ভোলা: ভোলা সদর উপজেলার বাঘার হাওলা গ্রামের সৌদিপ্রবাসী মো. জসিমের স্ত্রী জোসনা বেগম (৪০)। কয়েক দিন ধরে তিনি অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন। সময়-অসময়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পালাতে শুরু করেন। আবার কথাবার্তাও বলেন অস্বাভাবিক। এসব দেখে পরিবারের সদস্যদের ধারণা হয় তাকে জিনে ধরেছে। এই জিন তাড়ানোর নামে তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন ওঝা। এতে তার শরীরের ৫০ শতাংশ পুড়ে গেছে। এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন তিনি।
জোসনার মা মাহফুজা বেগম জানান, জোসনার জিন তাড়ানোর জন্য পাশের গ্রামের ওঝা বেলায়েত হোসেন ও তার নাতনি রুনা বেগমকে (১৩) ডেকে আনা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে জোসনার বাড়িতেই জিন তাড়ানোর আয়োজন করেন বেলায়েত ও রুনা। এ জন্য জোসনার মুখমণ্ডলসহ পুরো শরীরে কেরোসিন মাখিয়ে দেয় কিশোরী রুনা। একপর্যায়ে সামনে থাকা আগরবাতি থেকে জোসনার শরীরে আগুন ধরে যায়। এতে জোসনা যন্ত্রণায় চিৎকার শুরু করলে পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কিন্তু রুনা আগুন নেভানো থেকে তাদের বিরত রাখে। সে বলে, 'আমি তো মানুষ পোড়ায় না, শয়তান পুইড়্যা দূর করি।' এক সময় জোসনার পুরো শরীরে আগুন ধরে গেলে উপস্থিত লোকজন ওঝার কথা না শুনে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। পরে তাকে ভোলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা জানান, জোসনার শরীরের ৫০ শতাংশ পুড়ে গেছে। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় শুক্রবার দুপুরে অভিযুক্ত রুনার নানা বেলায়েত হোসেন ও নানি অহিদা বেগমকে আটক করেছে পুলিশ। তবে মূল অভিযুক্ত রুনাকে আটক করা যায়নি। সে এখন পলাতক।
স্থানীয়রা জানান, রুনার নানা বেলায়েত হোসেন ঝাড়ফুঁক দিয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করতেন। ব্যবসা জমজমাট করার জন্য সম্প্রতি ১৩ বছরের নাতনি রুনাকে ওঝা সাজিয়ে প্রতারণা শুরু করেন তিনি। প্রচার করেন, রুনার মধ্যে অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের অনেকেই তার কাছেও চিকিৎসা নিতে শুরু করেন। সেই রুনার ভুলেই প্রাণ হারাতে বসেছেন চার সন্তানের মা জোসনা বেগম।
ভোলা সদর মডেল থানার ওসি ছগির মিঞা জানান, এ ঘটনায় দু'জনকে আটক করা হয়েছে। জড়িত অন্যদের আটকে অভিযানে চলছে।