এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব গ্রামের দিনমজুর ইনছান আলী। এখন তার বয়স ৮২ বছর। দীর্ঘ এ জীবনের প্রায় ৫০ বছর ধরে রোজা রেখেছেন। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া ইনছান আলী স্বপ্ন ছিল হজ করার।
নিজের হজের খরচ বহনে সাধ্য না থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরীর সহযোগিতায় ১০ জুন হজ পালনের উদ্দেশে রওনা দেবেন তিনি।
ইনছান আলী কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব গ্রামের মৃত নছর উদ্দিন মুন্সির ছেলে। তার সম্পদ বলতে ১৪ শতক জমি ও বসতভিটা ছাড়া কিছু নেই। তার ৪ ছেলে ও ৩ মেয়ে। ছেলেরাও দিনমজুর, যা দেয় তা দিয়ে চলে ইনছান আলীর সংসার। তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইনছান আলী নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের পাশাপাশি একটানা রোজা রাখা শুরু করেন। এভাবেই কেটে গেছে তার ৫০ বছর। বছরে যে পাঁচদিন রোজা রাখা নিষিদ্ধ সে দিনগুলো বাদে সারা বছরই পালন করেছেন রোজা।
৫০ বছর রোজা পালন ও হজে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ইনছান আলী বলেন, আমার জন্ম দরিদ্র পরিবারে। অভাব অনটনের মাঝেও আমি কখনো রোজা ছেড়ে দেইনি। রোজা রাখতে গিয়ে প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হতো। বাড়ির লোকজন কিছুটা অসুবিধা বোধ করত। পরে অবশ্য আল্লাহর রহমতে সব ঠিক হয়ে যায়। আমার ৬ ছেলের মধ্যে ২ ছেলে মারা গেছে। বাকি ৪ ছেলে সবাই বিয়ে করে আলাদা সংসার করে। তিন মেয়ের সবাইকে বিয়ে দিয়েছি। তবে অভাব দূর হয়নি। ছেলেরা দিনমজুরি করে যা আয় রোজগার করে তা থেকে আমাকে কিছু দেয়। তা দিয়ে কোনোরকমে দিন চলে যায়।
তিনি আরও বলেন, অভাবের সংসারে রোজা রাখাও অনেক সময় কষ্টের। কতদিন যে শুধু পানি খেয়ে রোজা রেখেছি। সেহরিতে খাবার না থাকায় মুড়ি, চিড়া কখনো কচু গাছ সেদ্ধ করে খেয়ে রোজা রেখেছি। যত কষ্টই হয়েছে এরপরও রোজা রাখা ছাড়িনি। ইফতারে কখনো চকলেট কখনো শুধু পানি কখনো আবার গাছের পাতা চিবিয়ে ইফতার করতাম। আল্লাহর কাছে চোখের পানি ছেড়ে বলতাম ‘আমাকে যতদিন হায়াত দিয়েছেন আমি যেন বাকি সময় রোজা রাখতে পারি।’
ইনছান আলী বলেন, ইফতার করে নামাজ আদায় করে আল্লাহকে বলতাম তিনি যেন আমাকে হজ করার তৌফিক দেন। আমার নিজের তো হজের খরচ জোগানোর ক্ষমতা নাই। ছেলেরা যে আমাকে হজে পাঠাবে তাদেরও সাধ্য নাই। তবু হতাশ না হয়ে আল্লাহর কাছেই চাইতাম। আল্লাহ তায়ালা আমার হজে যাওয়ার ইচ্ছাকে কবুল করেছেন। তার অসীম কুদরতে আমার হজে যাওয়ার উছিলা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরীকে পাঠিয়েছেন। স্যারের সহযোগিতায় আগামী মাসের ১০ তারিখ পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে রওয়া দেব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ বাহালুল হক স্যারকে এর উত্তম প্রতিদান দিন।
ইনছান আলীর প্রতিবেশী নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি ইনছান আলী চাচা প্রতিদিনই রোজা রাখেন। তিনি অত্যন্ত ধার্মিক মানুষ। এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা করেন না। চাচা দেখা হলেই হজে যাওয়ার কথা বলতেন। আল্লাহ ওনার নিয়ত কবুল করেছেন।
স্কুল শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, অভাব অনটনের সংসারে থেকেও ইনছান আলী কখনও ধর্মবিমুখ হননি। টানা প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে রোজা পালন করে আসছেন। তার হজে যাওয়ার জন্য যিনি ব্যবস্থা করেছেন আমরা এলাকাবাসী তার কাছে কৃতজ্ঞ।