বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৪:২৬:২৬

যে গ্রামে দেড় যুগ ধরে কোরবানিতে একই নিয়ম

যে গ্রামে দেড় যুগ ধরে কোরবানিতে একই নিয়ম

টাঙ্গাইল : পোস্টকামুরী গ্রাম, দেড় যুগ ধরে কোরবানিতে একই নিয়ম চালু রয়েছে।  গ্রামটিতে রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকলেও কোরবানির ক্ষেত্রে সবাই যেন একই পরিবারের।

১২০০ পরিবার একসঙ্গে এক সমাজে কোরবানি করেছেন।  প্রায় দেড় যুগ ধরে এ রীতি চলে আসছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর পৌর শহরের পোস্টকামুরী গ্রামে।

এ বছর ১০৫টি গরু ও ৭টি খাসি কোরবানি করা হয়েছে।  জনপ্রতি ৭৫০ গ্রাম করে গ্রামের প্রায় ৬ হাজার পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।  পাশের গ্রামের সহস্রাধিক মানুষের মধ্যেও কোরবানির মাংস বিতরণ করা হয়।

বিতরণ করা মাংসের পরিমাণ ছিল ১৩৩ মণ।  ওই গ্রামে ঈদের আগের দিন যে শিশু জন্মগ্রহণ করেছে সেও এক ভাগ মাংসের অংশীদার।

জানা গেছে, গ্রামটির বাসিন্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. একাব্বর হোসেন এমপি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন মনি, যুগ্ম সম্পাদক ও পৌর মেয়র সাহাদৎ হোসেন সুমন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ উদ্দিন আছু ও উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মোতালেব হোসেন।

পৌর শ্রমিকলীগের সভাপতি মো. আলী হোসেন শিকদার, যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজহারুল ইসলাম শিপলু, মো. শামীম আল মামুন, পৌর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আবু বক্কর শিকদার, মো. শরীফুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ ও আব্দুল কাদের শিকদার, পৌর বিএনপির সভাপতি হযরত আলী মিয়া, পৌর যুবদলের সভাপতি মো. সেলিম মিয়া ও সম্পাদক রিপন মিয়া, উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু আহমেদ, পৌর জাতীয় পার্টির সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন আহমেদের বাড়িও এ গ্রামে।

আলহাজ শফি উদ্দিন মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে গ্রামবাসী পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। গ্রামে যারা পশু কোরবানি দেন, তারা প্রতিটি পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ সামাজের মানুষের জন্য জমা রাখেন।  

এ বছর কোরবানির দিন সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হলে একত্রে কোরবানি দিতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় গ্রামবাসীকে।

পরে গ্রামের মাতবররা একমত হয়ে মসজিদের মাইক দিয়ে নিজ নিজ বাড়িতে কোরবানি দেয়ার জন্য ঘোষণা দেন।  সমাজের ভাগের মাংস সংগ্রহের জন্য গ্রামের ২৪০ জন যুবক দিয়ে কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়।  পরে পিকআপ ও ভ্যান নিয়ে তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংস সংগ্রহ করে স্কুলের মাঠে জমা করেন।  

গ্রামের প্রতিটি পরিবারে কতজন সদস্য রয়েছেন তার তালিকা ঈদুল আজহার আগেই স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে করা হয়।  জনসংখ্যার গড় হিসাব করে মাথাপ্রতি মাংস প্যাকেটজাত করা হয়।

বিকেল ৩টার পর পাঁচটি কাউন্টার খুলে স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে নাম ডেকে মাংস বিতরণ করা হয়।  শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গ্রামের মাতবররা উপস্থিত থেকে মাংস বিতরণ করেন।  এ বছর প্রতিজনকে ৭৫০ গ্রাম করে মাংস দেয়া হয়েছে।

গ্রামটিতে চারটি মসজিদ থাকলেও সমাজ একটি। এক সমাজের মাধ্যমে গ্রামটিতে পশু কোরবানি বিরল দৃষ্টান্ত।  গ্রামটির জনসংখ্যা প্রায় ৬ হাজার।  পরিবার রয়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০।

জমা করা মাংস সমাজের আওতাভুক্ত ধনী-গরিব সবাইকে সমান হারে মাথাপ্রতি হিসাব করে দেয়ার পর অতিরিক্ত কিছু মাংস গরিব ও দুস্থদের জন্য রাখা হয়।  সে মাংস পরে তাদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
এ নিয়মে মাংস বিতরণে কেউ মাংস পাওয়া থেকে বাদ যান না।
এসএস১৫ সেপ্টেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে