এস এম রেজাউল করিম, ঝালকাঠি : বিচার ও নিরাপত্তা না পেলে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন ঝালকাঠির মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী মরিয়ম আক্তার মুক্তা। একটি খুদে বার্তা মাধ্যমে তিনি এ কথা জানিয়েছেন।
এ প্রতিনিধির মোবাইল ফোনে শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে খুদে বার্তা পাঠান শিক্ষিকা মুক্তা। ওই বার্তায় তিনি তার পরিবারের নিরাপত্তাহীনতার কথা জানান।
বিষয়টি ঝালকাঠি পুলিশ সুপার মো. জোবায়েদুর রহমানকে জানানো পর তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেন। তিনি জানান, শিক্ষিকা মুক্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। রাজাপুরের ওসি তার বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেছেন। শিক্ষিকা মুক্তা ও তার পরিবারের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বার্তায় লেখা ছিল, ‘আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যদি আমার নিরাপত্তা না পাই তাহলে আমি আত্মহত্যা করে প্রমাণ করবো সত্যি কথার কোনও বিচার নেই। দেশে নিরাপরাধ মানুষের জন্য কোনও আইন নেই। সরকার আমারদের পাশে নেই (মুক্তা)।’
আসামিরা যুবলীগের নেতা হওয়ায় মামলার বাদী ও সাক্ষীরা আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
মামলার এক নম্বর সাক্ষী শিক্ষিকা মুক্তা আরও জানিয়েছেন, মামলার পর থেকেই আসামিদের হুমকিতে তিনি এলাকাছাড়া। তিনি বলেন, ‘আমার মাকে ফোন দিচ্ছে আসামি ও তার সহযোগীরা। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমানের ছোট ভাই আওয়ামী লীগ নেতা ঠাণ্ডু আমাকে বলেছেন, সাক্ষী দিলে আমার পরিবারের সদস্যদের প্রাণে মেরে ফেলবেন। অকথ্য ভাষায় গালাগালও করেছেন। আসামিরা দুর্ধর্ষ প্রকৃতির লোক। এলাকায় তারা মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে পরিচিত।’ দিনে দুপুরে মানুষ মেরে ফেলতে পারেন বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই শিক্ষিকা। হুমকি পাওয়ার পর থেকেই সপরিবারের আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই শিক্ষিকা।
এরই মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা হত্যা মামলায় শনিবার রাজাপুরের সাতুরিয়া এলাকা থেকে ফারুক হোসেন ও বাদশা মিয়া নামে দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা এজাহারভুক্ত আসামি না হলেও তাদের বিরুদ্ধে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার না হলে আন্দোলনে নামবে বলে জানিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।
প্রসঙ্গত, বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে গত সোমবার (১৪ নভেম্বর) নিহত মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক আব্দুস সালাম রাজাপুরের আমতলা এলাকায় শিক্ষিকা মুক্তার গ্রামের বাড়িতে যান। এসময় জমিজমা নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে স্থানীয় সাতুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও ইউনিয়ন যুবলীগ সদস্য বাচ্চু হাওলাদার ও ৬ নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি শাহ আলমের নেতৃত্বে কয়েকজন ওই মুক্তিযোদ্ধাকে পিটিয়ে আহত করে। ১৫ নভেম্বর নিজ বাড়িতে ওই মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় নিহতের ছেলে শামসুল আলম মুরাদ বাদী হয়ে যুবলীগের সদস্য বাচ্চু হাওলাদার, সভাপতি শাহ আলমসহ ১০-১২ জনকে আসামি করে রাজাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। -বাংলা ট্রিবিউন।
২০ নভেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস