সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম): বৃদ্ধা মাকে শিব চতুর্দশী মেলায় চন্দ্রনাথ তীর্থ দর্শনের কথা বলে সীতাকুণ্ড মহাতীর্থে এনে ফেলে রেখে পালিয়ে গেলেন তারই বড় ছেলে! সোমবার তাকে ফেলে রেখে যাবার পর থেকে বৃদ্ধা সীতাকুণ্ড মন্দির সড়কের বটতলী কালী বাড়িতে আশ্রিতা হয়ে আছেন। তবে এই বৃদ্ধার আশা কেউ না কেউ তাকে ছেলের কাছে নিয়ে যাবে। তিনি যাকেই কাছে পাচ্ছেন তার কাছেই ছেলের কাছে যাবার আবদার করে বসছেন। এ ঘটনায় তাঁর ছেলেদের বিবেক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকালে আনুমানিক ৮০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধাকে সীতাকুণ্ড মহাতীর্থের বটতলী কালী মন্দিরে এনে রেখে যান অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজন ব্যক্তি। তারা জানান, বৃদ্ধাটির ছেলে তাকে ফেলে রেখে চলে গেছেন। এরপর থেকে মন্দির কমিটি ও স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় তিনি সেখানে আছেন।
এ খবর পেয়ে বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টায় বটতলী কালী মন্দিরে গেলে দেখা যায়, একটি কম্বল পেতে মেঝেতে বসে মুড়ি খাচ্ছিলেন বৃদ্ধা। তিনি জানান, তার নাম পারুল চক্রবর্তী। তার স্বামীর নাম মৃত গোপাল চক্রবর্তী। তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার এনায়েতপুর গ্রামে। তাঁর ৫ ছেলে মেয়ে আছে। তিনজন মেয়ে ও দুই জন ছেলে। এরা হলো সৃজন চক্রবর্তী, সুমন চক্রবর্তী, সীমা, রুমকি ও শিলনী চক্রবর্তী। তাঁরা সবাই বিবাহিত। তবে দীর্ঘদিন ধরে তিনি দুই ছেলের সাথে চট্টগ্রামের মেয়র গলিতে (পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা জানাতে পারেননি) বাস করছেন।
বৃদ্ধা পারুল জানান, সীতাকুণ্ডে চন্দ্রনাথ দর্শনের কথা বলে সোমবার তাকে বড় ছেলে টেইলার্স সৃজন চক্রবর্তী সীতাকুণ্ড নিয়ে আসেন। এরপর কাজের অর্ডার বেশি আছে অনেক জামা-কাপড় সেলাই করতে হবে জানিয়ে ছেলে চলে যায়। যাবার সময় মাকে বলে যায় যে সে আবার এসে তাকে নিয়ে যাবে। কিন্তু অসহায় বৃদ্ধকে ফেলে রেখে সে যাবার পর আর ফিরে আসেনি। এর মধ্যে কয়েকজন তাকে নিয়ে আসে এই কালী বাড়িতে। ফলে এখন এই কালী বাড়ির আশ্রয়েই রয়েছেন তিনি।
বৃদ্ধা জানান, তাকে টেক্সিতে তুলে দিলে তিনি ছেলের কাছে চলে যাবেন। তবে ছেলের বর্তমান ঠিকানা চট্টগ্রামের মেয়র গলি বলে জানালেও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা বলতে পারেননি তিনি। তিনি আরো জানান, তার শরীর ব্যথা হয়ে আছে তার ব্যথার ওষুধ লাগবে। তাই তিনি ছেলের কাছে যেতে চান।
এ বিষয়ে বটতলী কালী বাড়ি মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিউটন ধর বলেন, মেলার এই কয়েকদিন আমরা বিভিন্ন মঠ-মন্দির নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এবার বৃদ্ধাকে কোথায় রাখা যায় দেখি।
মেলা কমিটির কার্যকরী সভাপতি ইউএনও মিল্টন রায় বলেন, আমি এ বিষয়টি জানতাম না। মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পলাশ চৌধুরীর সাথে সমন্বয় করে উনাকে শঙ্কর মঠ অথবা আশ্রমে রাখার ব্যবস্থা করবেন বলে জানান তিনি।