বৃহস্পতিবার, ০৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:৪৪:৩০

রৌমারীতে অলৌকিক স্কুল!

রৌমারীতে অলৌকিক স্কুল!

সাখাওয়াত হোসেন সাখা : একদিন আগেও সেখানে ঘর-দরজা ছিল না। ছিল না কোন স্কুল। পরদিনই অলৌকিকভাবে জন্ম নিল শিমলাকান্দি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

জানা গেছে, শিক্ষা অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারীর প্রত্যক্ষ মদদে এ অসম্ভব কাজটি সম্ভব হয়েছে। আশ্চর্য হলেও সত্য এ ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বড়াইবাড়ী গ্রামে।

জানা গেছে, উপজেলায় বাস্তবে শিমলাকান্দি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে কোনো বিদ্যালয় না থাকলেও ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠা দেখিয়ে কাগজপত্র চূড়ান্ত করেছে উপজেলা শিক্ষা অফিস। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেখানো হয়েছে ওই প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেকের ছোট ভাই আব্দুস সবুরকে।

এছাড়াও সহকারি শিক্ষক হিসেবে নিজ স্ত্রী মালেকা খাতুন, চাচাতো বোন লাকী খাতুন, মর্জিনা খাতুন, নিকটাত্বীয় শেফালী খাতুনকে নেয়া হয়েছে। ২০১৫ সালের ১৮ নভেম্বর রৌমারী শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম কাগুজে ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন। ওই কর্মকর্তা বর্তমানে উপজেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী শিক্ষাকর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বড়াইবাড়ী এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান আলী, রফিকুল ইসলাম, আমজাদ হোসেনসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, ভূয়া ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সবুর দীর্ঘ ১৫/২০ বছর ধরে চট্রগ্রামে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করছেন। এছাড়াও এলাকায় শিমলাকান্দি নামে কোন গ্রাম বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম কখনো শুনিনি। হঠাৎ রবিবার (২৩ অক্টোবর) দেখলাম, এলাকায় ওই স্কুলের জন্য ঘর তোলা হচ্ছে। মূলত সরকার ২০১৩ সালে সকল বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের ঘোষণা দেয়ার পর হতে শিক্ষা অফিসের অসাধু ব্যক্তিদের প্রত্যক্ষ মদদে গড়ে তোলা হয় ওইসব অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান। আর বিনিময়ে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা।

চুলিয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মোছা. স্বপ্না ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষার্থীরা ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত এই স্কুলে পড়াশুনা করলেও সমাপনির সনদ দেয়া হয় অস্তিত্বহীন শিমলাকান্দি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে। ৩-৪ বছর ধরে অবৈধ ও অনৈতিক এ কাজটি করছেন প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেক।

সম্প্রতি চুলিয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান, আরজিনা খাতুন, সুচরিতা খাতুনসহ ৬ শিক্ষার্থীকে হঠাৎ প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেক অবৈধভাবে বিদ্যালয় থেকে বের করে দিলে সকল অপকর্মের গোমর ফাঁস হয়। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পৃথক তিনটি লিখিত অভিযোগ দেন। এলাকাবাসী এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে বিচার দাবি করেন।

চুলিয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেক ৬ শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয় হতে বের করে দেওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, ওই শিক্ষার্থীরা ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত আমার প্রতিষ্ঠানে পড়লেও এখন তারা আমার প্রতিষ্ঠানে পড়ে না। তাই তাদের বের করে দেয়া হয়েছে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন জানান, আমার অনুপস্থিতে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম এ কাজটি করেছেন। আমার সময়ে এমন ঘটনা ঘটেনি।

উপজেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, রৌমারী উপজেলায় তৃতীয় ধাপে আবেদনকৃত এমন অন্তত ১৪টি স্কুল রয়েছে। শিমলাকান্দি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও ওই ধাপের। যারা মিনিষ্ট্রি থেকে জমি দিয়ে অনুমতি নিয়ে এসেছেন তাদের পক্ষে আমরা প্রতিবেদন দিচ্ছি। তবে এগুলোর ভবিষ্যৎ কী আমরা তা জানি না।

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন তালুকদার অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। -বিডিপ্রতিদিন।
০৩ নভেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে