বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৭, ০২:০১:৪৯

সিরিয়ায় আত্মঘাতী জঙ্গি চট্টগ্রামের নিয়াজ

 সিরিয়ায় আত্মঘাতী জঙ্গি চট্টগ্রামের নিয়াজ

নিউজ ডেস্ক: সিরিয়ায় এক বাংলাদেশি আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীর ভিডিও প্রকাশ করেছে আইএস (ইসলামিক স্টেট)। গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ এই ভিডিও প্রকাশ করে। দেশে পারিবারিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, ভিডিওর ওই ব্যক্তির নাম মো. নিয়াজ মোর্শেদ রাজা। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে।

গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার পর র‍্যাব নিখোঁজ ব্যক্তিদের যে তালিকা প্রকাশ করে, সেখানেও নিয়াজের নাম ছিল। পরিবারের দাবি, বছর দুয়েক ধরে তাঁরা নিয়াজের কোনো খোঁজ পাচ্ছিলেন না।

ইন্টারনেটে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর তৎপরতা নজরদারিতে যুক্ত সাইট ইন্টেলিজেন্সের ওয়েবসাইটে বলা হয়, আইএসের সহযোগী ফুরাত মিডিয়া বাংলাদেশি এই আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীর ভিডিও প্রকাশ করেছে। সেখানে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীকে ‘বেঙ্গলি সুইসাইড বোম্বার’ হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়েছে। ভিডিওটি আত্মঘাতী বোমা হামলার আগে ধারণ করা হয়েছে। হামলাকারী বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, আত্মঘাতী এই হামলাকারীর নাম নিয়াজ মোর্শেদ রাজা। তবে আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা হয়নি।

খোঁজখবর করে জানা গেছে, নিয়াজ মোর্শেদের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার খান্দাকিয়ায়। তাঁর বাবার নাম এ কে এম কামালউদ্দিন আহমেদ ও মায়ের নাম মাহবুবা কামাল। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে নিয়াজ সবার ছোট।

নিয়াজের বোন জান্নাতুল মাওয়া গতকাল মুঠোফোনে বলেন, নিয়াজ চট্টগ্রাম গ্রামার স্কুল (সিজিএস) থেকে ‘এ লেভেল’ পাস করে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান। সেখানে ব্যবসায় প্রশাসন ও তথ্যপ্রযুক্তির ওপর পড়াশোনা করেন। এরপর সুইডেনে চলে যান। গত দুই বছর তাঁর সঙ্গে পরিবারের কোনো যোগাযোগ নেই। তবে নিয়াজ যে জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন, সে খবর তাঁরা শুনেছেন। এ কারণে তাঁর অসুস্থ মা খুব কান্নাকাটিও করতেন।

জান্নাতুল মাওয়া বলেন, ২০১১ সালে তাঁদের বাবা মারা যান। তখন থেকে মা মাহবুবা কামাল মানসিকভাবে অসুস্থ। ওই বছরই নিয়াজ বিয়ে করেন। তিনি দুই সন্তানের বাবা। নিয়াজের স্ত্রী ও সন্তানেরা এখন ঢাকায়। নিয়াজের কারণে তাঁর স্ত্রী বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

নিয়াজের আগে আইএস-অধ্যুষিত এলাকায় নিহত হয়েছেন এমন অন্তত দুজন বাংলাদেশি জঙ্গির খবর বের হয়েছে। তাঁরা হলেন গোপালগঞ্জের সাইফুল হক ও ঢাকার আশিকুর রহমান জিলানী। তাঁদের মধ্যে সাইফুল হক নিহত হন ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন বিমান হামলায়। সাইফুল আইএসের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন বলে তখন মার্কিন কমান্ডার সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন।

গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলার পর এ পর্যন্ত বাংলাদেশি জঙ্গিদের নিয়ে আইএসের তিনটি ভিডিও প্রকাশিত হলো। গত বছরের ১ জুলাই হলি আর্টিজানে হামলার পাঁচ দিন পর সিরিয়ার রাকায় ধারণকৃত একটি ভিডিও প্রকাশ করে আইএস। ওই ভিডিওতে তাহমিদ সাফি, আরাফাত হোসেন (তুষার) ও তাওসিফ হোসেন হলি আর্টিজানে হামলাকারী পাঁচ জঙ্গিকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা দেন। দ্বিতীয়টি প্রকাশ পায় গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর। ওই ভিডিওতে হলি আর্টিজানে হামলাকারী পাঁচজনের প্রশংসা করে বাংলা ও আরবি ভাষায় গণতন্ত্র ও দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের কঠোর সমালোচনা করা হয়।

সর্বশেষ গতকালের ভিডিওটির বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক এলাহী চৌধুরী বলেন, সিরিয়ার রাকা ও ইরাকের মসুলে আইএস প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েছে। তাদের এখন আত্মঘাতী হওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। অনেকে সাধারণ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু আইএসের বিদেশি জঙ্গিরা পরিচয় লুকানোর সুযোগ পাচ্ছে না, তাই এসব আত্মঘাতী হামলা। তিনি বলেন, যারা আইএসে ভিড়েছে, কোনো অবস্থাতেই তাদের দেশে ফিরতে দেওয়া ঠিক হবে না। সন্তানেরা যেন জঙ্গিবাদে না জড়ায়, সে জন্য অভিভাবকদের তৎপর থাকারও অনুরোধ করেন তিনি।-প্রথম আলো
১৬ মার্চ ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে