মেহেরপুর: একদিকে ঘরে খাবার নেই অন্যদিকে পাননি ত্রাণ সহায়তা। এ অবস্থায় করোনার ঝুঁকি জেনেও রাস্তায় ভ্যান নিয়ে বের হন ইসলাম শেখ। পরিবারের সদস্যদের খাবার জোগাতে নিরুপায় হয়ে রাস্তায় নামেন তিনি। সামাজিক দূরত্ব না মেনে ইসলাম শেখ রাস্তায় ভ্যান নিয়ে বের হওয়ার বিষয়টি জেনে যায় উপজেলা প্রশাসন। এরপর তার বাড়িতে অ'ভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত।
করোনার সং'ক্রমণ এড়াতে সামাজিক দূরত্ব মানছেন না ইসলাম শেখ এমন অ'ভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে শাস্তি দিতে অ'ভিযানে যান মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উসমান গণি। কিন্তু তার বাড়িতে গিয়ে অবাক হন তিনি। সেই সঙ্গে ইউএনও বলেন, ‘সাজা দেব, নাকি সাজা নেব।’
ভ্যানচালক ইসলাম শেখের পরিবার এবং বাড়িঘরের পরিবেশ দেখে শাস্তি না দিয়ে ফিরে আসেন ইউএনও উসমান গণি। ইসলাম শেখের পরিবারের জীবনযাপন নিয়ে আবেগতাড়িত হন তিনি।
এরপর নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন তিনি। সেখানে লিখেছেন, ‘সাজা দেব, নাকি সাজা নেব। গেলাম সাজা দিতে, ফিরে এলাম অবাক হয়ে। মানুষ কত অসহায়।’
ইউএনও উসমান গণির ফেসবুক পোস্টে বদলে যায় ভ্যানচালক ইসলাম শেখের জীবন। ‘জমি আছে ঘর নেই’ প্রকল্পের আওতায় ইসলাম শেখকে একটি ঘর করে দেয়ার কথা বলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। একই সঙ্গে তার পরিবারকে বিভিন্ন সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
এর আগে শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের ভ্যানচালক ইসলাম শেখের বাড়িতে অ'ভিযানে যান ইউএনও উসমান গণি। এ সময় ইসলাম শেখের ঘরবাড়ি ও পরিবারের সার্বিক পরিস্থিতি দেখে ইউএনও বলেন- সাজা দেয়া তো দূরের কথা উল্টো এই পরিবারের পাশে দাঁড়ানো উচিত সবার। সেই সঙ্গে তাদের সহযোগিতা করা অতি জরুরি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইসলাম শেখের স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়েসহ পাঁচ সদস্যের সংসার। ছোট কুঁড়েঘরে একটি মাত্র খাট। এই ঘরের মধ্যেই রান্নাবান্না, খাওয়াদাওয়া ও পাঁচজনের বসবাস। ঘরের চাটাই ভাঙা। বেড়ার ফাঁকা দিয়ে শিয়াল, কুকুর এমনকি মানুষও খুব সহজে ঢুকতে পারে। এই ঘরেই রয়েছে বিয়ের উপযুক্ত দুই মেয়ে। পাঁচ সদস্যের অমানবিক জীবনযাপন দেখে আবেগাপ্লুত হন ইউএনও।
তিনি সিদ্ধান্ত নেন ইসলাম শেখের পরিবারের এমন অবস্থার পরিবর্তন খুব জরুরি। এই পরিবারকে সরকারি সহযোগিতা দেয়ার চিন্তা করেন তিনি। পরে ইসলাম শেখের পরিবারের ছবিসহ ফেসবুকে একটা পোস্ট দেন ইউএনও।
তার ফেসবুক পোস্ট চোখে পড়ে মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের। এরপরই ইসলাম শেখের পরিবারকে ‘জমি আছে ঘর নেই’ প্রকল্পের আওতায় ঘর করে দেয়ার নির্দেশ দেন প্রতিমন্ত্রী। একই সঙ্গে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প থেকে দরিদ্র পরিবারটিকে সহযোগিতার জন্য ইউএনওকে নির্দেশ দেন তিনি।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, প্রতিযোগিতার সঙ্গে ভালো কাজ করতে হবে আমাদের। মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চমৎকার একটি কাজ করেছেন। তিনি ওই দরিদ্র পরিবারের বিষয়টি আমাদের জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে ‘জমি আছে ঘর নেই’ প্রকল্পের আওতায় ওই পরিবারকে ঘর করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প থেকে পরিবারটিকে সহযোগিতার জন্য ইউএনওকে বলা হয়েছে।
মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উসমান গণি বলেন, ভ্যানচালক ইসলাম শেখের পরিবার আসলেই অনেক দরিদ্র। বাড়িতে না গেলে জানতে পারতাম না তারা কত অসহায়। সরকারি প্রকল্পের আওতায় ইসলাম শেখকে একটি ঘর করে দেয়া হবে। সেই সঙ্গে তাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে।