাক আর পানকৌরিদের দুটি অভয়াশ্রম তৈরি হয়েছে।
বাড়ির মালিক ব্রজেন্দ্র মাস্টার (৮০) জানান, এরা আমার পরিবারের সদস্য। আমি এদের আমার সন্তান মনে করি। এদের নিরাপদ আশ্রয়ের কথা ভেবে বাঁশের ঝাড় থেকে একটি বাঁশও কোনোদিন কাটিনি।
তিনি জানান, বাঁশ ঝাড়ের নিচেই এদের সাময়িক আহারের ব্যবস্থা করতে তিনি পুকুরে মাছ লালন পালন করে থাকেন। আবার পাখির বিষ্ঠা মাছের আহারে কাজে আসে। মাছ-পাখি আর ব্রজেন্দ্র মাস্টার এখানে এক সুতোয় গাঁথা।
এলাকাবাসী জানান, গ্রামের এ বাড়িটি তাদের অহংকার। অনেক জায়গা থেকে মানুষ আসে বক আর পানকৌরি দেখতে। এতে তারাও আনন্দ পান। কোন শিকারীকে এ এলাকায় ঢুকতেও দেন না তারা।
২৪ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম