টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুর রাজ্জাক (৪২) অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন। যেখানে ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য অনেক কিছু 'মেন্টেন' করেন, সেখানে পৌরসভার কাউন্সিলর হয়েও নিজ হাতে চা বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত ১০ বছর ধরে তিনি ফুটপাতের একটি দোকানে চা বিক্রি করে চালাচ্ছেন সংসার!
কাউন্সিলর আব্দুর রাজ্জাকের বাড়ি বাইমহাটি গ্রামে। তার পিতার নাম মো. নাজিম উদ্দিন। আজ রবিবারও উপজেলা সদরের জামে মসজিদ ও বাইমহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ফুটপাতের মুদি দোকানে আব্দুর রাজ্জাককে চা বিক্রি করেন।
আব্দুর রাজ্জাক একজন সৎ ও জনদরদী হিসেবে এলাকায় সুপরিচিত। এলাকাবাসীর অনুরোধে ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত মির্জাপুর পৌরসভার নির্বাচনে ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেন আব্দুর রাজ্জাক। বিপুল ভোটে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। পৌরসভার পক্ষ থেকে তার ওয়ার্ডের উন্নয়নের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় তার পুরোটাই এবং পৌরসভার পক্ষ থেকে যে পরিমাণ সামান্য ভাতার টাকা পান সেটাও তিনি জনগনের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করে থাকেন। মুদি দোকানে চা বিক্রি করে যা আয় রোজগার করেন, তাই দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালান।
আব্দুর রাজ্জাকের পিতা মো. নাজিম উদ্দিন একজন দিনমজুর। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক বড়। বাবা দিনমজুর হলেও সততার সঙ্গে অন্যের বাসা বাড়ি ও ইট ভাটায় কাজ করে সংসার চালাতেন। এক সময় উত্তরাঞ্চল থেকে ইটভাটা শ্রমিক এনে বিভিন্ন ইটভাটায় সাপ্লাই দিতেন। কোনো দিন খেয়ে আবার কোনো না খেয়ে চলতো তাদের সংসার। দরিদ্রের সংসার হলেও শিক্ষার প্রতি আব্দুর রাজ্জাকের স্বপ্ন ছিল অনেক বড় হওয়ার।
১৯৯৬ সালে মির্জাপুর এস কে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে মির্জাপুর ডিগ্রি কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হন। অর্থের অভাবে এইচএসসি পাশ করা সম্ভব হয়নি। পরিবারের হাল ধরতে তাকে দিন মজুরী করতে হয়। পাশাপাশি সন্ধ্যায় মুদির দোকানে চা বিক্রি। বাবা মায়ের অনুরোধে ২০০৩ সালে বিয়ে করেন। বিয়ের পর এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা হন। বড় মেয়ে দৃষ্টি মনি আক্তার (১২) ৭ম শ্রেণিতে এবং ছোট ছেলে আব্দুর রহমান (৬) নার্সারিতে পড়াশোনা করছেন।
মির্জাপুর পৌরসভার মেয়র শাহাদত্ হোসেন সুমন বলেন, কাউন্সিলর আব্দুর রাজ্জাক একজন সত্, দায়িত্বশীল, ন্যায়পরায়ণ, ভাল ও উদার মনের মানুষ। তিনি অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন, যা আমাদের জন্য গর্বের।