মৌলভীবাজার : ঢাকার নাখালপাড়ায় বিয়ে করতে যাওয়ার পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মুন্সিবাজার ইউনিয়নের রুপসপুর গ্রামের ৮ জন।
তাদের জন্য সারি সারি করে খোঁড়া হয় আটটি কবর। এ গ্রামের মানুষ একসঙ্গে এত কবর এর আগে কখনো দেখেননি। এমন ঘটবে কেউ কখনো ভাবতেও পারেননি।
গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টায় আট মরদেহ রুপসপুর গ্রামে পৌঁছলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পুরো গ্রাম শোকে স্তব্ধ হয়ে যায়।
রাত সাড়ে ১০টায় গ্রামের বন্দেরবাজারে একসঙ্গে আট লাশ সামনে রেখে সহস্রাধিক মানুষের উপস্থিতিতে নামাজে জানাজা শেষে দক্ষিণ রুপসপুর দীঘিরপাড় কবরস্থানে সবাইকে সারিবদ্ধভাবে কবর দেয়া হয়।
জানাজায় রাতে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। পুরো গ্রামই যেন ছিল জানাজার ময়দান। শুক্রবার বিকেলেই রুপসপুর বন্দেরবাজার সংলগ্ন দীঘিরপাড় কবরস্থানে গ্রামবাসী সারিবদ্ধভাবে ৮টি কবর খুঁড়ে রাখে।
সন্ধ্যায় আটটি মরদেহ আসার পর স্বজনদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। গ্রামের চারদিকের রাস্তা দিয়ে জনতার ঢল নামে।
তারা কেউ কান্না আটকে রাখতে পারেননি। রাত সাড়ে ১০টায় নামাজে জানাজায় শরিক হন কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র, বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যানসহ উপজেলার রাজনৈতিক, সামাজিক ও বিভিন্ন সংগঠনের লোক।
মাওলানা আব্দুল মালিক জানাজা পড়ান। এ সময় নিহতদের আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার লোক জানাজায় শরিক হন।
দীঘিরপাড় বাজারে স্থান সংকুলান না হওয়ায় পুরো গ্রামের যে যেখানে পেরেছেন দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেছেন। কেউ কেউ ঘরের ভেতরে থেকেও জানাজায় অংশ নেন।
শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় ইউএনও মোহাম্মদ মাহমুদুল হক রুপসপুর গ্রামে যান। পরে সাবেক চিফ হুইপ ও স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ গ্রামে গিয়ে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে সমবেদনা জানান।
এ সময় সংসদ সদস্য তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের ৫০ হাজার টাকা এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইউএনও ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন।
মাওলানা আবু সুফিয়ান বিয়ের জন্য পাত্রী নির্বাচন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের মাওলানা আবু হানিফার মেয়ে মাহমুদা ইয়াসমীনকে।
তারা ঢাকার নাখালপাড়ায় থাকেন। গত শুক্রবার ছিল তাদের বিয়ের জন্য নির্ধারিত দিন। জীবনসাথীকে বরণ করতে ভোরবেলায় একটি মাইক্রোবাসে ১১ যাত্রীসহ রওনা দেন ঢাকার উদ্দেশ্যে।
বরযাত্রীদের মধ্যে ছিলেন আবু সুফিয়ানের বাবা আদিউর রহমান সরফর, ছোট ভাই কামরান আহমদ, চাচা মতিউর রহমান মুর্শিদ, চাচাতো ভাই আলী হোসেন, মামা দুরূদ মিয়া, এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তি হাজী আব্দুল হান্নান, আত্মীয় সাইদুর রহমান সোহাগ, মুকিত চৌধুরী মুক্তার ও জাকির হোসেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের শশই এলাকায় মাইক্রোবাস পৌঁছলে সড়ক দুর্ঘটনায় তারা সবাই নিহত হন। আনন্দের বিয়েবাড়ি রূপ নেয় শোকপুরীতে।
১৭ সেপ্টেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম